সিআরবি হবে নান্দনিক সাংস্কৃতিক জোন, হাসপাতাল নয়
অধ্যাপক অঞ্জলি বড়ুয়া
প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার সাথে সাথে আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতিচর্চা মনন, চিন্তন ও মূল্যবোধ বিকাশে অপরিহার্য। চট্টগ্রামে সিআরবিতে এগুলো চর্চা করার একটা অপূর্ব স্থান। এখানে আরও সমৃদ্ধ একটি সাংস্কৃতিক বলয় তৈরি হোক।
বর্তমান সিআরবি দেখে খুব আশ্বস্ত হয়েছিলাম,এটা ধীরে ধীরে আরও বৃহদাকারে শিক্ষা সংস্কৃতি চর্চা করার পরিকল্পিত নান্দনিক সাংস্কৃতিক জোন হিসেবে গড়ে উঠবে, হঠাৎ করে হাসপাতাল নির্মাণের কথা শুনে খুবই মর্মাহত হয়েছি। কারণ চট্টগ্রামে যে ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলো ছিল তা একে একে বাণিজ্যিকিকরণ হয়ে গেছে, দখল হয়ে গেছে ভিন্ন খাতে। একমাত্র সিআরবি এলাকাই ছিল মানুষের একটু অবকাশ, একটু নিভৃতে বসে নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা। সেটাও যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে প্রাণস্পন্দন হারাবে চট্টগ্রাম শহর।একে অপরের সাথে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হৃদ্যতা গড়ে উঠুক, মূল্যবোধ বিকশিত হোক ও অপসংস্কৃতির চর্চা বন্ধ হোক, আমরা বিজ্ঞান ও সাহিত্য মনস্ক হয়ে অসমপ্রদায়িক চেতনায় নবপ্রজন্মকে গড়ে তুলি, সেটাই আমাদের চট্টগ্রাম এর ঐতিহ্য। সেটা আরও সমপ্রসারিত হবে সিআরবি রক্ষা পেলে। ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হোক, খুব ভালো উদ্যোগ, তবে অন্য জায়গায়, অবশ্যই চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে খুঁজলে অনেক জায়গা পাওয়া যাবে এরকম হাসপাতাল করার জন্য, তবে সিআরবি এলাকার মত অনিন্দ্য সুন্দর একটা জায়গা আর প্রাকৃতিক পরিবেশকে ধ্বংস করে নয়। এখানে হাসপাতাল হলে আরও পরিবেশ দূষণ হবে।
চট্টগ্রামের অনেক হাসপাতাল আছে, সেগুলোর আধুনিকায়ন হোক। সিআরবি এলাকা অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে বেঁচে থাকুক, আরও সুন্দর হয়ে গড়ে উঠুক হাসি, আনন্দের বাতায়ন হিসাবে। যেমন ঢাকায় স্বাধীনতা চত্বর, শাহবাগ চত্বর, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, কেন্দ্রীয় শহীদমিনার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনাপার্ক সব মিলিয়ে একটা সাংস্কৃতিক জোন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে বা গড়ে উঠছে সেই ভাবে সিআরবি এলাকা আরও নান্দনিক সাংস্কৃতিক জোন হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয়া হোক।
সিআরবিতে নয়, হাসপাতাল হোক অন্য জায়গায়
সুব্রত দেব
আমরা জানি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন অত্যন্ত দয়ালু এবং প্রকৃতি প্রেমিক। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার স্বপক্ষে তিনি সবসময় তাঁর জোরালো বক্তব্য প্রদান করে থাকেন। তিনি আজীবন আমাদেরকে বৃক্ষরোপনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস তিনি সিআরবি এর মতো প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় আমাদের নৈতিক দাবীকে আন্তরিকভাবে সমর্থন করবেন। চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি এর প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে আমরা দেখেছি নতুন প্রজন্মের শিশু কিশোর কী অনাবিল আনন্দে তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিবেশন করে থাকে।আমরা কখনো হাসপাতাল স্থাপনের বিরোধিতা করি না। বরং দেশের স্বাস্থ্যখাতের উন্নতির জন্য আরো অনেক হাসপাতাল নির্মাণ অতীব জরুরি। কিন্তু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য আরো অনেক বিকল্প জায়গা পাওয়া যাবে। তবে সিআরবি বিলুপ্ত হলে এর কোন বিকল্প ব্যবস্থা পাওয়া সম্ভব নয়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস করে হাসপাতাল চাই না
নজরুল জাহান
শুধু যে মন ও নজর কাড়া সিআরবি’র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তা-ই নয়, এর সাথে অবিচ্ছেদ্য হয়ে আছে ইতিহাস ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদ সমাধিস্থলসহ বহু স্মৃতি। হাসপাতাল নির্মাণের যে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তার পেছনে যেন প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও ইতিহাস-ঐতিহ্য-মুক্তিযুদ্ধের সংরক্ষিত স্মৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ারই নামান্তর যা কু-উদ্দেশ্যে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের কাজ। না হয় এমন নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে পারে ?
