গাজার উত্তরাঞ্চলের বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা নিজ নিজ বাড়িতে ফেরার অনুমতি পাচ্ছেন, ইসরায়েলের এমন বিবৃতির কথা শোনামাত্রই ক্রসিংগুলোতে দুই দিন ধরে অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে উত্তেজনা ও আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। পায়ে হেঁটে দুই ঘণ্টায় প্রায় দুই লাখ ফিলিস্তিনি উত্তর গাজায় ফিরেছে। খবর বিডিনিউজ ও বিবিসি বাংলার।
গাজা নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছে, সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর দুই ঘণ্টায় ২ লাখেরও বেশি মানুষ পায়ে হেঁটে উত্তর গাজায় প্রবেশ করেছে। স্থানীয় সময় সকাল নয়টায় চেকপয়েন্টগুলো খুলে দেয়ার পর পায়ে হেঁটে প্রবেশের জন্য অনুমতি দেয়া হয়।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েল সোমবার সকাল ৭টা থেকে গাজাবাসীদের হেঁটে উত্তরাঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে, এমন খবর পাওয়ার পর তীব্র শীত উপেক্ষা করেই স্থানীয় সময় ভোর ৫টার মধ্যে হাজার হাজার মানুষ প্রবেশপথগুলোর সামনে জড়ো হয়ে যায়। গত ১৫ মাস ধরে যে নৈরাশ্য তাদের ঘিরে রেখেছিল তা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলেন তারা।
এসময় সেখানে থাকা প্রত্যেকের মনোভাব পরিবর্তন হয়ে যায়। গত ১৫ মাসে তাদের আনন্দে এতোটা উদ্বেলিত হতে দেখা যায়নি। লোকজন এ মুহূর্তটিকে ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করছিল। তারা বলছিল, এটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য এটি একটি বিজয়ের দিন। এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গাজার উত্তরাঞ্চলে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের ফেরার ঘটনাটিকে ফিলিস্তিনিদের একটি বিজয় এবং ইসরায়েলিদের পরাজয় বলে বর্ণনা করেছে।
বিবৃতিতে তারা বলেছে, যেখান থেকে তাদের বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল সেখানে ফিলিস্তিনিদের ফেরা তাদের ভূমির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিশ্চিত করেছে এবং আরেকবার দখলদারদের ব্যর্থতা প্রমাণ করেছে। বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করে দখলদাররা তাদের আক্রমণাত্মক লক্ষ্য অর্জন করতে ও ফিলিস্তিনিদের অবিচল মনোভাব ভাঙতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা সফল হয়নি। গাজার উত্তরাঞ্চলের বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা নিজ নিজ এলাকায় ফেরার মুহূর্তটিকে স্বপ্ন সত্যি হওয়া বলে বর্ণনা করেছেন।
বহু মানুষ তাদের প্রিয়জনদের স্বাগত জানান। তারা তাদের জন্য পানি ও খাবার নিয়ে আসেন আর পরস্পর কোলাকুলি করতে থাকেন। যেসব পরিবার তাদের জিনিসপত্র গাড়িতে করে অথবা গাধার পিঠে করে নিয়ে এসেছেন তারা স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে সালাহদিন সড়ক ধরে গাজার উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করবেন। ১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় গাজা সিটিসহ গাজার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোর প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অনেক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিই এলাকায় ফিরে তাদের বাড়িটি হয়তো আর খুঁজে পাবেন না।