মধ্যপ্রাচ্যের মাটিতে যখন প্রথম পা রাখলাম তখন সে দেশের ভাষা বলতেই কিছু বুঝতাম না, বলতে গেলে সে দেশের ভাষা আরবি অনেক কঠিন লাগতো, তার মধ্যে আরবি‘রা কতো রকম ভালোমন্দ কথাবার্তা বলে যেতো তার হিসাব ছিল না, মাঝেমধ্যে মনে হতো হয়তো অনেক নিকৃষ্ট ভাষা বলেছে, তা কিন্তু কথার ধরনে এক আধটু অনুভব করতে পারতাম, মুখ খুলে কিছুই বলতে পারতাম না, নিজে নিজে কিছু বলার চেষ্টা করেও কোনো জবাব দেওয়া সম্ভব হতো না।
কিছুদিন যেতে না যেতে যেমন বাচ্চাদের মুখে প্রথম শব্দ বের হয় তেমন করে ভাঙা ভাঙা আরবি বলতে লাগলাম, অনেকে হাসতো আর ঠাট্টা করতো কি যা–তা বলে! তবুও চুপ থেকে নিজেকে সামলে নিতাম, এভাবেই আস্তে আস্তে যখন আরবি শিখে গেছি, তখন ভাবলাম এখন তো কে কী বলে তা বুঝতে পারব এবং জবাব ও দিতে পারব।
তারপর একদিন একটা কাজের জন্য এক আরবির কাছে যেতে হলো, কাজের কথা শেষ হবার পর আরবি আমাকে বলল, আচ্ছা তোমাকে একটা প্রশ্ন করব তার ঠিক জবাব দেবে কি?
বললাম, নিশ্চয় দেব। সে বলল, তোমাদের দেশ অনেক গরীব তাই তোমরা মিসকিন বলে এদেশে এসে চাকরি করতে হচ্ছে – কথাটি শোনে আমার কান দিয়ে আগুন বের হতে লাগলো আর বুকে যেন কেউ একশো কেজি পাথর ছুড়ে মারল, রাগে ভেতরে ভেতরে গদগদ করতে লাগলাম, তবুও নিজেকে একটু সামলে নিয়ে মুখে ফ্যাকাসে হাসি টেনে বললাম, আমরা মিসকিন নই আর আমাদের দেশ ও গরীব নয়,
কেমনে? তোমাদের দেশের জনসংখ্যা কতো? সত্তর আসি লাখ হবে, আর আমাদের দেশে ১৪ কোটি (তখন ১৪ কোটি ছিল, ১ দিরহাম সমান ১৮ টাকা)। সে বলল, এতো লোক? বললাম, হ্যাঁ, এবার তুমি হিসাব করে দেখ আমাদের দেশের মানুষ সকালে যদি একজনের পাঁচ টাকা করে চা–নাস্তার খরচ হয় হিসাব করলে বুঝতে পারবে কতো কোটি টাকার নাস্তা করে প্রতি সকালে, তারপর দুই বেলা ভাত ও বিকালের চা–নাস্তা, এবার হিসাব করলে বুঝতে পারবে তোমাদের দেশে আমাদের এক বেলার চা–নাস্তার পয়সা ও ইনকাম নেই, সে বলল;- তাহলে এখানে কেন এসেছ? এখানে আসার কারণ হলো ১ দিরহাম সমান বাংলাদেশের ১৮ টাকা হচ্ছে বলেই এসেছি, যদি সমান সমান হতো তাহলে তো তোমরা আমাদের দেশে গিয়ে কাজ করতে হতো, আর তুমি যেই কথা বলছ আমরা মিসকিন কিন্তু আমরা মোটেই মিসকিন না, জনসংখ্যার কারণে এদেশে আসা হয়, যদি তোমাদের মতো জনসংখ্যা হতো তাহলে তো তুমি বুঝতে পারছ আমরা একেকটা কতো বড়ো শেখ হতাম!