আমার মনে হয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিআরবি’কে লক্ষ্য করেই ইতিহাসবিদরা চট্টগ্রামকে প্রাচ্যের রাণী অভিধায় অভিষিক্ত করেছিল। তার সাথে এখন যোগ হয়ে আছে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি স্মৃতিফলক, তথা স্পর্শকাতর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস! মানব সেবায় হাসপাতাল নির্মাণে কারুরই দ্বিমত নেই। প্রকৃতির সাথে একাত্মতা মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টির। প্রকৃতি বাঁচলে মানুষ বাঁঁচবে, মানুষের জন্যই যদি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হবে তবে তা চট্টগ্রামের “ফুসফুস” খ্যাত সিআরবিকে ধ্বংস করে কেন ? এই অপপরিকল্পনা বাদ দিতেই হবে।
আমাদের প্রাণ স্পন্দন
এম. কামরুল হাসান চৌধুরী
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক হুমকির মুখে বাংলাদেশ। এই প্রভাবের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনবরত নির্গত কার্বনডাই-অঙাইডের প্রভাবে প্রতি নিয়ত আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশে। যার ফলে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অবস্থার উত্তরণে দেশে সবুজ বনায়নের বিকল্প নেই। চট্টগ্রামের নির্মল পরিবেশের সবুজের ছায়াঘেরা সমারোহের নান্দনিক সৌন্দর্যে গড়ে ওঠা নগরবাসীর স্বস্তির নিশ্বাসের প্রাণ স্পন্দন খ্যাত সিআরবিকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে। এজন্য সচেতন নাগরিক হোক কিংবা সাধারণ জনগন হোক সর্বস্তরের নাগরিক সমাজকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে । বাণিজ্যিক নগরীর চট্টগ্রামে সর্বধুনিক প্রযুক্তিতিতে উন্নতমানের একটি হাসপাতাল গড়ে ওঠা নগরবাসী মনে প্রাণে কামনা করেন। কিন্তু তাই বলে সবুজ প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ ধ্বংস করে সিআরবিতে! সিআরবিতে হাসপাতাল গড়া তোলার আমাদের কাম্য নয়।
হাসপাতালের নামে প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হোক, এটা চাই না
বেগম চেমন আরা তৈয়ব
চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। এছাড়াও চট্টগ্রামের ১৫ টি উপজেলা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অন্য ১০ টি জেলা থেকে রোগীরা এসে থাকেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং বিআইটিআইডি হাসপাতাল ছাড়া আর কোন সরকারি সুবিধাসম্পন্ন বড় হাসপাতাল নেই। চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করে একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা। এর পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতালের দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন। চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক এবং তিনি চট্টগ্রামকে নিজের শহর মনে করেন। তাই আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য সিআরবি এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বিনষ্ট করে যেন কোন হাসপাতাল তৈরি না হয়, এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। চট্টগ্রামের সকল মানুষের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই; সি আর বি এর পরিবেশ সুরক্ষিত থাকুক।
