আনাতোল ফ্রাঁস : প্রগতিবাদী কথাসাহিত্যিক

| মঙ্গলবার , ১২ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

আনাতোল ফ্রাঁস। নোবেল বিজয়ী খ্যাতিমান ফরাসি কথাসাহিত্যিক। কবিতায়, ছোটগল্প ও উপন্যাসে, সমালোচনা সাহিত্য ও ব্যঙ্গ রচনায় তাঁর বহুমুখী প্রতিভা ও সৃষ্টি বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। বিশ শতকের প্রথম দিকে আনাতোল ফ্রাঁস ছিলেন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কথাশিল্পীদের একজন।
আনাতোল ফ্রাঁসের প্রকৃত নাম আনাতোল তিবো। জন্ম ১৮৪৪ সালের ১৬ এপ্রিল ফ্রান্সের পারিতে। পারির স্তানিস্লাভস্কি ক্যাথলিক কলেজে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেন তিনি। বইবিক্রেতার সন্তান ফ্রঁসের জীবন কেটেছে বইকে ঘিরে। তিনি ছিলেন বইপ্রেমী। তার বাবার বইয়ের দোকান লিব্রেরি ফ্রঁস ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কিত বইয়ে সমৃদ্ধ ছিল। ফলে প্রসিদ্ধ লেখক ও গবেষকেরা এখানে আনাগোনা করতেন। ফ্রঁস লেখাপড়া করেন বেসরকারি ক্যাথলিক বিদ্যালয় কোলেজ স্তানিসলাস-এ উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বাবাকে বইয়ের দোকানে সহযোগিতা করতে থাকেন। কয়েক বছর পর তিনি বাশলিন- দোফ্লোরেন এবং লেমের নামক বইয়ের দোকানে বইয়ের তালিকা প্রস্তুতকারকের চাকরি পান। ১৮৭৬ সালে তাকে ফরাসি সিনেটের গ্রন্থাগারিক নিযুক্ত করা হয়। তবে বই পড়ার আগ্রহ আর সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ তাঁর শৈশব থেকে। ফ্রাঁসের সাহিত্য জীবনের সূচনা সাংবাদিক ও কবি হিসেবে। আনাতোল ফ্রাঁস ছদ্মনামে পরিচিতি ও লেখালেখি। প্রগতিভাবাপন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে সময় ও সমাজ অন্বেষার পরিচয় ফুটে ওঠে তাঁর রচনায়। বুর্জোয়া জীবন সম্পর্কে বিরূপভাবাপন্নতা ও সমাজতন্ত্রে নিবিড় আস্থা কখনো কখনো তাঁর রচনার অনুষঙ্গ হয়েছে। তাঁর আত্মিক মূল্যবোধ ধাবিত হয়েছে ভণ্ডামি ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে এবং মানবিক অধিকার, প্রেম, প্রীতি আর ভালোবাসার উদ্বোধনে। বুর্জোয়া সমাজের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ সমালোচনা ও মানবতার মহান আদর্শে তাঁর রচনা স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। আর এই দৃষ্টিভঙ্গির জন্য মাঙ্মি গোর্কি আনাতোল ফ্রাঁসকে বিশ্বের সেরা বাস্তববাদী দার্শনিকদের অন্যতম বলে গণ্য করেছিলেন।
উদার মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, সূক্ষ্ম রসবোধ, বাস্তববাদী মনোভাব ও ব্যঙ্গ তাঁর রচনার প্রধান অনুষঙ্গ। বিদ্রুপাত্মক ও সংশয়বাদী হলেও তাকে ভাবা হতো সে সময়ের আদর্শ ফরাসি পণ্ডিত। তিনি ১৯২১ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। পুরস্কারের সমুদয় অর্থ তিনি দান করেন দুর্ভিক্ষপীড়িত রুশ জনগণের সাহায্যার্থে। আনাতোল ফ্রাঁসের সাহিত্যকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কবিতা: ‘সোনালি কবিতা’, ‘করিন্থের নববধূ’; গল্প: ‘জোকাস্টা’, ‘ক্ষুধাতুর মুমূর্ষু বেড়াল’; উপন্যাস: ‘তরু উদ্যানের দেবদাররু’, ‘নীলার আংটি’, ‘দেবতারা তৃষ্ণার্ত’; আত্মজৈবনিক রচনা: ‘আমার বন্ধুর বই’, ‘প্রস্ফুটিত জীবন’ প্রভৃতি।
১৯২৪ সালের ১২ অক্টোবর আনাতোল ফ্রাঁস মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধসিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হোক