আনন্দ, বেদনা আর শঙ্কার একটি দিন

করোনা আক্রান্ত শহীদ চিকিৎসকদের স্মরণ ও সম্মাননা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৩ মার্চ, ২০২১ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

আজ আমাদের জন্য চরম বেদনা ও শোকের দিন। কারণ মঞ্চের সামনে করোনায় শহীদ চিকিৎসকদের পরিবারের সম্মানিত সদস্যরা উপস্থিত আছেন। শহীদদের প্রতি অন্তহীন শ্রদ্ধা-ভালোবাসা এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা। একই সঙ্গে আজ আমাদের জন্য আনন্দের দিন। কারণ আজকে শহীদ চিকিৎসকদের পরিবার এবং করোনাকালে বিশেষ অবদান রাখা চিকিৎসক ও নানা শ্রেণীর ব্যক্তিদের সম্মাননা দেয়া হচ্ছে। তবে আজ শঙ্কা ও আতঙ্কের দিনও। কেননা, করোনা যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। বরং গত কিছুদিন ধরে সংক্রমণ বাড়ছে। তাই আমাদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে। গতকাল শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ আক্রান্ত শহীদ চিকিৎসকদের স্মরণসভা এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সংগঠন ইয়াং সোশ্যাল এক্টিভিজম বোর্ড ওয়াইস্যাব আয়োজিত সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান। ইয়াং সোশ্যাল এক্টিভিজম বোর্ড-ওয়াইস্যাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট ডা. হামিদ হোছাইন আজাদের সঞ্চালনায় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হক খান, চট্টগ্রাম মেডিকের কলেজের (চমেক) মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. এহসানুল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ টেস্টিং ল্যাবরেটরির ইনচার্জ ড. মোহাম্মদ আল ফোরকান, বিআইটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক ও ল্যাব ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদ, চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, ইউএসটিসির মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোহাম্মদ জাবেদ, শুলকবহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম ও আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নাছির উদ্দিন।
সভায় শহীদ চিকিৎসকদের মধ্যে ১০ পরিবারের স্বজনের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। তাছাড়া করোনাকালে বিশেষ অবদান রাখায় ২২ ব্যক্তি ও সংগঠনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাব, বিআইটিআইডি ল্যাব এবং সিভাসু ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষায় কর্মরত, করোনার রিপোর্ট প্রদানে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দায়িত্ব পালনকারী এবং করোনাকালে নানাভাবে অবদান রেখেছেন এমন ১৫৫ জন ব্যক্তি ও সংগঠনকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।
প্রধান অতিথি বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, করোনাকালে আমরা একটা যুদ্ধ পার করেছি। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, জনপ্রতিনিধি, সমাজের জনহিতৈষী ব্যক্তিরাসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা এ যুদ্ধ করেছি। তবে এখনও সে যুদ্ধ চলছে। তাই আপনাদের সকলের প্রতি বিশেষ অনুরোধ, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করুন। কোনো অবস্থাতেই মুখ থেকে মাস্ক খুলবেন না। কথা বলার সময়, বাসায় অবস্থানের সময়সহ প্রতিটি মুহূর্তে মাস্ক ব্যবহার করুন।
তিনি বলেন, করোনাকালে আমরা বিশেষ একটি মুহূর্ত পার করেছি। সীমিত জনবল, চিকিৎসা উপকরণ এবং অতি অল্প সময় নিয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে হতো। কেবল সিদ্ধান্ত নেয়া নয়, তা বাস্তবায়নও করতে হতো। একটি নোটিশের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চিকিৎসক বদলি করা হতো। প্রতিটি কাজই করতে হয়েছে খুবই দ্রুত এবং পরিকল্পিতভাবে।
সভাপতির বক্তব্যে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আজ করোনায় শহীদ চিকিৎকদের পরিবারকে সম্মাননা জানানো হয়েছে। এটি তাদের ত্যাগের বিপরীতে কিছুই না। তারা আমাদের জন্য, জাতির জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন, তার বিনিময় দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমাদের দায়িত্ব তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জ্ঞাপন করা এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা। আজকে আমরা এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সে কাজটুকু করার এতটুকু চেষ্টা করেছি। এর মাধ্যমে আমরাই সম্মানিত হব।
বিআইটিআইডির সহযোগী অধ্যাপক ও ল্যাব ইনচার্জ ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, আমি মনে করি করোনাকালটি স্বাস্থ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের জন্য একটি যুদ্ধ। গত এক বছর ধরে আমরা সেই যুদ্ধ করে আসছি। এখনও চলমান আছে। এ যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মাঠে থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শুভাশিষ তালুকদার, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি ডা. নুরুল হায়দা শামীম, চমেক হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট ডা. শুভ দাশ ও রেলওয়ে হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আনিসুল হক খান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাঁচলাইশ থেকে ট্রাভেল ব্যবসায়ী নিখোঁজ থানায় জিডি
পরবর্তী নিবন্ধবন্যহাতির আক্রমণে পাঁচ দিনে ২ মৃত্যু