সিআরবি হচ্ছে চট্টগ্রামের জন্য তৃষ্ণার্ত পথিকের এক গ্লাস জল
নিগার সুলতানা
সিআরবি হচ্ছে ধনী-গরিব সব ধরনের মানুষের মিলনকেন্দ্র। ধনী মানুষেরা যেমন সারাদিনের কর্ম ব্যস্ততার পর একটু খোলা আকাশের নীচে মুক্তভাবে শ্বাস নেওয়ার জন্য বৈকালিক ভ্রমণে বের হয়, তেমনি দিনমজুর, গার্মেন্টসের শ্রমিক তারাও ছুটির দিনে বা কাজের অবসরে পরিবার নিয়ে সিআরবির বুকে একঘেয়েমি জীবনে একটু বিনোদনের আশায় ছুটে আসে। এই ঘনবসতিপূর্ণ চট্টগ্রাম শহরে আমরা আমাদের সন্তানদেরকে একটি খেলার পরিবেশ বা খেলার মাঠ দিতে পারছিনা বলে ছুটির দিনে তাদেরকে একটু বিনোদন দেওয়ার আশায় এই সিআরবির বুকে ছুটে আসি। সিআরবি হচ্ছে চট্টগ্রামের ফুসফুস, চট্টগ্রামের কলিজার টুকরা, এককথায় চট্টগ্রামের প্রাণ। আমি চট্টগ্রাম বাসীর পক্ষ থেকে সিআরবি তে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। চট্টগ্রামে আরো এমন খোলা জায়গা আছে যেখানে খুব সুন্দর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। আমি সকল সরকারি, বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তাদের অনুরোধ করব কেউ যেন চট্টগ্রামের এই ফুসফুস নিয়ে টানাটানি না করে। এই ফুসফুস ছাড়া চট্টগ্রাম বিকলাঙ্গ হয়ে পরবে। তাই আমি চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে এবং আগামী প্রজন্ম আমাদের সন্তানদের পক্ষ থেকে এই প্রতিবাদ,এই মনোভাব প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বরাবরে পৌঁছানোর জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
সিআরবি আমাদের সম্পদ
সাজেদুল করিম ভুঁইয়া
সংকটময় জীবনে প্রিয় চট্টগ্রামের সিআরবি যেন প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার অন্যতম মাধ্যম। মানুষ এখানে বুকভরে শ্বাস নিতে পারে। শান্তি পায়। এখানে হাসপাতাল করার চিন্তা করা পরিবেশের বুকে পেরেক ঠুকে দেওয়ার মত অবস্থা। তাই সরকারের উচিত এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। অর্থাৎ সিআরবিতে হাসপাতাল করার অনুমোদন না দেওয়া। উন্নত চিকিৎসার জন্য নতুন হাসপাতাল প্রয়োজন। তবে তারচেয়ে বেশি প্রয়োজন বর্তমান হাসপাতালগুলোকে ঢেলে সাজানো। সেবার সুব্যবস্থা বৃদ্ধি করা। চট্টগ্রাম শহরের ফুসফুস সিআরবি ছাড়া হাসপাতাল করার মত চট্টগ্রাম শহরে কিংবা শহরের আশেপাশে পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। একটু সচেতন হলে হয়ে যায়। সিআরবি রক্ষা আমাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। রক্ষা করতে হবে। পরিবেশের আদর্শ অবস্থা হলো পঁচিশ শতাংশ বৃক্ষের উপস্থিতি। গ্রামে পর্যাপ্ততা থাকলেও শহর অঞ্চলে যার সিখিভাগও নেই বললে ভুল বলা হবে না। সেখানে গাছ কেটে ফেলার কোনো প্রশ্নই আসে না। সরকারি বেসরকারিভাবে উদ্যাগী হয়ে গাছ রোপণ করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য। তা না করে বৃক্ষ নিধনের পাঁয়তারা চলছে। নিজেদের ক্ষতি নিজেরা ডেকে আনার কোন মানে হয় না। সি আর বি আমাদের সম্পদ। সম্পদ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি
জেসমিন সুলতানা চৌধুরী
শিরীষতলায় প্রাণের মেলা
সকাল-বিকেল সন্ধ্যা বেলা
নেই কো কোন বাঁধাধরা ,
