জগতের অর্থলোলুপ পথে ধাবিত না হয়ে শ্রেষ্ঠ আল্লাহর কামালিয়ত প্রাপ্ত এবং বিশেষত্ব প্রাপ্ত হয়ে সাধারণ মানবাত্মাকে আধ্যাত্মিক জ্যোতির আলোতে আলোকিত করার গৌরব অর্জন করে আধ্যাত্মিক সুফি, মাইজভাণ্ডারী শরাফতের একনিষ্ঠ ভক্ত, দরবারে মুসাবিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা শাহ সুফি আল সৈয়দ আহমদুল হক সিদ্দিকী (র:) এর খেলাফত প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, অসংখ্য পীর-আউলিয়া, দরবেশ, সাধু-মহাত্মার লীলা নিকেতন খ্যাত চট্টগ্রামের আধ্যাত্মিক সম্রাট মুশকিল খোসা হযরত মনছুর আলী শাহ (র:) এর বংশের গৌরবদীপ্ত উত্তরাধিকার স্বনামধন্য পুরুষ আশেকে মোস্তফা, খাদেমুল আউলিয়া হযরত আলহাজ্ব আবদুল হাকিম মাইজভাণ্ডারী (র:) ১৯২০ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। হযরত মনছুর আলী শাহ (র:) এর নামে প্রতিষ্ঠিত মনছুরাবাদের স্থায়ী বাসিন্দা আলহাজ্ব আবদুল জলিল কন্ট্রাক্টর ও মরহুমা আম্বিয়া খাতুনের ঔরসে এই আধ্যাত্মিক মহাপুরুষের আবির্ভাব হয়। তাঁর স্ত্রী ছিলেন দেওয়ানহাটের সম্ভ্রান্ত পরিবার আলহাজ্ব ছমদু মিয়া ও মরহুমা আফিয়া খাতুনের জ্যেষ্ঠ কন্যা মরহুমা আলহাজ্ব মোস্তফা খাতুন।
সমাজ হিতৈষী ও মানব প্রেমিক হযরত আলহাজ্ব আবদুল হাকিম মাইভাণ্ডারী (র:) বাল্যকাল থেকে আশেকে আউলিয়া ছিলেন। তাই যৌবনে পদার্পণের সাথে সাথে দরবারে মুসাবিয়ার খাদেম হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ফানায়ে শেখ হিসেবে মুর্শিদের প্রতি এই একনিষ্ঠ ভক্তি তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
চরন সেবা শ্রদ্ধা হলে, থাকিও ধৈর্য্যতার বলে
প্রিয়ার চরণ দেখিবারে, নয়ন তুলে থাকিও না
মৌলানা আবদুল হাদি কাঞ্চনপুরী (র:) এর লিখিত উপরোক্ত চরণ দুটি তাঁর জীবনের সাথে মিশে গিয়েছে। তাই তিনি মুর্শিদের খুবই প্রিয়ভাজন ছিলেন এবং খেলাফত প্রাপ্ত হন। মুর্শিদের সন্তুষ্টির প্রতি তাঁর ত্যাগ এত গভীর ছিল যে, নিজের স্ত্রীর স্বর্ণের বালা বিক্রি করে দরবারে জীব নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
তিনি শুধু আধ্যাত্মিক পুরুষ ছিলেন না। তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারী হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমৃত্যু সভাপতিও ছিলেন। তিনি অকাতরে মানুষের মাঝে দান করতেন। মানবপ্রেমের এই দিশারী জাগতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকলেও তাঁর অন্তরদৃষ্টি সবসময় মুর্শিদের প্রতি নিমগ্ন থাকতো।
তিনি জীবনে আর্থিক সফলতা না পেলেও তাঁর মুর্শিদের মুখ থেকে নিঃসৃত বাণী :“তোমার সন্তানদের দৌলত আসমান ছুঁবে”।
এই অমরবাণী তাঁর সন্তানদের জীবনে আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অংগনে অসাধারণ সাফল্য বয়ে এনেছে। তাইতো পিতার পদাংক অনুসরণ করে তাঁরই সন্তানেরা আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে তাঁর দানের হাত প্রসারিত করে রমজানে গরীব দুস্থদের সেহরী ও ইফতার সামগ্রী বিতরণ, ঈদ ও পূজা-পার্বণে দরিদ্র ও বিধবাদের মাঝে বস্ত্র সামগ্রী বিতরণ, বছরের প্রারম্ভে গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে নতুন পুস্তক বিতরণ, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ওষুধ তাৎক্ষণিক খাদ্য-বস্ত্র, আর্থিক সাহায্য ও বাসস্থান সামগ্রী প্রদান, গরীব শিক্ষার্থী, বিয়ে-শাদী, অসুখে-বিসুখে, দাফনে-কাফনে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির, স্কুল, কলেজে অকাতরে দান, উষ্ণতায় ও দুষ্প্রাপ্যতায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, প্রবীণ মহিলাদের আবাসন ব্যবস্থা ও দুস্থ বয়স্ক চিকিৎসা ভাতা প্রদান ইত্যাদি অব্যাহত রেখেছেন।
সন্তানদের প্রতি বাবার অকৃত্রিম স্নেহ ও দোয়ার বদলৌতে তাঁরই সুযোগ্য সন্তান আলহাজ্ব এম মনজুর আলম মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সফল মেয়র হিসেবে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। তাঁরই সুযোগ্য দৌহিত্র আলহাজ্ব দিদারুল আলম চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসন থেকে পর পর দুবার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশের অগ্রযাত্রায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন।
এই মহান পুরুষ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব খাদেমুল আউলিয়া, আশেকে মোস্তফা হযরত আলহাজ্ব আবদুল হাকিম মাইজভাণ্ডারী (র:) ১৯৯৬ সালের ২৫ জানুয়ারি, ৪ ঠা রমজান ১৪১৬ হিজরী, ১২ই মাঘ ১৪০১ বঙ্গাব্দ পৃথিবীর মায়াত্যাগ করে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন।
লেখক : অধ্যক্ষ, উত্তর কাট্টলী আলহাজ্ব মোস্তফা-হাকিম কলেজ