পুঁথি সংগ্রহ, গবেষণা ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে এক অনন্য পথিকৃৎ আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। দীর্ঘকাল তিনি বাংলাদেশের নানা অঞ্চল ঘুরে প্রায় দু হাজার পুঁথি আবিষ্কার করেন। এইসব পুথি এবং তাঁর বিভিন্ন রচনা সাহিত্য ও ইতিহাসের এক অমূল্য সম্পদ। আজ এই মনীষীর মৃত্যুবার্ষিকী।
আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের জন্ম চট্টগ্রামের সুচক্রদণ্ডীতে ১৮৭১ সালের ১১ই অক্টোবর। কর্মজীবনে তিনি শিক্ষকতা করেছেন, চট্টগ্রাম সাব–জজ আদালত, চট্টগ্রাম কমিশনার অফিস ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে কিছুকাল চাকরিও করেন। প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহের অদম্য নেশা তাঁকে টেনে নিয়ে গেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে – গ্রাম থেকে গ্রামে। প্রচণ্ড দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে পুঁথি সংগ্রহ ও সম্পাদনায় তিনি যে গভীর নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম, অসাধারণ দক্ষতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তা তাঁকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি পেয়েছেন ‘সাহিত্যবিশারদ’ উপাধি। পরবর্তীকালে অনেক সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ তাঁদের রচনা ও গবেষণায় সাহিত্যবিশারদের সংগৃহীত পুঁথি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করেছেন। পুঁথিগুলো সম্পাদনা করতে গিয়ে আবদুল করিম প্রচুর গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন, লিখেছেন গ্রন্থ। ‘বাংলা প্রাচীন পুঁথির বিবরণ’ দুই খণ্ডে রচিত তাঁর একটি মূল্যবান গ্রন্থ। তাঁর সম্পাদিত পুঁথিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শেখ ফয়জুল্লার ‘গোরক্ষ বিজয়’, আলি রাজার ‘জ্ঞান সাগর’, বাসুদেব ঘোষের ‘শ্রী গৌরাঙ্গ সন্ন্যাস’, দ্বিজরতিদেবের ‘মৃগলুব্ধ’ প্রভৃতি। সাহিত্যবিশারদের অন্যান্য রচনাসমূহের মধ্যে ‘প্রাচীন মুসলমান কবিগণ’, জীবনীগ্রন্থ ‘হজরত রহমান শহীদ’, ধাঁধার সংকলন ‘ছেলে ঠকানো ধাঁধা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এই মহান সাধক মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর পুঁথিগুলো বাঙালির জাতীয় জীবনের এক মূল্যবান সম্পদ। জীবদ্দশায় বেশ কিছু পুঁথি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগ্রহের জন্য দিয়েছেন। বাকি পুঁথি তাঁর মৃত্যুর পর রাজশাহীর বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়ামে সংরক্ষণ করা হয়।