চোখের পাওয়ার কমে গেছে তাও এখনো অনেককিছু দেখি, কেবল নিজের দোষ ছাড়া। আমার একটা ভুলও আমার চক্ষু দেখতে পায় না অথচ অন্যের ফুলগুলোতেও ভুল দেখে। আমি, আমি দরবেশ! পাপ করি না, ভুল করি না কিন্তু বাকিরা সবাই ভুল বলে, ভুল করে। তাদের সব বাঁকা। সবার ভুল ধরে আমি ফুল সাজি! রাতের রজনীগন্ধা!
বিড়ালের মতো খেতে পারি কিন্তু আমার চোখের ক্ষুধা কুকুরের মত। সব হজম করে ফেলবো। কেউ ভাগ বসাতে এলে ঘেউ ঘেউ করে তাড়িয়ে দেই। একবারও খাবারে খোঁজ পেয়ে কাকের মত সবাইকে ডাকিনি। আমার লোভে সব নিজের করতে মনে চায়। কোনটা কার, কোথায় কার কতটুকুন অধিকার–সেসব এখন বিবেচনার সময় নাই। এখন সময় আমার পক্ষে সাক্ষী দেয়! মলের মধ্যে পয়সা পেলেও জিহ্বা দিয়ে চেটে খাই। ভবিষ্যত দেখি না!
আমি নেতা! উচ্চকন্ঠে সবার আব্দার দমিয়ে দিতে পারি। আমার স্বার্থে আঘাত পড়লে চক্ষু উল্টে যে কাউকে মুহুর্তের মধ্যে দূরে ঠেলতে পারি। সব কৃতজ্ঞতা কৃতঘ্নতায় বদলে দিতেও পারি। করার ক্ষমতা নাই তবে ধরার ক্ষমতা আছে। আমার ভুল যারা ধরে তাদেরকে বকে ভুলিয়ে দেই। ভয়ের তরবারিতে ছিন্নভিন্ন করি ন্যায়েদের মুকুট। আমি যা বুঝি তামাম জগতের কেউ তা বোঝে না– এই বোধ আমাকে সর্বদা উৎফুল্ল রাখে। সব গাধার মধ্যে আমি শুয়োর হয়ে ঘুরি! ভাবী, হাতি হয়ে বেঁচে থাকার যে স্বপ্ন তা আমায় অমর করবে নিশ্চয়ই।
আমরা যদি নিজের ভুলগুলো ধরতে পারতাম এবং শোধরাতাম, লোভ দমাতে পারতাম এবং সবার স্বার্থ ভাবতাম, ভালোবেসে মানুষকে আপন করতাম এবং সৎপরামর্শ দিতাম–তবে যার যার জায়গায় সোনার মানুষ হতাম। আমরা জগতের সবার বিচার করতে পারি কিন্তু নিজেরও যে কিছু বিচার আছে, আমিও যে ভুল করতে পারি–সেই বোধ আমার মধ্যে জাগে না। যাদের বিবেকই তাদের বিচারক হয় তারা অনুসরণীয়–অনুকরণীয় আদর্শের ধারক হয়। আমি সেটা হতেও চাইনি কিংবা হতেও পারিনি। আফসোসও হয় না! আমি সম্পদ ও স্বার্থে লোভাতুর।
অন্যের দোষ ধরা আর নিজেকে সাধু ভাবা– মনুষ্যত্বের দৌড় থেকে আমাদের ছিটকে দিচ্ছে। জীবনের প্রতি লোভ, ক্ষমতার লোভ এবং অর্থের লোভ– আমাদেরকে রোজকার দানবে পরিণত করছে। সবাইকে আমার কাছে নত দেখতে চাই অথচ আমারও যে নত হওয়া প্রয়োজন– সেটা কখনোই ভাবি না। দম্ভ চূর্ণ না হলে পতন অবশ্যম্ভাবী হবে। ক্ষমতা ফুরিয়ে গেলে জীবন পোড়াতে শুরু করবে। কাজেই সময় থাকতে শিক্ষা হওয়া জরুরি। অতীতের ইতিহাস লাঞ্ছনা–অবমাননার অল গল্প বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে নাই। যেনো বদলাই। মানুষের পক্ষে নিজেকে পাল্টাই।