শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সারা দেশে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে একটি স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল। তারা নাশকতা চালিয়ে ধ্বংস করেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, তাণ্ডব চালিয়ে ধ্বংস করেছে বহু রাষ্ট্রীয় সম্পদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এই ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বিটিভি ভবনে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের শতাধিক গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। সেতু ভবনে দুবার আগুন দেওয়া হয়। সেখানে ৫০টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। সমপ্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। ফার্মগেটে মেট্রোরেল স্টেশন ভাঙচুর; দিয়াবাড়ি মেট্রোরেলের ডিপোতে হামলা; শনির আখড়ায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন ও ভাঙচুর; বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রে হামলা ও আগুন; ধানমন্ডির পিটিআইয়ের অফিসে হামলা; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিসে হামলা–ভাঙচুর ও শতাধিক গাড়িতে আগুন দিয়ে পোড়ানো; মহাখালীর ডাটা সেন্টারে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সাবমেরিন কেবল নষ্ট করা হয়েছে। মহাখালী করোনা হাসপাতাল, পুষ্টি ইনস্টিটিউট, স্বাস্থ্য অধিদফতর, বিআরটিএ ভবনে আগুন দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নরসিংদীতে কারাগারে হামলা করে সন্ত্রাসীদের বের করে নিয়ে গেছে। কয়েকজন ধরা পড়েছে, কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আফতাবনগর ওয়াসা শোধনাগারে হামলা; বাড্ডা, নিউমার্কেট ও নীলক্ষেতে পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ; রায়পুর পুলিশ কেন্দ্রে হামলা ও অগ্নিসংযোগ; রামপুরা থানা পুলিশে অগ্নিসংযোগ; মেরাদিয়া পিবিআই কার্যালয় ভাঙচুর; উত্তরায় রেললাইন উপড়ে ফেলা; মৌচাক পুলিশ বক্স; বসিলায় সিটি হাসপাতালে হামলা; কদমতলী মোহাম্মদপুর থানায় হামলা; বরিশালে র্যাবের কার্যালয়ে হামলা; গাড়ির ভেতরে র্যাব সদস্যকে হত্যা করা; পুলিশকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা; গাজীপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকে হাসপাতাল থেকে টেনে বের করে মেরে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ক্ষতিগুলি কার? যে কয়টা ভবন আমরা তৈরি করেছি। বেজা অফিস থেকে শুরু করে কোনটাই বাদ দেয়নি, হামলা করেনি, আগুন দেয়নি। উদ্দেশ্যটা কী? সেটাই বিবেচনা করে দেখতে হবে।’
আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, এর আগেও বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে ছোট বড় তাণ্ডব চালানো হয়েছে। তবে এবারের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ধরন অন্যরকম। শিক্ষার্থীদের দাবির আড়ালে মূলত স্বার্থান্বেষী মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার (ডিএমপি) হাবিবুর রহমান বলেন, আন্দোলনের নামে চলমান নাশকতায় শিক্ষার্থীদের কোনো সংশ্লিষ্টতা মেলেনি। বিভিন্ন তথ্য, ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বেশিরভাগ ঘটনার হামলাকারীরা মধ্যবয়সী। গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, ‘তারা বিএনপি–জামায়াতের কর্মী’।
দুষ্কৃতকারীদের অগ্নিসংযোগে বড় ক্ষতির মুখে পড়ে মেট্রোরেল। এমনভাবে ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালিত হয়েছে, তা ঠিক করতে এক বছরেরও বেশি সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেলের ক্ষতি অপূরণীয়। তাণ্ডবের কয়েকদিন পরেও এখনো রাস্তা ও বিভিন্ন স্থাপনায় রয়েছে ‘যুদ্ধ বিধ্বস্ত চিত্র’ এবং অগ্নিসংযোগের চিহ্ন।
সরকারের পক্ষ থেকে দফায় দফায় ব্রিফিং দেওয়া হচ্ছে। মিডিয়া কর্মীরা তা প্রচার করছেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করার মহাযজ্ঞ ও ক্ষতচিহ্নের চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। দুষ্কৃতকারীদের শাস্তি প্রদানে উদ্যোগী হবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের সহজে ছাড়া যাবে না।’ অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন–উর–রশীদ। তিনি বলেন, ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে যারা অর্থ সাপ্লাই করেছে, যারা সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, পুলিশকে হত্যা করেছে এবং যারা মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় আগুন লাগিয়েছে, যারা অন্যদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে, জানতে হবে তাদের উদ্দেশ্যটা কী! তিনি বলেন, ‘যারা নাশকতা করেছে, তাদের পরিচয় মিলেছে। তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, ‘এই সহিংসতার নেপথ্যে শুধু দেশের ভেতরেই নয়, বাইরে থেকেও চক্রান্তকারীরা ইন্ধন দিচ্ছে এবং পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। ইন্ধন না পেলে এমন ধ্বংসাত্মক আন্দোলন করা সম্ভব হতো না।’
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে উপলক্ষ করে যে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ কিংবা নাশকতা চালানো হয়েছে, যে পরিমাণ সম্পদের ক্ষয়–ক্ষতি হয়েছে, তা এককথায় ভয়াবহ। এই ক্ষয়–ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে, তা নিয়ে ভাবতে হবে। সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত করার ক্ষেত্রে দেশ যেভাবে অগ্রসর হয়েছিল, তার গতি ব্যাহত হয়েছে চরমভাবে। আবার মাথা তুলে দাঁড়াক আমাদের প্রিয় দেশ, তার অপেক্ষায় আছি আমরা।