নগরের ৪১ ওয়ার্ডে বাসা–বাড়ি থেকে ময়লা–আবর্জনা সংগ্রহ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ২৭টি ওয়ার্ডে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকি ওয়ার্ডগুলোতেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ময়লা–আবর্জনা সংগ্রহ করে নিয়ে যাবে। এজন্য প্রতিটি বাসা থেকে ৫০ থেকে ৭০ টাকা আদায় করবে তারা। বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হলেও বাসা–বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনায় একটি নীতিমালা করেছে চসিক।
এদিকে নগরবাসীর অনেকে বলছেন, চসিককে যে পৌরকর পরিশোধ করা হয় তার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ রেইটও অন্তর্ভুক্ত আছে। তাই আলাদা ফি ধার্য করা নিয়ে আপত্তি আছে তাদের। তবে এ বিষয়ে চসিকের দায়িত্বশীলরা বলছেন, বাসা–বাড়ির সামনে বিন বসালে ভবন মালিকরা আপত্তি করেন। তাই প্রতিটি এলাকায় নির্দিষ্ট দূরত্বে ডাস্টবিন বসানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী, বাসা–বাড়ির বাসিন্দাদের ওইসব বিনে ময়লা ফেলতে হয় এবং ওইসব বিন থেকে ময়লা সংগ্রহ করে নিয়ে যাবে চসিক। কিন্তু ভবন মালিকরা নির্ধারিত বিনে না ফেলে নালা–নর্দমায় বা যেখানে–সেখানে ময়লা ফেলেন। এ অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হলে তাদের কর্মীরা বাসা–বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে নিয়ে যাবেন।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর মেয়াদকালে ২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদ এবং ৭ নং পশ্চিম ষোলশহরসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে বাসা–বাড়ি থেকে ময়লা–আবর্জনা সংগ্রহ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই সময় চসিকের নির্দেশনা ছিল, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আবাসিক ভবন থেকে বর্জ্য অপসারণের জন্য প্রতি ফ্ল্যাট থেকে মাসে ১০০ টাকা এবং সেমিপাকা ঘর থেকে ৫০ টাকা করে আদায় করতে পারবে। বাস্তবে অনেক জায়গায় ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায়েরও অভিযোগ আছে।
এছাড়া যেসব এলাকায় চসিক আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়নি সেখানেও স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সংগঠন বাসা–বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে নিয়ে যেত। এজন্য ১০০ থেকে ২০০ টাকা আদায় করত তারা। ৫ আগস্টের পর ওইসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অনেক জায়গায় প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় নীতিমালা প্রণয়ন করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ময়লা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। নীতিমালায় বাসার ধরন ভেদে ফি নির্ধারণ করা হয় ৫০ থেকে ৭০ টাকা। ফলে এর অতিরিক্ত ফি আদায় করলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দেওয়া হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্জ্য সংগ্রহ কার্যক্রম বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার লক্ষ্যে গত ২৪ মার্চ ৪১ ওয়ার্ডের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ১৯২টি শিডিউল বিক্রি হয়েছে।
কী বলছেন মেয়র : কানাডায় অবস্থানররত সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন মোবাইলে আজাদীকে বলেন, ৫০ থেকে ৭০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়। গড়ে ৬০ টাকা ধরলে প্রতিদিন দুই টাকা। নিজের শহরকে পরিষ্কার রাখার জন্য এ টাকা কি খুব বেশি? অথচ বাসায় প্রতি মাসে ডিশের বিল দেওয়া ৪০০–৫০০ টাকা।
‘চসিককে যে পৌরকর পরিশোধ করা হয় তার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ রেইটও অন্তর্ভুক্ত আছে। এরপর বর্জ্য সংগ্রহে আলাদা ফি কেন দেবেন নগরবাসী? এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, রেজাউল করিম মেয়র থাকা অবস্থায় অতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাঙ নির্ধারণ করেছেন। সেটা আমরা কমিয়ে দিয়েছি। মানুষকে তো এক জায়গায় সুবিধা দিচ্ছে। কর্পোরেশনে যে জনবল তা দিয়ে প্রতিটি বাসা থেকে ময়লা সংগ্রহ করা অসম্ভব। বাসার সামনে বিন বসালেও আবার নগরবাসীর আপত্তি থাকে। তাই আমরা প্রতিটি পাড়া–মহল্লায় বিন বসিয়েছি। কিন্তু একটু দূরে হওয়ায় মানুষ সেখানে না ফেলে নালায়–ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলার সে বোধ তো এখনো অনেকের নেই। আমার আহ্বান থাকবে, ৬০ টাকা বড় করে না দেখে নিজ শহরের প্রতি ভালোবাসা হিসেবেই যেন দেখে। তিনি বলেন, খালের পাড়ে যাদের বাসা তারা সরাসরি খালে ফেলে। মানুষ যদি নির্দিষ্ট বিনে ময়লা ফেলত তাহলে তো বেসরকারি লোক দিয়ে সংগ্রহ করতে হতো না।
চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনের তৃতীয় তফশিল অনুযায়ী, ডাস্টবিন থেকে বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। অনেকের বাড়ি থেকে ডাস্টবিনের দূরত্ব ১০ ফুট। অনেকের এক–আধা কিলোমিটার থেকে এক কিলোমিটার। এত দূরে অনেকে ময়লা ফেলতে যেতে চান না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই ময়লা সংগ্রহ করে ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করত। এতে জনগণের ওপর অত্যাচার হচ্ছিল। এটিকে শৃঙ্খলায় আনার জন্য একটা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।