আনোয়ারায় ‘পাল্টাপাল্টিতে’ নির্বাচনের মাঠে উত্তাপ

এম. নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | শনিবার , ১৮ মে, ২০২৪ at ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

প্রচারণায় উত্তেজনা, উঠোন বৈঠকে পাল্টাপাল্টি, রাতদিন একাকার করে ভোটারের কাছে যাওয়া। এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটের স্বাদই পাচ্ছেন আনোয়ারার মানুষ। বিএনপি বা বিরোধী দলের প্রার্থী নেই, দলীয় প্রতীকও নেই। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে যে ১২ জন লড়ছেন প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। তারপরও ভোটের মাঠের এই জমজমাট চেহারা মূলত সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের দ্বৈরথের কারণে।

ভোটারদের মতে, ২০০৮ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সংসদ নির্বাচনের প্রায় ১৬ বছর পর আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচনে আরেকটি জমজমাট ভোট দেখতে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। নির্বাচনে উত্তাপের সবটুকুই যেন ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ঘিরে। নির্বাচনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের সমর্থন পাচ্ছেন মোটর সাইকেল প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী। অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকার সমর্থন পাচ্ছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী কাজী মোজাম্মেল হক, যিনি মান্নানের আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরীও এক সময় সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। ১০ বছর ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকলেও তিনি এবার ভূমিমন্ত্রীর সমর্থন পাননি। ফলে একদিকে পছন্দের যথার্থতা, অপরদিকে ক্ষোভ, অভিমান আর বঞ্চনার জবাব দিতে মরিয়া প্রার্থীদের কারণে নির্বাচন পেয়েছে অন্যমাত্রা।

স্থানীয়রা জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর পিতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও অর্থপ্রতিমন্ত্রীর পিতা আতাউর রহমান খান কায়সার দুইজনই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। তারা এই আসনে আলাদা সময়ে সংসদ নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আগামী নির্বাচনে এখানে সংসদ নির্বাচনে কে লড়বেন তা এই উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন ভোটারদের অনেকে।

এদিকে ভোটের আগে নানামুখী মেরুকরণে প্রতিদিন ঘটছে নানা ঘটনা। এক পক্ষ থেকে সিনিয়র নেতারা অপরপক্ষে ভিড়ছেন। চলছে পাল্টাপাল্টি জবাব। কয়েকদিন আগে স্থানীয় চাতরী চৌমুহনী বাজারের সমাবেশে চাতরী ইউপি চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন চৌধুরী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে কড়া ভাষায় বক্তৃতা দেন। এর জবাবে চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, আমি শোল মাছকে পরোয়া করিনি, পুঁটি মাছ তো নস্যি। হুমকি দিলে আঙুল চুষে বসে থাকব না। আবার গতকাল সামাজিক মাধ্যমে ভূমিমন্ত্রীর অনুসারীরা নানা মন্তব্যের মাধ্যমে তার এই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দেন।

আবহাওয়ার উত্তাপ আর ভোটের উত্তেজনার মধ্যে তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী গতকাল শুক্রবার আলাদা তিন মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় করেন। বর্তমান চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী ছুরত বিবি জামে মসজিদে জুমা আদায় শেষে বলেন, নির্বাচনী মাঠে সাধারণ ভোটারদের ভালবাসায় আমি মুগ্ধ। কেউ এমপি, কেউ প্রতিমন্ত্রীর প্রার্থী বলছেন নিজেদের। আমি জনগণের প্রার্থী। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, গ্রামে গ্রামে আমার প্রচারণা হয়ে গেছে। মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। গত দশ বছর আমি এলাকার মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছি। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ইনশাল্লাহ আমি জিতব।

সিইউএফএল জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে আনারস প্রতীকের প্রার্থী কাজী মোজাম্মেল বলেন, আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি বলেই ভোটারদের সম্মান বেড়েছে। ওরা মানুষকে মানুষ মনে করত না। বার বার ভোটার বিহীন নির্বাচনে জিতে ওরা মানুষকে সম্মান করা ভুলে গেছে। এবার দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে মানুষ ভোট দেবে। জনগণের শক্তি কত বড় তা ২৯ তারিখের ভোটে জবাব দেবে।

বক্তেয়ারপাড়া আকবরী মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী এম এ মান্নান জানান, নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। ইতিমধ্যে আমি উপজেলার ১১ ইউনিয়নে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করছি। প্রতিদ্বন্দ্বী একটি মহল নির্বাচনী মাঠ অশান্ত করার জন্য নানা হুমকি দিচ্ছে। এসব হুমকির তোয়াক্কা করি না। জনগণ সবসময় আমাকে ভোট দিয়েছে। আগামীতেও বিজয়ী করবে।

এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন (তালা) আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আবু জাফর (টিয়া পাখি), যুবলীগ নেতা সালাউদ্দিন (টিউব ওয়েল), ব্যবসায়ী আব্দুল মন্নান মান্না (চশমা), সন্তোষ কুমার দে (বই) ও প্রদীপ দত্ত (মাইক), মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মরিয়ম বেগম (ফুটবল), পারভিন আক্তার (কলসি), অ্যাডভোকেট চুমকি চৌধুরী (হাঁস)। গতকাল দিনভর গ্রামে গ্রামে হেটে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছেন।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবু জাফর সালেহ জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করতে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মানুষ যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন করবে। ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের আচরণবিধি ভঙের দায়ে জরিমানা ও সতর্ক নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাঁচজনকে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে পড়ল লরি
পরবর্তী নিবন্ধস্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে লায়ন সদস্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান