চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত এক মাসের ব্যবধানে আমদানি শুল্ক ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়েছে সরকার। ফলে ব্যবসায়ীরা এখন ১০ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করে চাল আমদানি করতে পারছেন। তবে এক্ষেত্রে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলের অনেক ব্যবসায়ী চাল আমদানি করেছেন। আমদানি চালের সরবরাহ বাড়লেও দাম কমার পরিবর্তে উল্টো বেড়েই চলেছে।
নগরীর চাক্তাইয়ের চালপট্টি এবং পাহাড়তলী বাজারের আড়তদাররা বলছেন, যেসব চাল আমদানি হচ্ছে সবগুলো উত্তরাঞ্চলের মোকাম মালিকরা মজুদ করে রেখেছেন বলে আমরা শুনেছি। কারণ চাল আমদানি বাড়লে দাম বাড়ার কথা নয়। এছাড়া অজানা কারণে ধানের দামও বেড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বাজার নিয়ন্ত্রণ না করলে দাম আরো লাগামহীন হয়ে পড়তে পারে। গতকাল নগরীর দুই বৃহৎ চালের আড়ত চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিরাশাইল সিদ্ধ, নাজিরশাইল সিদ্ধ, মিনিকেট সিদ্ধ এবং কাটারিভোগ সিদ্ধ, বেতি আতপ, পাইজাম আতপ, মিনিকেট আতপ, কাটারিভোগ আতপ, পাইজাম সিদ্ধ, মোটা সিদ্ধ এবং স্বর্ণা সিদ্ধের দাম বস্তায় সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এসব চালের সিংহভাগ আসে উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর এবং কিশোরগঞ্জের আশুগঞ্জ থেকে।
চালের আড়তদাররা জানান, গত তিন-চারদিনের ব্যবধানে জিরাশাইল সিদ্ধ বস্তায় ২৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯৫০ টাকায়। এছাড়া নাজিরাশাইল সিদ্ধ বস্তায় ২০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ২০০ টাকা, মিনিকেট আতপ ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৬০০ টাকা, কাটারি সিদ্ধ ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৮৫০ টাকা, কাটারি আতপ ৩০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০ টাকায়। অপরদিকে স্বর্ণা সিদ্ধ বস্তায় ১৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২৫০ টাকা, পাইজাম আতপ ২০০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকা এবং বেতি আতপ বস্তায় ২৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ টাকায়।
জানতে চাইলে পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, সরকার চাল আমদানির অনুমতি দেয়ার পরেও দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না। আমরা শুনেছি-উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন বড় বড় মোকামের মালিকরা আমদানি করা চাল মজুদ করে রেখেছেন। তারা সেইসব চাল এই মুহূর্তে বাজারে খুব একটা ছাড়ছে না। যার ফলে বাজার ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে শর্তসাপেক্ষে চাল আমদানির অনুমতি দিলেও বাজার মনিটরিং করাটাও কিন্তু সরকারের দায়িত্ব। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুই এক সপ্তাহের মধ্যে চালের বাজার বেহাল হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রফিক উল্লাহ বলেন, সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে ঠিক, সেখানে কিন্তু অনেক বিধিনিষেধও আরোপ করেছে। এখন চাল আমদানির জন্য আগে থেকেই অনুমতি নিচ্ছে হচ্ছে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী চাল আমদানিতে থেকে বিরত রয়েছে। অন্যদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে নতুন ধানের দামও বড়েছে। প্রতিমণ নতুন ধানের দাম ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়।
উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমাদিনতে শুল্ক ২৫ শতাংশ হতে ১০ শতাংশ এবং শর্ত সাপেক্ষে সমুদয় রেগুলেটরি ডিউটি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। প্রজ্ঞাপনের আওতায় রেয়াতি হরে চাল আমদানির শর্ত হচ্ছে, এজন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত কমপক্ষে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তার কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হবে। প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হয়ে ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বহাল থাকবে। এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে ‘নিয়ন্ত্রিত মাত্রায়’ চাল আমদানির অনুমতি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। ওইদিন এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, চালের দাম নিয়ে ভোক্তাদের যাতে কষ্ট না হয়, আবার কৃষকও যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় চাল আমদানির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।