‘সাম্প্রদায়িকতা ও শ্রেণি–বৈষম্যের বিরুদ্ধে জেগে ওঠো বাংলাদেশ’ স্লোগানে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শুরু হয়েছে চতুর্থ জাতীয় গণসংগীত উৎসব। গতকাল শুক্রবার সকালে জেলা শিল্পকলা একাডেমির অনিরুদ্ধ মুক্তমঞ্চে এক ঝাঁক শিল্পীর কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও ‘আমার এ দেশ সব মানুষের’ গান দিয়ে শুরু হয় উৎসব।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন। তিনি বলেন, গণসংগীত বিশ্বের শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম। গণসংগীত মানুষকে জাগায়। অগ্নিবীণার গান মানুষকে জাগিয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিশ্বের কয়েকটি দেশে যখন চক্রান্ত হচ্ছিল তখন বাংলাদেশ কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল।
উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি, লেখক ও গবেষক গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতাযুদ্ধে শিল্পীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাম্প্রদায়িকতা, শোষণ, বঞ্চনা, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে গণসংগীত। ঢাকার বাইরে প্রথম চট্টগ্রামে জাতীয় গণসংগীত উৎসব আয়োজন করেছি। আশা করি অন্য বিভাগগুলোতেও এ উৎসব করতে পারব। এতে বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী আহকাম উল্লাহ, সংস্কৃতিজন ও উৎসব উদযাপন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও উৎসবের প্রধান সমন্বয়কারী মানজার চৌধুরী সুইট, উৎসবের যুগ্ম সমন্বয়কারী শিল্পী শ্রেয়সী রায় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার মোসলেম উদ্দিন শিকদার। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
উৎসবে গতকাল সকালের অধিবেশনে লালন সাঁইজীর গান পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চট্টগ্রাম, কাজী নজরুল ইসলামের সাম্যের গান পরিবেশন করে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা চট্টগ্রাম। এরপর একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকার শিল্পী আবিদা রহমান সেতু। বিকালে দলীয় সঙ্গীতে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গান পরিবেশন করে খুলনার বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, আব্দুল লতিফের গান পরিবেশন করে দিনাজপুরের দল ভৈরবী, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন ও অতুলপ্রসাদের দেশের গান পরিবেশন করে রাজশাহীর দল জয়বাংলা, বর্ণবাদ বিরোধী গান পরিবেশন করে বরগুনার দল মাটিয়াল, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গান পরিবেশন করে নোয়াখালীর দল বিশ্বভূবন, ফকির আলমগীরের গান পরিবেশন করে ঢাকার দল ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, ভূপেন হাজারিকার গান পরিবেশন করে ঢাকার দল উঠোন, শ্রেণি–সংগ্রাম ও সমসাময়িক বিষয়ের গান পরিবেশন করে চট্টগ্রামের দল সৃজামি সাংস্কৃতিক অঙ্গন এবং অজিত রায়ের গান পরিবেশন করে চট্টগ্রামের অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গন। বিকাল সাড়ে ৪টায় একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন রংপুরের শিল্পী রূপু মজুমদার, ঠাকুরগাঁওয়ের জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মন, ঢাকার ফকির সিরাজ, কাজী মিজানুর রহমান, আরি রহমান ও প্রলয় সাহা এবং চট্টগ্রামের ফারহানা রহমান কান্তা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে চট্টগ্রামের ওরিয়েন্টাল স্কুল অব ডান্স।
আজ শনিবার এপ্রিল সকাল ১০টায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে সেমিনারে মূল বিষয় ‘শিল্পীর নাগরিক দায়, জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক বক্তব্য উপস্থাপন করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ। আলোচনায় অংশ নেবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও গবেষক শামসুল হক। সূচনা বক্তব্য রাখবেন গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। সভাপতিত্ব করবেন সংগঠনের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান। বিকেল সাড়ে ৪টায় দলীয় সঙ্গীত পর্বে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান পরিবেশন করবে যশোরের দল পুনশ্চ, শাহ আব্দুল করিমের গান পরিবেশন করবে সিলেটের অন্বেষা শিল্পীগোষ্ঠী, কৃষক আন্দোলনের গান পরিবেশন করবে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা, শেখ লুৎফর রহমানের গান পরিবেশন করবে ঢাকার সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, সলিল চৌধুরীর গান পরিবেশন করবে ঢাকার বহ্নিশিখা, চাকমা ভাষার গণসঙ্গীত পরিবেশন করবে রাঙ্গামাটির গিরিসুর শিল্পীগোষ্ঠী, ভাষা আন্দোলনের গান পরিবেশন করবে চট্টগ্রামের ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ, আখতার হুসেন ও সেলিম রেজার গান পরিবেশন করবে খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর শিল্পীরা।
একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সাতক্ষীরার শিল্পী রোজ বাবু, পাবনার প্রলয় চাকী, সিলেটের গৌতম চক্রবর্তী, ঢাকার ফকির শাহাবুদ্দীন, সুরাইয়া পারভীন ও নবনীতা জাঈদ চৌধুরী এবং চট্টগ্রামের সুজিত চক্রবর্তী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে ঘুঙুর নৃত্যকলা কেন্দ্র।