আনোয়ারায় অধিক কারখানা ও প্রযুক্তি স্থানান্তর করবে চীন

চায়নিজ ইকোনমিক জোন চার চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৮ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নতুন করে আরও ১ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্য ও সেবার শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে চীন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ পণ্য ও সেবা বিনাশুল্কে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশে প্রবেশাধিকার পাবে। এছাড়া চট্টগ্রামের আনোয়ারায় নির্মিত চায়নিজ ইকোনমিক জোনে অধিক পরিমাণ চীনা কারখানা ও প্রযুক্তি স্থানান্তর করতে সহায়তা করবে তারা। গতকাল রোববার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এসব কথা জানান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া সফরের অংশ হিসাবে ঢাকায় আসেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রোববার সকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে তিনি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন। পরে তাদের উপস্থিতিতে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় দুই দেশের মধ্যে।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি রপ্তানিনির্ভর। তার জন্য একটা সুসংবাদ। সেটি হচ্ছে ৯৮ শতাংশ আইটেমে (চীন) ডিউটি ফ্রি করেছিল। বাকি যে ২ পারসেন্ট, এটা সব সময় তাই হয় যে কোনো দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, দেখা যায় এটাতে সবচেয়ে বেশি সেনসিটিভিটি ও গুরুত্ব থাকে। উনারা ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরও অতিরিক্ত ১ শতাংশে ডিউটি ফ্রি সুবিধা দেবেন।
ওই ১ শতাংশের আওতায় বাংলাদেশের কোন কোন পণ্য বা সেবা থাকতে পারে সেই ধারণা দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশের বিশেষ করে গার্মেন্টস এবং উভেন প্রডাক্টসে কিছু লিমিটেশনস ছিল, আরও বেশি কিছু প্রডাক্টে লিমিটেশনস ছিল, আমরা বিকাল নাগাদ তালিকাটা পাব। (চীনের) কমার্শিয়াল কাউন্সিলর দূতাবাসে ফিরে গেলে তালিকাটা প্রেসকে দেবেন বলেছেন। সুতরাং আপনারাও পাবেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাড়তি এই ১ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চীনা মন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ পণ্যে চীন শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিলেও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬৮০ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য চীনে রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে চীন থেকে আমদানি করেছে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
দুদেশের মধ্যে একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) যৌথ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের বিষয়ে চীনের পক্ষ থেকে বৈঠকে প্রস্তাব তোলা হয়েছে বলে জানান শাহরিয়ার আলম। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে চীনা বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশেষ করে আনোয়ারায় যে চায়নিজ ইকোনমিক জোন তৈরি হচ্ছে, সেখানে অধিক পরিমাণ চীনা কারখানা, প্রযুক্তি স্থানান্তর করতে তারা সহায়তা করবেন। তিনি বলেন, আনোয়ারায় ওই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত চালু করার জন্য বাংলাদেশের তরফ থেকে যাতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেজন্য বৈঠকে তাগাদা দিয়েছে চীনা পক্ষ।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) ক্ষেত্রে নতুন করে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নিয়েও বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব তোলা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা নতুন প্রস্তাব। শুধু উল্লেখ করেছেন। আমরা পরে এটা নিয়ে আরও আলোচনা করব।
এদিকে দুই দিনের সফর শেষে ঢাকা ছেড়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় তিনি ঢাকা থেকে মঙ্গোলিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে তাকে বিদায় জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।