মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (১৮৮০– ১৯৭৬)। তিনি ‘মজলুম জননেতা’ হিসাবে সমধিক পরিচিত। তাঁর নেতৃত্বের ভিত্তি ছিল কৃষক শ্রমিক জনসাধারণ, যাদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী শারাফত আলী। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের মধ্যদিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। ১৯২৯–এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এরপর থেকে তার নামের শেষে ‘ভাসানী’ শব্দ যুক্ত হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি ভাসানীর নেতৃত্বে তখনকার পাঁচটি বিরোধী দল নিয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট ২২৩ টি আসন লাভ করে। মওলানা ভাসানী সোহরাওয়ার্দীর সাথে মতবিরোধ এবং তাঁর বৈদেশিক নীতির প্রতিবাদে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। এবং দলের সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় থেকে মওলানা প্রকাশ্যে বামপন্থি রাজনীতি অনুসরণ করতে থাকেন। ১৯৭১ এর মার্চ মাসে শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রদান করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত যান এবং মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। মাওলানা ভাসানী ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জানুয়ারি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭২–এর ২৫ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক হক–কথা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ–ভারত মৈত্রীচুক্তির বিরোধিতা করলেও মুজিব সরকারের জাতীয়করণ নীতি এবং ১৯৭২–এর সংবিধানের এর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন। ১৯৭৬–এর ১৬ মে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক লং মার্চে নেতৃত্ব দেন। একই বছর ২ অক্টোবর খোদাই খিদমতগার নামে নতুন আর একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। জয়পুরহাট–এর পাঁচবিবিতে মহিপুর হাজী মহসীন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন, পরে সেটি জাতীয়করণ করা হয়। আসামে ৩০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কারিগরী শিক্ষা কলেজ, শিশু কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সন্তোষে। এছাড়াও তিনি কাগমারিতে মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ এবং পঞ্চবিবিতে নজরুল ইসলাম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে সন্তোষে ‘মউলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ : ১. দেশের সমস্যা ও সমাধান (১৯৬২) ২. মাও সে তুং–এর দেশে (১৯৬৩)। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।