মুক্ত হাওয়া এইতো চাওয়া
নগরবাসীর বিরাট পাওয়া
নিও না কেড়ে পায়ে পরা।
আকুল হয়ে জানাই তোমায়
নাইবা ঠেলো মরণ কোমায়
সিআরবি মাঠ রক্ষা করো,
আছে যতো হাসপাতাল ওই
অকেজো সব নতুন গড়ো।
দাও না রুখে এই আস্ফালন
সুযোগ নিয়ে বসবে গেঁড়ে,
চট্টগ্রামের স্বর্গভূমি
প্রাণের প্রিয় চরণ চুমি
শ্বাস ফেলার এই জায়গাটুকু
দিও না মাতা নিতে কেড়ে ।
তোমার বার্তা অমৃত এক
হেলায় আছে জায়গা অনেক
সেসব দিতে জোরসে ধরো,
প্রতিবাদে লড়তে পারি
গঠনমূলক আলাপচারি
ছেড়ে যেতে বাধ্য করো।
সিআরবি আমাদের ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক হাসপাতাল
ম. সাইফুল আলম চৌধুরী
চট্টগ্রামের পাহাড় এবং পার্বত্য অঞ্চল হচ্ছে প্রকৃতির দান। এই প্রকৃতির দানকে আমরা নির্বোধের মতো, মূর্খের মতো ধ্বংস করে যাচ্ছি। আমরা নদী-খালের স্রোতধারাকে রুদ্ধ করে দিচ্ছি। আমাদের ফসলের জমি কমে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত কল-কারখানার কারণে পরিবেশ দূষিত হয়ে যাচ্ছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন-ডাই-অঙাইড বেড়ে যাচ্ছে। এই রকম একটা ভয়াবহ প্রাকৃতিক বির্পযয়ের আশংকার মধ্যে আছে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে সিআরবি-র কয়েকবর্গমাইল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এলাকা ছাড়া এই নগরীতে আর কোন প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের স্থান নেই।এই এলাকাটি চট্টগ্রামের মানুষের জন্য প্রাকৃতিক হাসপাতালের ভূমিকা পালন করছে। এখানে এসে মানুষ নির্মল বায়ু সেবন করে ফুসফুসকে সচল রাখে। অসুস্থ-মানুষকে সুস্থতার দিকে নিয়ে যায়। প্রকৃত অর্থে সিআরবি এলাকাটি চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’। এটি ধ্বংস হয়ে গেলে এই মহানগরীতে আগামী হাজার বছরেও এরকম একটি ঐতিহ্যবাহী হেরিটেজ জোন সৃষ্টি করা যাবে না। সিআরবি ধ্বংস হয়ে গেলে, চট্টগ্রাম মহানগরী একটি রোগাক্রান্ত নগরীতে পরিণত হবে। তাছাড়া এই সিআরবির সাথে জড়িয়ে আছে বাঙ্গালীর সংগ্রাম, বাঙ্গালীর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। তাই আমি দৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করি সিআরবিতে হাসপাতাল বা অন্য কোন স্থাপনা নিমার্ণ হওয়া মানে জনগণকে সাক্ষাৎ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া।
আমরা জানি বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর উত্তরসূরী একদল এ দেশীয় বেনিয়া ও তাদের সহযোগীরা এখানে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিআরবিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি বিশ্ব মানবতার জননী, এই ধরিত্রীর মাতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বেনিয়াদের সিআরবি ধ্বংসের অপতৎপরতা রুখে দেবেন। চট্টগ্রামকে বাসযোগ্য রাখবেন। চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আমরা এখন লড়াইয়ের ময়দানে আছি। আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাবো। আমরা হচ্ছি ৭১-এর বিজয়ী বীর। আমাদের নেতা হচ্ছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতিজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আশা করছি, অক্ষত সিআরবি তার ঐতিহ্য নিয়েই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে যাবে।
সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ প্রকৃতির সাথে অশোভন আচরণ
সরওয়ার আরমান
অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম বন্দর নগরীতে সিআরবি অন্যতম। বিগত কয়েক বছর ধরে পহেলা বৈশাখসহ জাতীয় উৎসবগুলো আরো প্রাণবন্ত ও মোহনীয় উঠে সিআরবি শিরীষতলায়, যা চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ নামে খ্যাত। গাছের ডালে ডালে বিভিন্ন প্রজাতির পাখালির সুমধুর ডাকে প্রাণ ভরে জুড়িয়ে যায়। সিআরবিতে শতবর্ষী রেইন-ট্রিসহ অসংখ্য গাছ রাস্তার দুু’পাশে মাথা উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাক্ষী হয়ে যে কারনে প্রতিদিন অগণিত দর্শনার্থী ও দেশী-বিদেশী পর্যটক পরিবেশের অপরুপ রুপে মোহিত হন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ইতোমধ্যে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত বীর চট্টলাবাসীর সাথে প্রতারণা ও প্রকৃতির সাথে অশোভন আচরণ যা কখনোই কাম্য নয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এহেন সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে, কেয়ামত সন্নিকটে ; আর তখন যদি (তোমার) হাতে একটি গাছের চারাও থাকে তবে সেই চারাটি রোপণ করবে।’ (বুখারি, আদাবুল মুফরাদ, মুসনাদে আহমাদ)। চট্টগ্রামে সুন্দর একটি হাসপাতাল হোক তা আমরা সবাই চাই; তবে সেটা সিআরবিতে নই। সবার গণ দাবির প্রক্ষিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জনগণের মতামত ও সম্পৃক্ততা নেই সেইরকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাতিল করবেন।
পুরো শহরের একটুকরো সবুজ প্রশান্তি
সনেট দেব
একটা জিনিস ভুলে গেছে চলবে না। একটা জায়গায় হাতপাতাল হওয়া মানে শুধু হাসপাতাল নয়। তার জন্য সিআরবি’র গাছপালা কাটতে হবে ফলে সিআরবি’র পরিবেশ ধ্বংস হবে এমনকি সিআরবি’র পুরো জায়গা জুড়ে গড়ে উঠবে এক ধরনের অস্থির পরিবেশ। স্বজন হারার আর্তনাদ, এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন, অসুস্থ মানুষ নিয়ে ছুটাছুটি সহ আরো কত কি। এছাড়া এই হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ হলে প্রয়োজন হবে ছাত্রাবাসের ও আরো লাগবে ডাক্তার নার্স কর্মচারীদের বাসস্থান। হাসপাতালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে অসংখ্য ফার্মেসী ও হোটেল রেস্তোরাঁ। গড়ে উঠবে অসংখ্য ডায়গনিস্টিক সেন্টার, নানা রকমের ক্লিনিক ও ডাক্তারের চেম্বার। ফলে সিআরবির এ রূপ আর থাকবে না। হাসপাতালে রোগী ও মানবিক দিক বিবেচনা করে সিআরবির শিরীষ তলায় হতে পারবে না কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ধ্বংস হয়ে যাবে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক বলয়।
সুতরাং এক কথায় সিআরবি’তে হাসপাতাল চাই না। সেটা অনত্র হোক তাতে আপত্তি নেই। চট্টগ্রামের নিঃশ্বাস নেয়ার এই স্থানটিকে প্লিজ গলাটিপে ধরবেন না। আমরা একটু প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে চাই। শহরের এই জনবহুল এলাকা ছেড়ে, দিন শেষ একটু সিআরবি’র মোড়ে বসে প্রশান্তির ছায়া নিতে চাই। আশাকরি মাননীয় কতৃর্পক্ষ চট্টগ্রামবাসী এই প্রাণের দাবি মেনে নিয়ে সিআরবি এলাকা থেকে হাসপাতাল সরিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আরো হাজার হাজর গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিক। সেই সাথে প্রস্তাবিত হাসপাতালটি অনত্র সরিয়ে গড়ে তোলা হোক।
