আনার হত্যার হাতিয়ারের খোঁজে কলকাতা সিআইডি

১১ দিনেও ভারতের ভিসা পাননি আনারের মেয়ে

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৩ জুন, ২০২৪ at ৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা এবং হাড় থেকে মাংস আলাদা করে টুকরা করার কাজে ব্যবহৃত হাতিয়ার খুনিরা কাদের কাছ থেকে কীভাবে পেয়েছিল, তার খোঁজে নেমেছে ভারতের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কলকাতা ব্যুরো।

দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন জানাচ্ছে, আনারকে হত্যার সময় ব্যবহার করা সরঞ্জাম কলকাতা থেকেই সংগ্রহ করা হয় বলে সিআইডি জানতে পেরেছে। এই হত্যা মামলার তদন্তে কাজ করা এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই বলেছে, দেহ টুকরা করার কাজে বিশেষ করে চাপাতি ব্যবহার করা হয়েছে। খুনিরা এগুলো স্থানীয় (কলকাতা) দোকান থেকে কিনেছে। সন্দেহভাজন খুনিদের গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সেসব স্থান (দোকান) শনাক্ত করার চেষ্টা করছি, বলেন সেই কর্মকর্তা।

এদিকে ভিসা না পাওয়ায় ভারতে যেতে পারছেন না সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনসহ পরিবারের ঘনিষ্ট ব্যক্তিরা। খবর বিডিনিউজের।

কলকাতার গোয়েন্দাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তারা একজন কসাইকে গ্রেপ্তার করেছে, যিনি খুন করার পর আনারের দেহকে ৮০ টুকরা করে তাতে হলুদ মাখান। তারপর টুকরাগুলো নিউ টাউনের কাছে একটি খালে ও আরও কয়েকটি স্থানে ফেলে দেওয়া হয়। সিআইডির ওই কর্মকর্তা বলেন, নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটে পাওয়া আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি ওই ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে কয়েক কেজি মাংসের টুকরা এবং ফ্ল্যাট থেকে কিছু চুল পাওয়া গেছে। সেগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। উদ্ধার করা মাংসের টুকরার সঙ্গে এমপি আনারের সন্তানদের ডিএনএ মিলিয়ে দেখার প্রস্তুতি চলছে। এখন কলকাতায় যাওয়ার ভিসার অপেক্ষায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

আনার হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহীন ও তার অন্যান্য সহযোগীদের ধরতে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে ভারত ও বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতা থেকে ঘুরে আসার পর ডিবির আরেকটি দল নেপাল গেছে। সেখানে সন্দেহভাজন আসামি সিয়াম হোসেন আটকের খবর মিলেছে। এরপর হারুনের নেতৃত্বে শনিবার কাঠমান্ডু যায় গোয়েন্দা দলটি।

১১ দিনেও ভিসা পাননি আনারের মেয়ে : ভিসা না পাওয়ায় ভারতে যেতে পারছেন না সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনসহ পরিবারের ঘনিষ্ট ব্যক্তিরা। দুই দেশের গোয়েন্দাদের ভাষ্য মতে, কলকাতার নিউ টাউনে সঞ্জিভা গার্ডেনসের যে ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যা করা হয়েছে, তার সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কিছু মাংসের টুকরা। সেগুলো এমপি আনারের কিনা তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার রক্তের সম্পর্কীয় স্বজনদের সেখানে যাওয়া প্রয়োজন। এ উদ্দেশে ১১ দিন আগে গত ২২ মে আনারের মেয়ে ডরিন এবং সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করেন। তবে এখনও তারা ভিসা পাননি।

গতকাল রাতে আনারের বক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ বলেন, আমরা এখনও ভিসা পাইনি। প্রতিদিনই খোঁজ নিচ্ছি, আজ (রোববার) তারা আমাদের বলেছে সোমবার বিকাল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে স্পেশাল কাউন্টার থেকে আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে আসার জন্য। তারা ভিসা দিয়েছে কিনা তা এখনও জানি না। কী কারণে বিলম্ব হচ্ছে বা আদৌ ভিসা দেওয়া হবে কিনা, সে বিষয়েও আমাদের কিছু জানানো হয়নি।

রউফ বলেন, গত ২২ মে ডরিন ও তার ভিসার জন্য ঢাকায় ভারতের দূতাবাসে আবেদন করেন তারা। কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া দেহাবশেষের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেখানে ডরিনের যাওয়া প্রয়োজন। এমপি আনারের এক ভাইও আমাদের সঙ্গে কলকাতা যাবেন। তার অবশ্য আগে থেকেই ভারতের ভিসা রয়েছে। একসঙ্গে যাবেন বলে তিনিও অপেক্ষায় রয়েছেন।

গ্রেপ্তার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ঝিনাইদহ৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার চিকিৎসার কথা বলে ১১ মে কলকাতায় যাওয়ার পর ১৩ মে তাকে সঞ্জিভা গার্ডেনসে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার লাশ টুকরা টুকরা করে হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে তাতে হলুদ লাগিয়ে নিউ টাউনের পাশে একটি খালে ও আরও কয়েকটি স্থানে ফেলে দেয় খুনিরা। ভারতের গোয়েন্দাদের দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকারী সন্দেহে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা। কলকাতা গোয়েন্দাদের হাতে খুনি সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছে কসাই জিহাদ। তাকে নিয়ে লাশের খোঁজে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানোর খবর এসেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফরম পূরণের সুযোগ চেয়ে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
পরবর্তী নিবন্ধএভারেস্ট ও লোৎসে জয় উদযাপন