আনোয়ারায় এবার বড় সমাবেশের আয়োজন করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপির অনুসারীরা। উপজেলার ব্যবসায়িক প্রাণ কেন্দ্র চাতরী চৌমুহনী সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের গোল চত্বরে আজ শনিবার বিকালে ঈদ পুনর্মিলনী ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের ব্যানারে এ সমাবেশ আয়োজনের ডাক দিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে নানা অভিযোগ তুলে নিষ্ক্রিয় থাকা অংশটি। সমাবেশে অন্তত ১০ হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতির লক্ষ্যে এক সপ্তাহ ধরে জোরালো প্রচারণাও চলেছে।
আনোয়ারা কর্ণফুলী আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বিগত মন্ত্রিসভায় ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর প্রয়াত পিতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ছাড়াও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ারা–কর্ণফুলীর রাজনীতিতে বাবু পরিবারের একক নিয়ন্ত্রণ চলে আসছে। কিন্তু আনোয়ারার আরেক বর্ষীয়ান নেতা, আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়শা খান অর্থপ্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই মাস ধরে বদলে যেতে শুরু করেছে রাজনৈতিক চিত্র। এতদিন যারা সাইফুজ্জামান জাবেদ বলয়ে উপেক্ষিত–বঞ্চিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে তারা নতুন করে সংগঠিত হতে শুরু করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ টানেল চত্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। নির্মিত হয়েছে ৫ হাজার বর্গফুটের প্যান্ডেল। উপজেলার ১১ ইউনিয়নে আলাদা কর্মীসভা করে গ্রহণ করা হয়েছে প্রস্তুতি ও প্রচারণা। ইতিমধ্যে ব্যানার পোস্টারেও ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। সমাবেশের অন্যতম উদ্যোক্তা আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, এটি কোনো শোডাউন নয়, মিলনমেলা। আনোয়ারা–কর্ণফুলীর রাজনীতি হাইব্রিডদের হাতে চলে গেছে। ত্যাগী নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন উপেক্ষিত ছিল। এই সমাবেশ হবে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মিলনমেলা। ঈদ পুনর্মিলনীও হবে একই সঙ্গে। সবাইকে নিয়ে আবারও সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরতে চাই।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বগ্রহণের পর গত ২৩ মার্চ পারকি সমুদ্র সৈকতে, এর আগে ৯ মার্চ আনোয়ারা কলেজ মাঠে সমাবেশ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি। দুটি সমাবেশেই নেতাকর্মীরা আনোয়ারার রাজনীতিতে তাদের অপমান–বঞ্চনা নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন। এরপর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ আনোয়ারা উপজেলা পরিষদে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ টাকা ও টিন বিতরণ অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, ‘আগামীতে আমার এলাকায় কেউ সমাবেশ করতে চাইলে এক সপ্তাহ আগে অনুমতি নিতে হবে। ক্লিয়ার ম্যাসেজ, আমি এই আসনের এমপি। এখানে দ্বৈত শাসন চলবে না।’ মূলত তখন থেকে স্থানীয় রাজনীতিতে দুই ধারায় স্পষ্টত পাল্টাপাল্টি চলছে।
স্থানীয় রাজনীতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হকও এক সময় আখতারুজ্জামান বাবু ও সাইফুজ্জমান জাবেদের ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচিত ছিলেন। অভ্যন্তরীণ বিরোধে একসময় তাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। মোজাম্মেলও নিষ্ক্রিয় হয়ে যান রাজনীতি থেকে। একই সাথে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষস্থানীয় অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী অবমূল্যায়নের শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াসিকা আয়শা খান এমপিকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করলে আনোয়ারা আওয়ামী পরিবারের পুরনো নেতারা একাট্টা হয়ে মাঠে নামেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক ওয়াসিকা অনুসারীদের একত্রিত করতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলে দলের নেতা কর্মীরা জানান। সমাবেশ উপলক্ষে ইতিমধ্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর সাথে দলীয় নেতা কর্মীদের ছবি সম্বলিত বিপুল সংখ্যক ব্যানার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছেয়ে গেছে। সমাবেশ সফল করার আহ্বানে বিশালাকার বিলবোর্ড করেছেন উপজেলা যুবলীগ নেতা, ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, অর্থ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সুশৃংখল সুন্দর ঈদ পুনর্মিলনী, দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মিলনমেলা দেখার অপেক্ষায় আনোয়ারাবাসী। রাত পোহালেই সেই আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হবে।
সমাবেশকে ঘিরে আনোয়ারায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আনোয়ারার রাজনীতির দুই পরিচিতমুখ দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, বিএমএ নেতা প্রফেসর ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ। আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, পরিকল্পিত উন্নয়ন ও দরিদ্র্র মেহনতী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াাসিকা আয়শা খানের নেতৃত্বে এই সমাবেশ। এই জনসভাকে ঘিরে পুরো আনোয়ারাজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সাধারণ মানুষ ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা মন খুলে কথা বলার জন্যই এই সমাবেশ। আমরা অর্থ প্রতিমন্ত্রীর মাধ্যমে আনোয়ারার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন কাজ শেষ করতে চাই। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই।