আনোয়ারায় বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, ৩ পুলিশসহ আহত ১৫

ঠিকাদারি কাজ নিয়ে দ্বন্দ্ব ।। প্রাইভেটকার-বাইকে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি

আনোয়ারা প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২২ এপ্রিল, ২০২৫ at ৪:৪১ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত রবিবার রাত দেড়টার দিকে আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এসময় ৩ পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। দুইটি মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও দুইটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। বর্তমানে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এদিকে গতকাল সোমবার সকালে একপক্ষ সুজন নামের এক যুবককে দেশীয় অস্ত্রসহ পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।

স্থানীয় ও আনোয়ারা থানা সূত্রে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আনোয়ারা উপজেলার উপকূলীয় বেড়িবাঁধে ব্লক বসানোর কাজ করছে। উক্ত প্রকল্পে ইট, বালু ও কংকর সরবরাহ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয় বিএনপির দুই গ্রুপে। এ ঘটনার জের ধরে প্রতিপক্ষ গ্রুপ গত রবিবার রাত ৮টার দিকে রাঙ্গাদিয়া সিইউএফএল বাজার এলাকায় আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল গফুরের ওপর হামলা ও তার গাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠে। এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হাসান চৌধুরী ও বিএনপি নেতা আবদুল গফুরের নেতৃত্বে বিএনপির সমর্থকেরা প্রতিবাদ মিছিল বের করে। পরবর্তীতে মোটর সাইকেল শোডাউন দিয়ে তারা আনোয়ারা থানায় অভিযোগ দিতে আসেন। রাত ১ টার পর থানায় অভিযোগ দিয়ে চলে যাওয়ার পথে আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বিএনপির দুই গ্রুপে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। সংঘর্ষে ৩ পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জন আহত হয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, মো.কামাল (২৫), বিশাল চক্রবর্তী (২৭) ও মো. আবু তালেব (২৫)। আহত পুলিশ সদস্যদের আনোয়ারা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

আহত বিএনপি নেতা কর্মীরা হলেন, উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. আবদুল গফুর, মোহাম্মদ আবুল কাশেম, মোহাম্মদ আবদুল রশিদ, গিয়াস উদ্দিন, মোহাম্মদ তারেক, আবদুল মোতালেব, মোহাম্মদ ইউসুফ ,আবদুল জব্বার, মোহাম্মদ মোকতার আলী, মোহাম্মদ এমদাদ, মোহাম্মদ তারেক, মোহাম্মদ রুবেল হোসেন। দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের জানায়, ঘটনার সময় এলাকার বাইরে ছিলাম। আমি জেনেছি রবিবার রাতে সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাসান ও আব্দুল গফুর আওয়ামী সন্ত্রাসী নিয়ে অবৈধ অস্ত্রসজ্জিত হয়ে মিছিল ও শোডাউন করে। এ সময় তারা এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ঘটনার খবর পেয়ে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা তাদের প্রতিহত করেন। আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ হাসান অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার জাহিদ ইকবালের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার মালিকানাধীন ‘আলহাসান ট্রেডিং’ প্রতিষ্ঠানের ইট, বালু ও কংকর সরবরাহ করার চুক্তি হয়। এর প্রেক্ষিতে আমরা এসব সামগ্রী সরবরাহ করে আসছি। কিন্তু প্রতিপক্ষ লায়ন হেলালের অনুসারীরা এসে কাজে বাধা ও চাঁদা দাবি করে। কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে বার বার। এ ঘটনার জের ধরে গত রবিবার বিএনপি নেতা আবদুল গফুরের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় একটি প্রতিবাদ মিছিল শেষে রাতে আমরা থানায় অভিযোগ করি। পরে ফেরার পথে পরিকল্পিতভাবে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের ওপর আবারো হামলা করা হয়। এসময় বিএনপি নেতা গফুরসহ আমাদের ১২ নেতা কর্মীকে আহত হয়েছে। বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে আমাদের গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের সাপ্লাই নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে বিরোধ চলছে। এর জের ধরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। এসময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। একই সাথে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপোপ ফ্রান্সিসের চিরপ্রস্থান
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড় কেটে উঠছে বহুতল ভবন, ভাঙা শুরু