আমাদের স্ট্যান্ড ভেরি ক্লিয়ার, গণভোট আগে হতে হবে : জামায়াত আমির

| শনিবার , ১ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, গণভোট নিয়ে আমাদের স্ট্যান্ড ভেরি ক্লিয়ার। গণভোট আগে হতে হবে, নইলে এটা মূল্যহীন। এটার কোনো দুই পয়সার মূল্য নাই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পথে যুক্তরাজ্যে একদিনের জন্য যাত্রাবিরতি করেন শফিকুর রহমান। গতকাল শুক্রবার লন্ডনের একটি হোটেলে তিনি কয়েকজন সাংবাদিকের মুখোমুখি হন। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।

গুমের মামলায় যে সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে তাদের বিচার অব্যাহত থাকবে কি না, সেই প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এটা চাই না কারো উপর অবিচার হোক, কিন্তু অপরাধ হলে তার ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার ভিকটিমের অবশ্যই আছে। আমরা এই দৃষ্টিকোণ থেকে সকল অবিচারের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারকে আমরা সমর্থন করি। আর আমাদের পাঁচটা প্রায়োরিটি ও অঙ্গীকারের মধ্যে একটা হচ্ছে সমাজে সর্বস্তরে ন্যায়বিচার কায়েম করা। সুতরাং ন্যায়বিচার কায়েম করলে আগামীতে যারা অবশ্যই বিচার প্রার্থী হবেন, তারা তাদের ন্যায়বিচার পাবেন, তারা বঞ্চিত হবেন না ইনশাআল্লাহ।

সরকারি অফিস থেকে বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের ছবি অপসারণ নিয়ে এক জামায়াত নেতার যে ফটোকার্ড সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে, সেটি মিথ্যা বলে আরেক প্রশ্নের জবাবে জানান দলের আমির। সংবিধানে বা জুলাই সনদে জিয়াউর রহমানের নাম বা ছবি থাকা উচিত ছিল কি না, এমন প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, আপনি ভালো করে জুলাইজুলাই সনদ পড়েন। তাকেসব ব্যাপারে সবাইকে বলা যায় ভাই? সবাইকে তো কিছু কিছু অংশ দিতে হবে যার যেটা পাওনা। যেমন ধরেন জেনারেল ওসমানী, উনি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজকে তাকে কেউ স্মরণ করে? স্বীকার করে? তাকে স্বীকার করা উচিত না? আসম আব্দুর রব প্রথম পতাকা তুলে ধরেছে, তাকে কেউ স্মরণ করে? স্বীকার করে? তার একটা রিকগনিশন পাওয়া উচিত না? আমাদের অনেক কিছুই অনেক কিছুকে রিকগনাইজ করে না। আল্লাহ যদি আমাদেরকে সুযোগ দেন, যার যেখানে যে অবদান আছে, আমরা কোনো কিছুর উপর অবিচার করবো না ইনশাআল্লাহ।

একজন সাংবাদিক জামায়াতে ইসলামীর ইশতেহারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে দলটির আমির বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ইশতেহারের কিছুই তারা প্রকাশ করবেন না। তবে কোনো মিথ্যা আশ্বাস তারা জাতিকে দেবেন না।

দেশে সকল ক্ষেত্র দুর্নীতিতে ‘সয়লাব’ হয়ে গেছে মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর বলেছেন, দুর্নীতিকে গলা টিপে ধরা না গেলে এ সমাজ বাঁচবে না। তার ভাষায়, এই সমাজ বেঁচে থাকলে একটা ক্ষণভঙ্গুর সমাজ হিসেবে বেঁচে থাকবে। এরকম সমাজ তো কোনো দেশের নাগরিক কামনা করে না।

বিগত বছরগুলোতে দেশে দুর্নীতি যেভাবে সর্বক্ষেত্রে বিস্তৃতি পেয়েছে, সে কথা বলতে গিয়ে জামায়াত আমির পাকিস্তান আমলের সঙ্গে এখনকার পরিস্থিতির তুলনা করেন। তিনি বলেন, বিষয়টা এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, পাকিস্তান আমলে আমরা নিভুনিভু জ্ঞান বুদ্ধি ছিল। তখন কোনো জায়গায় কোনো ঘুষখোর অফিসার আসলে সারা জেলা জেনে যেত যে এই অফিসারটা ঘুষখোর। আর এখন যদি কোনো সৎ অফিসার আসে, সবাই বলে যে এই একটা মানুষ সৎ। দেখেন অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। একেবারে পুরা রিভার্স হয়ে গেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। যেই সমাজে দুর্নীতি অনুসঙ্গ হয়ে যায়, নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে যায়, এই সমাজ তারা মাজা সোজা করে দাঁড়াতে পারে না, মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারে না।

জামায়াত আমির বলেন, আমাদের শিক্ষাটাও বিধ্বস্ত। আমাদের সেখানে দুর্নীতির ছয়লাব। কোনো জায়গায় নাই সুবিচার। যেখানেই যাবে মানুষ পায় অবিচার। এই অবস্থায় এই দেশ এবং জাতিকে কেউ আর দেখতে চায় না। আমরাও দেখতে চাই না। আপনারাও নিশ্চয়ই দেখতে চান না।

জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে যে বড় পরিবর্তন এসেছে, সে কথা তুলে ধরে শফিকুর রহমান বলেন, এই যে পরিবর্তনটা হল, কীসের প্রত্যাশায়? একটাই প্রত্যাশা যে সমাজে কোনো অনিয়ম এবং বৈষম্য থাকবে না। আর সকল অনিয়ম এবং বৈষম্যের মূলে হচ্ছে দুর্নীতি। সমাজের সব জায়গায় দুর্নীতিবাজরা বসে থাকার কারণে সমাজে মানুষের যে ন্যায্য অধিকার, এটা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। প্রত্যেকটি মানুষ নিগৃহীত।

প্রবাসীদের আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ভোটের অধিকার, আমি বলি যে এটা ভেটো পাওয়ার। এটা যদি আপনার হাতে থাকে, অনেক অধিকার আপনার কাছে চলে আসবে। আর এটা যদি আপনার হাতছাড়া থাকে, তাহলে লোক ওয়ান ওয়ে শুধু আপনার কাছ থেকে নিতে চাইবে, আপনাকে আপনার পাওনাটা দিতে চাইবে না। প্রবাসীদের ভোটার করার জন্য নিবন্ধনের সময় আরো ১৫ দিন বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৪২০ জনের কমিটিতে নারী মাত্র ১১ জন
পরবর্তী নিবন্ধসৈকত দখল করে ব্যবসা করলে আইনি ব্যবস্থা