আটক গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী

| সোমবার , ৬ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে গাজার দিকে যাওয়ার পথে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক একাধিক আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মী ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন। খবর বিডিনিউজের।

শনিবার ইসরায়েল থেকে ফেরত পাঠানো ১৩৭ জন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে নেমেছে, এর মধ্যে ৩৬ তুর্কি নাগরিক ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, মালয়েশিয়া, কুয়েত, সুইজারল্যান্ড, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, জর্ডান ও অন্যান্য দেশের নাগরিকরা রয়েছেন বলে তুরস্কের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

গাজা সুমুদ ফ্লোটিলা অভিযানে অংশ নেওয়া তুর্কি সাংবাদিক এরসিন সেলিক স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী যে গ্রেটা থুনবার্গের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে তিনি তার সাক্ষী। কী করে থুনবার্গকে মাটির ওপর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খেতে বাধ্য করা হয় তিনি সে বর্ণনাও দিয়েছেন বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে নামার পর মালয়েশিয়ার অধিকারকর্মী হাজওয়ানি হেলমি এবং মার্কিনি উইন্ডফিল্ড বিভারও প্রায় একই ধরনের অভিযোগ করেন। তারা বলেন, থুনবার্গকে ধাক্কা দিয়ে জোর করে তার গায়ে ইসরায়েলি পতাকা জড়িয়ে দেওয়া হয়। এটা ছিল ভয়াবহ।

তারা আমাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করেছে, বলেছেন হেলমি। ইসরায়েলি বাহিনী আটকদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধও দেয়নি বলে তিনি জানান। ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী কট্টরডানপন্থি ইতামার বেনগভির একটি কক্ষে প্রবেশের পর সেখানে থুনবার্গকে ধাক্কা দিয়ে ঢোকানো হয় জানিয়ে বিভার বলেন, থুনবার্গের সঙ্গে খুবই বাজে রকম দুর্ব্যবহার’ করা হয়েছে এবং তাকে প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিকারকর্মী থুনবার্গের সঙ্গে বাজে আচরণের অভিযোগ করেছেন ফ্লোটিলায় থাকা ইতালিয়ান সাংবাদিক লরেঞ্জো আগোস্তিনোও। গ্রেটা থুনবার্গ, সাহসী এক নারী, মাত্র ২২ বছর বয়স। তাকে অপমান করা হয়েছে, ইসরায়েলি পতাকা দিয়ে মোড়ানো হয়েছে এবং ট্রফির মতো প্রদর্শন করা হয়েছে, আনাদোলুকে এমনটাই বলেছেন তিনি।

আটক অন্যদের সঙ্গেও বাজে ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তুর্কি টিভি উপস্থাপক ইকবাল গুরপিনার বলেছেন, আমাদের সঙ্গে কুকুরের মতো আচরণ করেছে তারা। তিনদিন আমাদের ক্ষুধার্ত ফেলে রেখেছিল। আমাদের পানি দেয়নি, টয়লেট থেকে পানি খেতে হয়েছে আমাদের। সেসময় ছিল খুব গরম, আমরা সেদ্ধ হচ্ছিলাম। এ দুরাবস্থা গাজার পরিস্থিতি ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। ইসরায়েলি বাহিনী যেখানে আটকে রেখেছিল সেখানকার দেয়ালে রক্তের দাগ এবং আগে আটকদের লেখা বার্তা দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন আয়সিন কানটোগলু। আমরা দেখেছি, মায়েরা দেয়ালে তাদের সন্তানদের নাম লিখে রেখেছেন।

ফিলিস্তিনিরা কীসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, আমরা তার খানিকটা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, বলেছেন এ তুর্কি অধিকারকর্মী। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেছেন, তার দেশের ২৬ নাগরিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে, আরও ১৫ জন ইসরায়েলের হেফাজতে রয়েছে। নৌকাগুলোতে থাকা লোকজন আইন মেনেই সব করেছে, যারা তাদেরকে গাজায় পৌঁছাতে দেয়নি তারাই বেআইনি কাজ করেছে, সাংবাদিকদের বলেছেন ইতালির সাংসদ আরতুরো স্কোটো, তিনি নিজেও ফ্লোটিলায় ছিলেন। আইনি সেবাদাতা ইসরায়েলি গোষ্ঠী আদালাহ বলছে, আটকদের হাত বেঁধে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটু মুড়িয়ে বসে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তাদেরকে ওষুধ এবং আইনজীবীদের সঙ্গে কথাও বলতে দেওয়া হয়নি। ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব অভিযোগকে পুরোপুরি মিথ্যা আখ্যা দিয়ে বলেছে, আটক সবার সঙ্গে আইন অনুযায়ীই আচরণ করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউক্রেনকে টমাহক দিলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সম্পর্ক ধ্বংস হবে : পুতিন
পরবর্তী নিবন্ধআরব আমিরাত গেল বাংলাদেশ অ-১৭ নারী দল