শিরীষতলা রক্ষা করতেই হবে
ডাঃ দুলাল দাশ
পুরো সি আর বি এলাকা শতবর্ষী গাছের ছায়া দিয়ে ঢাকা। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য ও মহিমায় চারিদিক উদ্ভাসিত। ছায়া ঢাকা স্নিগ্ধতা- এমন দৃশ্য কোথাও পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। চট্টগ্রামেত নয়ই। রেলওয়ে হাসপাতাল থেকে বের হলে বাম দিকে সি আর বি তে উঠার সময় সাত রাস্তার মোড়। এইখানে সাতটি রাস্তা সাত দিক থেকে এসে মিশেছে। ছোট ছোট পাহাড়ের গা ঘেঁসে কর্মচারীদের কোয়ার্টার। সাত রাস্তার মোড় থেকে পশ্চিমে পলোগ্রাউন্ডের দিকে যে রাস্ত চলে গেছে তার পাশে একটু নীচু করে সমতল খোলা জায়গা- যেথায় শতবর্ষী বড় বড় বৃক্ষ ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। উঁচু-নীচু, সমতল, পাহাড়-টিলা, আঁকা-বাঁকা রাস্তা সব জায়গা মিলে যাকে আমরা শিরীষতলা বলে থাকি। এই শিরীষতলার বৃক্ষছায়ায় প্রতি বছর বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ বেশ জাকজমক ভাবে উদযাপিত হয়। নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনে মুখরিত হয়ে উঠে। গড়ে উঠে সাংস্কৃতিক মিলন কেন্দ্র। নগরবাসী এখানে পায় উম্মুক্ত মাঠ, শিরীষতলার নির্জনতা, উঁচু নীচু ভূমির নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য। যান্ত্রিক জীবন থেকে নিজেকে একটু স্বস্তি দিতে মানুষ সি আর বি তে ছুটে যায়। তাকে রক্ষা করতেই হবে। এটি কারো ব্যবসায়ীক কেন্দ্র হতে পারে না। সৌন্দর্য্যমণ্ডিত ঐতিহাসিক সি আর বি’র ঐতিহ্য বিনষ্ট করে বেসরকারি হাসপাতালের উদ্যোগ মোটেও সমীচীন নয়।
প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল নয়
মিজানুর রহমান কাজল
বর্তমান সরকার পরিবেশ বান্ধব সরকার। তারা কাজ করে যাচ্ছে জলবায়ু ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে, অথচ আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক ভূমিদস্যু আমলা পরিবেশের কথা চিন্ত না করে নিজেদের আমলাতন্ত্রিক সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নের পথে হাঁটছেন যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ প্রাকৃতিক অক্সিজেন আরোহণের জায়গা চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় প্রকৃতির সৃষ্টি গাছপালা, পাহাড় ধ্বংস করে গড়ে তুলবে হাসপাতাল। কেন এই হঠকারি সিদ্ধান্ত? ৬ একর জায়গা ধ্বংস করে কোটি মানুষের ভালবাসার স্থান, প্রকৃতির অকৃপণ সৃষ্টিকে ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণ কী লাভ এতে? হ্যা, লাভ হবে কিছু আমলা আর রাজনৈতিক ব্যক্তির। তাদের পকেট ভারি হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি সিআরবিকে তার আপন মহিমায় চলার পথে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা অপসারিত করে প্রকৃতি ধ্বংসকারি ও চলমান সরকারের ভাবমূর্তি হরণকারিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
