সবকিছুর সংস্কার হচ্ছে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম এবং পাঠ্যবইগুলোতেও সংস্কার প্রয়োজন। অতীতের পাঠ্যক্রম এবং বর্তমান পাঠ্যক্রমের একটা যোগসূত্র থাকা উচিত। এতে ব্যবহারিক পদ্ধতি (হাতে কলমে করে শেখা) যেমন থাকবে তেমনি মেধার প্রয়োগ পদ্ধতিও থাকবে বাংলা ইংরেজী হতে শুরু করে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসাশিক্ষা সকল বিভাগেই। বাংলা, ইংরেজী হলো সাহিত্যের সেই শাখা যেখানে বিভিন্ন নামকরা সাহিত্যিকদের রচিত বিষয়গুলো যেমন জানবে, তেমনই জানবে তাঁদের বিখ্যাত সৃষ্টিগুলি সম্পর্কেও। কবিতা, প্রবন্ধ বিষয়গুলো তাদের পাঠ্যবইয়ে থাকবে, আর সেই বিখ্যাত ব্যক্তিদের কাজগুলো শিক্ষার্থীরা খুঁজে প্রেজেন্টেশন করবে ক্লাসে। সাথে থাকবে তাদের নিজেদের নতুন কিছু লিখতে পারার অভিজ্ঞতাও।
সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে তারা বাংলার প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জানবে। কী করে, কতটা পথ পেরিয়ে কত শত বীর শহীদদের আত্মত্যাগের সুফল এ বাংলাদেশ তার সম্পর্কে তারা জানবে। তাদের জানা উচিত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, নওয়াব আব্দুল লতিফ, বেগম রোকেয়া, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, বঙ্গবন্ধুসহ সকল মনীষীদের সম্পর্কে। ইতিহাস জানবে বিভিন্ন সময়ে হওয়া যুদ্ধগুলো সম্পর্কে। আধুনিক জেনারেশন জানে না সিরাজ উদদৌলার পলাশীর যুদ্ধ, মীর কাশিমের বঙার যুদ্ধ সম্পর্কে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন থাকবে তেমনি থাকবে তিতুমীরের আন্দোলন, হাজী শরীয়তুল্লাহর আন্দোলনসহ অতীতের বিখ্যাত ঘটনাগুলো সম্পর্কে।
প্রতিটা বিষয়ের ওপরই ওদের সমান দক্ষতা থাকবে। যাতে অষ্টম শ্রেণি পাশ করা যেকোনো ছাত্র প্রয়োজনে পরিবারের হাল ধরতে পারে। একজন ছাত্র তখনই মানবিক, মূল্যবোধসম্পন্ন, বাস্তবসম্পন্ন মানুষ হবে যখন তার পাঠ্যক্রমে সবদিক থেকে সে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। এই যুগে প্রতিটি মানুষের ভেতর মানবিকতা, মূল্যবোধ, বাস্তববোধসম্পন্ন এবং সর্বোপরি একজন মেধাসম্পন্ন, দক্ষ, সুনাগরিক হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা জাগিয়ে তুলতে হবে। আর এর শিক্ষা পাঠ্যক্রমের কোনো বিকল্প নেই। পরিশেষে, আমরা চাই আমাদের সন্তানগুলো এক একজন সুনাগরিক হয়ে গড়ে উঠুক। প্রতিটি সন্তান যখন সুশিক্ষিত হবে (শুধুমাত্র সার্টিফিকেটধারী নয়) তখন আপনাতেই পরিবার, সমাজ তথা সম্পূর্ণ বাংলাদেশই হবে সোনার দেশ।