আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার – বিশিষ্ট সাংবাদিক ও যুগসচেতন মনীষী। তাঁর সমসাময়িককালে খানিকটা পিছিয়ে থাকা মুসলমান সমাজে তিনি ছিলেন যথার্থ অর্থেই অগ্রগামী, চিন্তায় ও মননে উদার, যুক্তিনিষ্ঠ। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত পাঠক সমাদৃত পত্রিকা দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তিনি। চট্টগ্রামকে আধুনিক বিশ্বের সাথে যুক্ত করার প্রয়াসে তিনি পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী।
আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের জন্ম ১৮৯৬ সালের ২০ জুলাই চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে। শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেন তিনি। কর্মজীবনের শুরু ১৯২০ সালে চট্টগ্রাম ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিতে প্রকৌশলী হিসেবে। এ সময় আকর্ষণীয় বেতনের অনেক চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নিজ জন্মস্থানে ফিরে এসেছেন এই সেবাব্রতী। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার হলেও সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ। পেশাগত জীবনে চট্টগ্রামের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি এ অঞ্চলটিকে মননশীল ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন কোহিনূর লাইব্রেরি। ১৯২৯ সালে এই লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার পরপরই তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। পরের বছর প্রতিষ্ঠা করেন কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস, যা চট্টগ্রামে ছাপাখানার জগতে বিপ্লবের সূচনা করে। সে সময় মননশীল বিভিন্ন সাহিত্য সংকলন সহ বেশ কিছু পত্রিকা এই প্রেস থেকে ছাপা হতো। ইঞ্জিনিয়ার খালেক ছিলেন অকুতোভয়, নির্ভীক দেশপ্রেমী। শোষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এই প্রেস থেকে তিনি ছাপিয়েছিলেন মাহবুবুল আলম চৌধুরী রচিত ভাষা আন্দোলনের অবিস্মরণীয় কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। এই প্রেস থেকেই ১৯৬০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তাঁর সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশিত হয় দৈনিক আজাদী। আজাদী প্রকাশের উদ্দেশ্য ছিল নিরপেক্ষ সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে আধুনিক বিশ্বের সাথে যোগ করার। এই পত্রিকা প্রকাশে তিনি যে পরম নিষ্ঠা ও অক্লান্ত শ্রম দিয়েছেন তা সাংবাদিক হিসেবে তাঁর সত্যনিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতার পরিচয় তুলে ধরে। তিনি ধর্মপ্রাণ ছিলেন, কিন্তু রক্ষণশীলতা তাঁকে আচ্ছন্ন করে নি। সামপ্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী এই ব্যক্তিত্ব মানুষকে দেখেছেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে। ১৯৬২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার প্রয়াত হন।