আদালতের রায়ে বন্ধ হল বান্দরবানের মেঘলা ‘মিনি চিড়িয়াখানা’

বন্যপ্রাণীগুলো নেওয়া হচ্ছে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে

বান্দরবান প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৫ at ১০:১৬ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানে জেলা প্রশাসন পরিচালিত মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে অবস্থিত ‘মিনি চিড়িয়াখানা’ আদালতের নির্দেশে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। চিড়িয়াখানার বন্য প্রাণীগুলোকে ডুলহাজারা সাফারি পার্কে স্থানান্তর করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে বান্দরবানের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এ.এস.এম এমরানের আদালত এ রায় প্রদান করেন।

রায়ের পর গতকাল চিড়িয়াখানায় থাকা সব বন্যপ্রাণী কক্সবাজারের ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়ার পর দ্রুত কার্যকর করার জন্য ২টি ভাল্লুককে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে ডুলহাজারা সাফারি পার্কে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

চিড়িয়াখানাটিতে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই হাতি, ভাল্লুক, সজারু, হরিণ, বনমোরগ, বানর, সাপসহ বহু বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীকে খাঁচায় আটকে রেখে প্রদর্শন করা হচ্ছিল। প্রাণীদের প্রতি অমানবিক আচরণ, অপর্যাপ্ত খাবার ও চিকিৎসার অভাব থাকায় এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচনা চলছিল। সমপ্রতি একটি ভিডিওতে একটি ভাল্লুককে গুরুতর আহত ও সংক্রমিত অবস্থায় দেখা গেলে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়।

বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা নুর জাহান বেগম জানান, আমরা সরেজমিনে তদন্ত করে দেখিএই চিড়িয়াখানার কোনো বৈধ অনুমোদন নেই। প্রাণীগুলোকে আয়নাঘরের মতো অন্ধকার, সংকীর্ণ খাঁচায় রাখা হচ্ছিল। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ (সংশোধিত ২০১৭) অনুযায়ী, এ ধরনের কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ডুলহাজারা সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি অফিসার ডা. হাতেম সাজ্জাদ মো. জুলকারনাইন জানান, ভাল্লুকটির একটি পা ফাঙ্গাস সংক্রমণে মারাত্মকভাবে ফুলে গেছে। এটি একটি সংবেদনশীল অবস্থা এবং সময়মতো চিকিৎসা না পেলে প্রাণীটি মারা যেতে পারে।

তিনি আরও জানান, প্রাণীগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা এবং ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে ২টি অসুস্থ ভাল্লুককে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করে স্থানান্তর করা হয়, পরবর্তী পর্যায়ে ১৩টি মায়া হরিণকেও পার্কে নিয়ে যাওয়া হবে।

মেঘলা এলাকার তঞ্চঙ্গ্যা পাড়ার বাসিন্দা রিপন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ৬ বছর আগেও এখানে বহু প্রজাতির সাপ, বানর, অজগর, বনরুইসহ অনেক বন্যপ্রাণী ছিল। খাঁচাগুলো এতটাই ছোট ছিল যে, গরমের দিনে প্রাণীগুলো কষ্ট পেতে দেখেছি। খাবারও ঠিকমতো দিত না।

সেভ দ্য নেচার অব বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান এ.এন.এম. মোয়াজ্জেম রিয়াদ বলেন, এই চিড়িয়াখানা বন্ধ এবং প্রাণীগুলোর মুক্তি আমাদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল। আমরা অনেক দিন ধরে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। গীরিছায়া, রাঙামাটি বোটানিক্যাল গার্ডেন, গজনী অবকাশ কেন্দ্রসহ আরও কিছু স্থানে বন্যপ্রাণী বন্দির অভিযোগ রয়েছে। অচিরেই এসব ক্ষেত্রেও আমরা মাঠে নামব। এই রায় শুধু বান্দরবানের মেঘলা চিড়িয়াখানার জন্য নয়, বরং সারাদেশে প্রাণী অধিকার রক্ষায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন মোয়াজ্জেম রিয়াদ। তিনি আরো বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতে এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড রোধে সহায়ক হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে বাইক থেকে নদীতে পড়ে যুবক নিখোঁজ
পরবর্তী নিবন্ধমাতব্বর ঘাটে যাত্রীভাড়া ২০ টাকা! চসিকের সিদ্ধান্তে যাত্রীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া