‘জীবনের শুরুতেই হোঁচট খাওয়া, পানিতে ডুবে মরতে মরতেও বেঁচে যাওয়া, বসন্ত রোগের ভয়ঙ্কর থাবা থেকে বেঁচে ফেরা, কোনো কিছুই কেনো যে আমার ছোট্ট প্রাণটা কেড়ে নিলো না। তখন যদি চলে যেতাম এতো কষ্ট করতে হতো না জীবনে। আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখনই আমার বাবা মারা গেলো। হে আল্লাহ কেনো যে তুমি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলে? জীবন সংগ্রামে লিপ্ত থেকে কতো কষ্টই না সহ্য করতে হয়েছে।’ ছোটো ছোটো তিনটা বোন আর দুখিনী মাকে নিয়ে জীবন সংগ্রামের শুরু। জীবনের চাকা ঘুরাতে ঘুরাতে হাঁপিয়ে ওঠা আমার আব্বুকে অনেক সময় দুঃখে, কষ্টে, ক্ষোভে এ কথাগুলো বলতে শুনেছি। আবার পরক্ষণেই দেখেছি হাজারো স্বপ্ন বুকে নিয়ে প্রচণ্ড সাহসিকতার সাথে এগিয়ে চলতে। খুব ছোটোবেলা থেকেই নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করতেন আমার আব্বু। শিক্ষার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ থেকেই অনেক উঁচু পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন। একাগ্র চিত্তে সাধনা করতে করতে জীবনে প্রতিটি পর্যায়ে পেয়েছেন সফলতা। আমরা তিন ভাই বোনকে কখনোই আলাদা চোখে দেখেননি, ছেলে মেয়ের বিভেদ করেননি কখনো কোনো কিছুতেই। আমাদের তিনজনকে সাথে নিয়েই নামাজ পড়তেন। দু‘হাত তুলে আল্লাহর কাছে অনেকক্ষণ মোনাজাত করতেন। আব্বুর মোনাজাতের ভাষা শুনে আমরা সবাই অঝরে কান্না করতাম। মোনাজাতের প্রতিটি শব্দ আমাদের কান থেকে মস্তিষ্কে, হৃদয়ের স্পন্দনে মিশে যেতো। একদিন দুইদিন নয় প্রতিদিন নিয়মিত আব্বুর সাথে আমরা নামাজ পড়তাম। আব্বুর মোনাজাতে আল্লাহর কাছে করা প্রতিটা ফরিয়াদ আল্লাহ কবুল করেছেন। শেষ বয়সে আমার আব্বুর জীবনে আর কোনো অপূর্ণতা ছিলো না। একজন সাধারণ মানুষের যে স্বাভাবিক স্বপ্নগুলো থাকে সব স্বপ্নই পূরণ হয়েছে। জীবদ্দশায় আর কোনো কাজ বাকি ছিলো না। একজন পরিপূর্ণ সুখী মানুষ হিসেবে আমার আব্বু আলহাজ্ব এডভোকেট মো. শফিকুল ইসলাম (আয়কর আইনজীবী) পৃথিবী থেকে সসম্মানে বিদায় নিয়েছেন।
যেদিন আব্বুকে হারালাম সেদিন আমরা যেনো আমাদের পুরো পৃথিবী হারিয়ে ফেলেছি। ১৯ শে আগস্ট ২০২৩ ছিলো আব্বুর ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। দিন যেতে যেতে আমাদের জীবন যাত্রা সব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো আমরা প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে মোনাজাতে যেনো আব্বুর সেই জোরালো কণ্ঠ শুনতে পাই। আব্বুর মতো আমরা কেউই ওভাবে মোনাজাত করতে পারি না। তবুও এখন মহান আল্লাহর কাছে আমাদের চাওয়া শুধু একটাই, আব্বুর মোনাজাতে কবুল হওয়া দুনিয়াবী সকল সফলতার মতো পরকালেও যেনো তিনি তার মা–বাবা, আপনজন, আত্মীয়–স্বজনের সাথে বেহেশতের উন্নত স্থানে অধিষ্ঠিত হন।
        











