নগরীর সিএনজি টেক্সিকে নিরাপদ করার জন্য নগর পুলিশ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। গতকাল সোমবার চালু করা হয়েছে ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ শীর্ষক একটি কর্মসূচি। নারীসহ সব ধরনের যাত্রীর জন্য টেক্সি দিনে-রাতে সব সময়ের জন্য নিরাপদ রাখতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। নগর পুলিশ কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর গতকাল সিএমপি সদর দপ্তরে এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, এই উদ্যোগের আওতায় নগরীতে চলাচলরত বৈধ কাগজ সম্বলিত সকল সিএনজিচালিত টেক্সির মালিক ও চালকদের নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করার মাধ্যমে ভেরিফায়েড করা হবে। মালিক ও চালকদের সকল তথ্য পুলিশ সার্ভারে জমা রেখে প্রত্যেককে একটি আলাদা ‘কিউআর কোড’ এবং নিউম্যারিক আইডি কার্ড প্রদান করা হবে। পরবর্তীতে যাত্রীরা এই আইডি অথবা কিউআর কোডটি স্ক্যান করে চালক ও মালিক সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পারবেন।
প্রতিটি গাড়িতে সিএমপির দেয়া কিউআর কোড সম্বলিত কার্ড ঝুলানো থাকবে। যে কোনো যাত্রী গাড়িতে যাত্রার আগে যদি প্রিন্টেড কপিটি ঝুলানো দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন গাড়িটি সিএমপি কর্তৃক ভেরিফায়েড।
অ্যাডভান্স লেভেলের ভেরিফাই করার জন্য যাত্রীর স্মার্টফোনে ‘হ্যালো সিএমপি’ অ্যাপসটি ইন্সটল করতে হবে। প্রিন্টেড কপিতে থাকা কিউআর কোডটি ‘হ্যালো সিএমপি’ অ্যাপে স্ক্যান করার সাথে সাথে চালক অথবা মালিক যদি সিএমপি কর্তৃক ভেরিফায়েড হন তাহলে যাত্রী ওই চালক এবং গাড়ির মালিকের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য নিজের স্মার্টফোনে দেখতে পাবেন। যাদের স্মার্টফোন থাকবে না তারা চাইলেই তাদের ফিচার ফোন থেকে প্রিন্টেড কপিতে থাকা নিউম্যারিক কোডটি সিএমপির নির্ধারিত নম্বরে প্রেরণ করলে ফিরতি বার্তায় চালক ও মালিক ভেরিফায়েড কিনা তা জানানো হবে।
সিএমপির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে সিএনজিচালিত বৈধ টেক্সিগুলোকে নিয়ে একটি ডাটাবেজ করা হচ্ছে, যেখানে তাদের সব তথ্যই থাকবে। আবার যাত্রীরাও যে কোনো সময় যে কোনো বৈধ গাড়ির চালক ও মালিকের যাবতীয় তথ্য পাবেন। এক্ষেত্রে কোনো সিএনজি চালক কোনো ধরনের অপরাধ করলে কিংবা কোনো যাত্রী কোনো টেঙিতে জিনিসপত্র রেখে নেমে গেলে তাদের শনাক্ত করা সহজ হবে। এক্ষেত্রে সিএনজি মালিক তার গাড়ি যে চালককে দিচ্ছেন তিনি সিএমপির ভেরিফায়েড কিনা তা ভেরিফিকেশন কার্ড দেখে নিশ্চিত হতে পারবেন।
গাড়ির মালিকের ক্ষেত্রে মালিকের এনআইডি, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ফিটনেস সার্টিফিকেট, ট্যাঙ টোকেন, রুট পারমিট প্রদান করতে হবে। চালকের ক্ষেত্রে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও এনআইডি প্রদান করতে হবে।
প্রাথমিকভাবে নগরীর আটটি স্থানে স্থাপিত বুথের মাধ্যমে টেঙির মালিক ও চালকের নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। বুথগুলো হচ্ছে টাইগারপাস ট্রাফিক পুলিশ বঙ, নিউ মার্কেট ট্রাফিক পুলিশ বঙ, বহদ্দারহাট ট্রাফিক পুলিশ বঙ, জিইসি মোড় ট্রাফিক পুলিশ বঙ, বাদমতলী ট্রাফিক পুলিশ বঙ, অলংকার ট্রাফিক পুলিশ বঙ, মইজ্জারটেক ট্রাফিক পুলিশ বঙ ও সিমেন্ট ক্রসিং ট্রাফিক পুলিশ বঙ।
এসব বুথে মালিক ও চালকদের জন্য আলাদা নিবন্ধন ফরমের মাধ্যমে নিবন্ধন সম্পন্ন করা হবে। নিবন্ধনের আগে তাদের বৈধ কাগজপত্র যাছাই করা হবে। নিবন্ধনের তথ্য সিএমপি সার্ভারে জমা হওয়ার পর সার্ভার থেকে অটোমেটিক মালিক ও চালকের জন্য আলাদা আলাদা ইউনিক কিউআর কোড ও নিউম্যারিক আইডি প্রস্তুত হবে। উক্ত আইডি ও কিউআর কোড সম্বলিত একটি প্রিন্টেড কপি প্রতিটি গাড়ির মালিক ও চালককে প্রদান করা হবে। আইডি ও কিউআর কোড সম্বলিত প্রিন্ট কপিটি সবসময় গাড়িতে এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে যাতে যাত্রীরা সহজে দেখতে পায়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মোহাম্মদ শামসুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) সানা শামীনুর রহমান, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মোহাম্মদ আমির জাফরসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ও পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।