ঐতিহ্য বজায় রেখে চট্টগ্রাম হোক বিশ্বের মডেল
মাহবুবুর রহমান সুজন
পাহাড়, সমুদ্র ও উপত্যকায় ঘেরা বাণিজ্যিক রাজধানী আমাদের প্রিয় চট্টগ্রাম। প্রাচ্যের রাণী হিসাবে খ্যাত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বীর চট্টলা। একপাশে নদী অপর পাশে সবুজে ঘেরা পাহাড় এমন প্রাকৃতির দৃশ্য বিশ্বের খুব কম শহরে দেখা মিলে। সৃষ্টিকর্তা এমন অপরূপ সৌন্দর্য চট্টগ্রামে দিয়েছে। কিন্তুু শিল্প ও বাণিজ্যের বিপ্লব ঘটাতে গিয়ে নদী দূষণ, বৃক্ষ নিধন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংসসহ নানাবিধ অপকর্মযজ্ঞ চলছে চট্টগ্রামে। চারদিকে শিল্প কলকারখানার দূষিত বায়ু, উঁচু-বড় দালানের ভিড়ে চট্টগ্রামে মন ভরে সচ্ছ নিঃশ্বাস নেওয়ার স্থান সিআরবি, ডিসি হিল, বাটালি হিলের মতো প্রাকৃতিক স্থান। সম্প্রতি সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের যে অমানবিক সিন্ধান্ত নিয়েছে এটি চট্টগ্রামবাসীকে খুবই মর্মাহত করেছে।
এই সিআরবি শত শত বছরের সাক্ষী। শত বছর চেষ্টা করলেও এমন একটি স্থান গড়ে তোলা অসম্ভব। আশা করছি কতৃপক্ষ সর্বস্তরের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে সিআরবি সৌন্দর্যকে বলবৎ রেখে বিকল্প স্থানে হাসপাতাল গড়ে তুলবেন। ভবিষ্যতে ও চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সৌন্দর্য বজায় রেখে ব্যবসা-শিল্প-বাণিজ্যে বিশ্বে মডেল হবে প্রিয় চট্টগ্রাম।
অক্সিজেন কারখানা বাঁচাতে হবে
চৌধুরী বাবলা
বিশ্বব্যাপী আজ মানুষের যে ব্যাধি, তা সত্যিই প্রকৃতির ভারসাম্যহীনতার ফল। হতে পারে উষ্ণায়ণের প্রভাব বা নির্বিচারে নির্বিবাদে প্রকৃতির ওপর অত্যাচার, অনাচারের ফল, কিংবা প্রকৃতি ধ্বংসের বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এই অমোঘ সত্যটি কি ভূমিদস্যু, লুটেরা পুজিঁবাদী শ্রেণির দুর্নীতিগ্রস্থ আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিকগণ জানেন না ? নিশ্চয়ই জানেন, আরও বেশি জানেন। কিন্তু তাঁদের এ লোভ-লালসা, ভোগ-বিলাস, ক্ষমতার বাহাদুরি পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে এভাবেই সভ্যতার অন্ধ প্রকোষ্ঠে তাড়িত করে। এতে তারা চিন্তিতও নন, বরং অধিক তৎপর নিজেদের বিলাসী জীবন-যাপন নিয়ে এবং আজীবন এভাবেই জীবন উপভোগ করতে প্রচণ্ড আগ্রহী। মানুষ, প্রাণ-প্রকৃতি গোল্লায় যাক, এতে পুঁজিবাদী শোষকদের কিচ্ছু যায় আসে না। বিশ্বব্যাপী করোনার এ দুর্যোগকালে মানুষ হাড়ে হাড়ে তা উপলব্ধি করছে প্রতিনিয়ত।
চট্টগ্রামের ফুসফুস, বিনামূল্যের এই নির্মল অঙিজেন কারখানা সঠিকভাবে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে সিআরবি, বাটালি হিল ও এর আশেপাশের এলকায় আর কোন নতুন স্থাপনা গড়তে না দেয়ার জন্যে যে সংগ্রাম এখনও অব্যাহত, তা নিয়ে চাটগাঁর কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি, পরিবেশকর্মী, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক, সর্বোপরি সাধারণ জনতার মাঝে যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজমান, তা আর দীর্ঘ না করে, করোনার এই আপদকালে সংশ্লিষ্ট মহলের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।