আনোয়ারায় বেড়িবাঁধে দখলযজ্ঞ

১৩ কিলোমিটারে আড়াইশ কোটি টাকার ৬০ একর সরকারি জমি উদ্ধারে নামছে পাউবো।। চলছে মাইকিং, যেকোনো মুহূর্তে উচ্ছেদ।। অবৈধ স্থাপনার আড়ালে মাদক ব্যবসার অভিযোগ

এম.নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | সোমবার , ২৮ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারায় সাগর তীরের ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের দুইপাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রস্তুতি শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বাঁধের দুইপাশের অন্তত ৬০ একর সরকারি জমি অবৈধ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। টানেল ও পারকি সমুদ্র সৈকত ঘিরে পর্যটক বাড়তে থাকায় বেড়িবাঁধ খেকো সংঘবদ্ধ চক্রটি হোটেল, কটেজ, দোকান নির্মাণের নামে নির্বিচারে দখলযজ্ঞে মেতেছে। কোথাও মসজিদ বানিয়ে সরকারি জায়গা হাতিয়ে নেয়ার কারবারও চলছে। অবৈধ দখলে থাকা এসব জমির মূল্য আড়াইশ’ কোটি টাকার বেশি হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে আনোয়ারায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন বেড়িবাঁধের ৬০ একর জমি অবৈধভাবে দখল করে স্থায়ীঅস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে দখল করে রাখার কারণে বেড়িবাঁধের ক্ষতি ও উন্নয়ন কাজ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এসব প্রভাশালী দখলদারদের উচ্ছেদ করতে এলাকার সচেতন মহল থেকে বারবার দাবি জানানো হলেও উচ্চ মহলের তদবিরে নানা অজুহাতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ প্রক্রিয়া আটকা পড়ে যায়। গত বছরের ১ ডিসেম্বর ‘বেড়িবাঁধে দখলদারের চোখ’ শীর্ষক শিরোনামে দৈনিক আজাদীতে সংবাদ প্রকাশের পর পানি উন্নয়ন বোর্ড নড়েচড়ে বসে। দখলদারদের উচ্ছেদ নোটিশও প্রদান করে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৬ মাস ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন বেড়িবাঁধের দুই পাশে অবৈধ দখলে থাকা ৬০ একর জমি উদ্ধার করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে অবহিত করে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসনে লিখিত আবেদন করে পাউবো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ জানিয়েছেন, আনোয়ারার উপকূল রক্ষা করা বাঁধ দখল করে নির্মাণ করা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করার আগে গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলা প্রশাসন ও পাউবো যৌথ উদ্যোগে মাইকিং করে সতর্ক করে যাচ্ছে। আশা করছি জেলা প্রশাসনের অনুমতি পেলে আগামী আগস্ট মাসে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হতে পারে। এদিকে গত ১ সপ্তাহ ধরে অবৈধ স্থাপনা উদ্ধারে এলাকায় মাইকিং ও জেলা প্রশাসনের কাছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের আবেদনের খবরে অবৈধ দখলদারেরা আবারো নানান ভাবে তদবির ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের পাশাপাশি বাস্তহারাদের সঠিক তালিকা নির্ণয় করে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসনের দাবিও জানান।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের শাহাদত নগর থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে গহিরা বার আউলিয়া পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও আশেপাশের এলাকায় প্রায় ৫০থেকে ৬০ একর জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব জমিতে অবৈধ প্রভাবশালীরা বিভিন্ন স্থাপনা, বসতঘর ও দোকানপাট নির্মাণ করে রাখার কারণে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার কারণে অবৈধ দখলদারদের দখলে থাকা এসব জমি উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে পাউবো। বর্তমানে, রায়পুর ইউনিয়নের বার আউলিয়া পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের দুপাশের ৫০থেকে ৬০ একর

জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দীর্ঘ দিন ধরে দখলে নিয়ে পাকা ঘর, সেমি পাকাঘর, পর্যটন কটেজ, টিন সেট ঘর, দোকানপাটসহ বাণিজ্যিকভাবে নানান স্থাপনা তৈরি করে দখলে রাখে। এসব স্থাপনা সরিয়ে নিতে বার বার তাগাদার পর ফল হয়েছে উল্টো দখলদারের সংখ্যা কমার চেয়ে গত ১ বছরে বেড়ে আরো দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডে। বর্তমানে ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে কয়েকশত অবৈধ দখলদার রয়েছে বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসী জানায়, দখলদারদের তালিকায় রয়েছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরাও। তাদের নামেও রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। আর ওইসব স্থাপনা থেকে নৌপথে তারা মাদক ব্যবসা চালায় দেশব্যাপী।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহীদ জানান, আনোয়ারার বন্দর থেকে গহিরার বার আউলিয়া ঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ৫০৬০ একর জমি অবৈধ দখলদাররা দখল করে রাখার কারণে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কার্যক্রমসহ নানাভাবে বাঁধের উন্নয়ন কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার কারণে জেলা প্রশাসনের কাছে আমরা উচ্ছেদ আবেদন করেছি। গত এক সপ্তাহ ধরে আমরা এ ব্যাপারে মাইকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছি। আশা করছি, শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই বাঁধ রক্ষায় সর্বমহলের সহযোগিতা পাব ইনশাআল্লাহ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফ্লাইওভারের স্টিল গার্ডারের নাট বল্টু খুলে নিচ্ছে মাদকাসক্তরা
পরবর্তী নিবন্ধএক বছরে বিএনপির আয় ১৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা