আবু হেনা মোস্তফা কামাল (১৯৩৬–১৯৮৯)। শিক্ষাবিদ, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও সংগীত রচয়িতা। বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপস্থাপক হিসেবেও তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। নিজস্ব ভাষাশৈলীতে রসঘন সাহিত্য রচনা এবং কবিতায় ও সংগীতে উজ্জ্বল উপস্থিতি তাঁকে সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে করে তুলেছে অনন্য। আবু হেনা মোস্তফা কামালের জন্ম ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই মার্চ পাবনা জেলার উল্লাপাড়ার গোবিন্দা গ্রামে। শিক্ষাজীবনে ছিলেন মেধাবী ও কৃতী। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বি.এ অনার্স এবং ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে বাংলায় এম.এ পাস করেন। বেঙ্গলি প্রেস অ্যান্ড লিটারারি রাইটিং–১৮১৮–১৮৩১ শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরু শিক্ষকতার মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন তিনি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই আবু হেনা ছিলেন সংস্কৃতিপ্রেমী। নিয়মিত লিখতেন কবিতা আর গান। স্বদেশপ্রেম, মানবপ্রেম, হৃদয়ের অন্তরঙ্গ অনুভূতি, গভীর আবেগ সব মিলিয়ে আধুনিক শিল্প চর্চার এক পরিশিলিত রূপের দেখা মেলে তাঁর কবিতা আর গানে। প্রবন্ধ, সমালোচনা, গবেষণাধর্মী লেখা সাহিত্যের এই ক্ষেত্রেও ভাষা শৈলী, বক্তব্য উপস্থাপন রীতি, রসবোধ ও অনুভূতির বহিঃপ্রকাশে আবু হেনা স্বতন্ত্র্য। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য রচনা– কাব্য: ‘আপন যৌবন বৈরী’, ‘যেহেতু জন্মান্ধ’, ‘আক্রান্ত গজল’, গীতিগ্রন্থ: ‘আমি সাগরের নীল’, প্রবন্ধ: ‘শিল্পীর রূপান্তর’, ‘কথা ও কবিতা’, গবেষণা : ‘দি বেঙ্গলি প্রেস অ্যান্ড লিটারারি রাইটিং’। সাহিত্য সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্বর্ণপদক, সাদত আলী আকন্দ স্মৃতি পুরস্কার এবং সুহৃদ সাহিত্য স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আগামীকাল তাঁর ৩৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী।