আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেব না : রিজভী

‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে ভারত’

| রবিবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৮:১৭ পূর্বাহ্ণ

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, বিএনপি সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারে। কিন্তু দলটি সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে না। কারণ সরকার গঠিত হয়েছিল ছাত্রনেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গতকাল শনিবার ‘দ্রোহের গ্রাফিতি : ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন। খবর বাসসের।

রিজভী বলেন, একদিকে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করছি। অন্যদিকে আমরা একে অপরের পাশে বসে আলোচনা করছি। এটি গণতান্ত্রিক রীতি। কিন্তু আমরা সরকারকে ব্যর্থ হতে দেব না। রিজভী আরও বলেন, সরকারের সমালোচনা করার কারণে এখন আমাদের জেলে যেতে হবে না, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা জোরপূর্বক গুমের শিকার হতে হবে না, দমনপীড়ন ও মিথ্যা মামলার মুখোমুখি হতে হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর এই পরিবর্তন এসেছে। রুহুল কবির রিজভী দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার, জনগণের মুক্ত চিন্তাভাবনার অধিকার ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, দেশে যদি গণতন্ত্র বিরাজ করে, তাহলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এমনকি যদি সমাজে গণতন্ত্র বিরাজ করে, তবে দুর্ভিক্ষও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। একটি সফল বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লবের সুযোগ থাকতে পারেউল্লেখ করে যাতে ফ্যাসিবাদী শক্তি এই ফাঁকগুলো থেকে সুবিধা নিতে না পারে সেজন্য তিনি সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। ভারতীয় গণমাধ্যম ও কর্তৃপক্ষের ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মিত্রদের ভূমিকা সমর্থন করার জন্য রিজভী কঠোর সমালোচনা করেন এবং বলেন, ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশের এমন ভূমিকা গ্রহণযোগ্য নয়। বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা দাবি করেন, ভারত শেখ হাসিনার পক্ষে একটি আখ্যান তৈরি করার ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে অপমান করার অপচেষ্টা করছে। তিনি আরো বলেন, ভারত যা করছে, তা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আক্রমণ। তারা সমস্ত আন্তর্জাতিক নিয়ম ও বিধি লঙ্ঘন করছে।

হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হকের গাজীপুরে বাসভবনে শুক্রবারের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গাজীপুরের একজন মাফিয়া মেয়র এখন হাসিনার প্রতিনিধিত্ব করছেন। আমি জানি না, তার কোনো শিক্ষাগত পটভূমি আছে কিনা। দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, কবি, লেখক ও সাহিত্যিকদের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেক কিংবদন্তি কবি ও লেখক হিটলারমুসোলিনির স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসনামলে তাদের পক্ষে ছিলেন। একইভাবে, দেশের কিছু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনকে সমর্থন করেছিলেন ও তার পক্ষে আখ্যান তৈরি করেছিলেন। তিনি বলেন, এর পটভূমিতে কিছু যুবক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন ও কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে তাদের আওয়াজ তুলেছিলেন।

যে কোনো বিদ্রোহবিপ্লবের জন্য সাংস্কৃতিক সম্পৃক্ততা অপরিহার্য উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, জুলাইয়ের বিদ্রোহে শিল্পকর্ম ও গ্রাফিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তিনি বই, কবিতা, চলচ্চিত্র ও অন্যান্য সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে জুলাইয়ের বিদ্রোহের গ্রাফিতি ও প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতিকে পথ দেখাবে গণঅভ্যুত্থানের চেতনা
পরবর্তী নিবন্ধআগে আ. লীগের গণহত্যার বিচার, পরে অন্য কিছু