আবারো বাঁধ দেয়া হবে খালে

তিন মাস পর কাজ শুরু ।। জুনের আগে আরো ২৫ শতাংশ কাজ শেষের লক্ষ্য

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২১ at ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ

বৃষ্টির জন্য প্রায় তিন মাস স্থগিত রাখার পর আবারো শুরু হয়েছে নগরে জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্পের কাজ। এবার প্রকল্পভুক্ত ৩৬ খালের মধ্যে ২১টির কাজ সম্পূর্ণ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পভুক্ত ‘র্স্টম ওয়াটার রিজার্ভার’ বা বন্যার পানি সংরক্ষণ জলাধার নির্মাণ কাজ চলতি বছরও শুরুর সম্ভাবনা নাই।
চলতি মৌসুমের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ২৫ শতাংশ কাজ শেষ করা হবে। এর আগে বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকল্পের মোট কাজ শেষ হয়েছিল ৫৫ শতাংশ। ওই হিসেবে চলতি অর্থ বছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটির মোট ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, দুয়েক দিন আগে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি। বৃষ্টির জন্য গত জুলাই থেকে প্রায় সাড়ে তিন মাস পুরোদমে কাজ করতে পারিনি। অবশ্য বৃষ্টির মধ্যেও কিছু কিছু জায়গায় টুকটাক কাজ করেছি। কিন্তু সেটা খুব সামান্য। এখন একটানা কাজ চলবে। আশা করছি সব মিলিয়ে আগামী বর্ষার আগে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পারবো। এবারো বিভিন্ন খালে বাঁধ দিয়ে রিটেইনিং ওয়ালের কাজ করব। ইতমোধ্যে দুই নম্বর গেটে দেয়া হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে হিজরা খালেও বাঁধ দেয়া হবে। আশা করছি, বর্ষার আগেই কাজ শেষ করে ফেলতে পারব।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) গৃহীত ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্পটি ৫ হাজার ৬শ ১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়া শেষে একই বছরের ২৮ এপ্রিল নগরীর চশমা খাল ছাড়াও মুরাদপুর এলাকার সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন খাল ও বহদ্দারহাট মোড়ের বড় নালা পরিষ্কার করার মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ছিল ২৯ শতাংশ।
প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুযায়ী, নগরের ৩৬টি খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ প্রকল্পভুক্ত। এর মধ্যে ২১টি খালের কাজ আগামী বর্ষার আগে সম্পূর্ণ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এসব খালে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের পাশাপাশি সম্পূর্ণ খননও করা হবে। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় খালের ৭০ কিলোমিটার অংশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তবে সম্প্রতি এ জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। ইতোমধ্যে সিডিএ থেকে জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
চলতি মৌসুমে যেসব খালের কাজ সম্পূর্ণ শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়ছে সেগুলো হচ্ছে- চাক্তাই খাল, রাজাখালী খাল-১, ২ ও ৩, টেকপাড়া খাল, মির্জা খাল, চশমা খাল, ত্রিপুরা খাল, নয়া খাল, রুবি সিমেন্ট খাল, গুপ্ত খাল, নাসির খাল, মরিয়ম বিবি খাল, আজব বাহার খাল, হিজরা খাল, সদরঘাট খাল-১, গয়নাছড়া খাল-২ ও খন্দকিয়া খাল। ইতোমধ্যে ফিরিঙ্গিবাজার কলাবাগিচা খালে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান প্রকল্প বাস্তবায়নাকারী সংস্থার প্রকল্প পরিচালক।
এদিকে এবারও রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের সময় খালে বাঁধ দেয়া হবে। যদিও এসব বাঁধের কারণে অল্প বৃষ্টিতেও গত বর্ষায় ডুবছে শহর। কয়েক দফা জলাবদ্ধতার জন্য বাঁধগুলো অপসারণ না করাকে দায়ী করা হয়েছিল। এর আগে বাঁধ অপসারণে একাধিকবার সিডিএকে সময়সীমাও নির্ধারণ করে দেন চসিক মেয়র। গত ১ জুন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ও দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকেও মেগা প্রকল্পের আওতায় দেয়া বাঁধ সরিয়ে নিতে বলেছিলেন মেয়র।
ডিপিপি অনুযায়ী, পানি ধারণের জন্য তিনটি র্স্টম ওয়াটার রিজার্ভার বা জলাধার নির্মাণ করা হবে। যেগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণে কাজ আসবে। প্রাথমিকভাবে হালিশহর, চান্দগাঁও এবং মোহরা এলাকায় জলাধারগুলো নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে সেনাবাহিনী। তবে ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় একটিরও নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়নি। এ বিষয়ে লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী বলেন, জলাধারের জন্য অনেক জমি লাগবে। অধিগ্রহণ না হলে তো কাজ শুরু করা যাবে না। এক জায়গায় তো চাহিদা অনুযায়ী খাস জমিও পাচ্ছি না। তবে আমরা চারটি জায়গার প্রস্তাব করেছি।
প্রকল্পে পাঁচটি টাইডাল রেগুলেটর নির্মাণও অন্তর্ভুক্ত। ইতোমধ্যে সবগুলোর ভৌত কাজ হয়ে গেছে। কেবল গেইট লাগানো বাকি। চলতি অর্থ বছরে নেদারল্যান্ড থেকে গেইট আসবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাসেলের মতো ভাগ্য যেন আর কোনো শিশুর না হয় : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকথা দিয়েও রাখেনি ম্যাক্স