আজীবন সম্মাননা পেলেন এম এ মালেক

এবিএম মূসা-সেতারা মূসা ফাউন্ডেশন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতায় অনবদ্য অবদান রাখার জন্য একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেককে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (আজীবন সম্মাননা) প্রদান করলো সাংবাদিক এবিএম মূসাসেতারা মূসা ফাউন্ডেশন। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এম এ মালেকের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন।

দৈনিক আজকের পত্রিকা সম্পাদক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ফেনী১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, প্রশিক্ষক ও সাংবাদিক কুররাতুলআইনতাহমিনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীম রেজা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুল্লাহ লিপন, নিউজ ২৪ এর প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু, ব্যারিস্টার আফতাব উদ্দীন, দৈনিক বাংলার চট্টগ্রামের ব্যুরো চিফ ডেইজি মউদুদ, মরহুম সাংবাদিক এবিএম মূসার তিন কন্যা মরিয়ম সুলতানা মূসা রুমা, পারভীন সুলতানা মূসা ঝুমা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সিনেট মেম্বার ড. শারমিন মূসা বক্তব্য রাখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মৃদুলা সমাদ্দারের গাওয়া নজরুল সংগীতের মধ্য দিয়ে সূচনা করা হয় অনুষ্ঠানের।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকতা এখন আর সাংবাদিকতার জায়গাতে নেই। আওয়ামী লীগ সাংবাদিকতা কিংবা বিএনপি সাংবাদিকতা হয়ে গেছে। দলীয় সাংবাদিকতার এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে বেশিদিন সময় লাগবে না। কিছু বিষয়কে রাজনীতির বাইরে রাখতে হয় বলে মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, সাংবাদিকতাও তেমন একটি বিষয়। যেটিকে রাজনীতিকীকরণ করার প্রবণতা সমাজের জন্য অশনি সংকেত। এই প্রবণতা রোধ করে সুষ্ঠু সাংবাদিকতার চর্চা নিশ্চিত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে বলেও বক্তারা মন্তব্য করেন।

এবিএম মূসা সাহসী সাংবাদিক ছিলেন বলে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, সমাজের সকল অন্যায় অবিচার অনিয়ম দুর্নীতি এবং শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে ছিল তাঁর তেজ এবং রাগ। সাংবাদিকতায় এই তেজ ফিরে ফিরে আসলেই কেবল একটি সুস্থ এবং সবার বাসযোগ্য সমাজ গড়ে উঠবে।

সম্মাননা গ্রহণ করে দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, সাংবাদিকতায় পদে পদে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়। একজন সাংবাদিকের এ সব বাধা পার হয়ে যাওয়ার মানসিকতা থাকতে হয়, সাহস থাকতে হয়। এ বি এম মূসার সেই সাহস ছিল। তিনি অকপটে সত্যকে তুলে ধরেছেন। আদর্শচ্যুত হননি। সাংবাদিকতায় সত্য কথা বলতে অনেকেই ভয় পান, কিন্তু তিনি ভয় পাননি। কোনো অবস্থাতেই মানবিক মূল্যবোধকে বিসর্জন দেননি। এ কারণেই তিনি আমাদের কাছে অনুকরণীয়, বরণীয়। তাঁর নামাঙ্কিত পুরস্কার পেয়ে আমি সত্যিই গৌরব বোধ করছি।

এম এ মালেক বলেন, পাকিস্তান আমলে সাংবাদিকদের জন্য অনেক বেড়াজাল তৈরি করা হয়েছিল। ছিল শাসকের রক্তচক্ষু। সাংবাদিকদের পেশাগত কাজ সম্পর্কে অনেক ফরমান জারি করা হতো। একটু এদিক ওদিক হলেই মামলা, জেলজুলুম। কিন্তু এসব বেড়াজালের ফাঁক ফোকর দিয়েও এ বি এম মূসা সত্য কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর সেই প্রচেষ্টা সাংবাদিকতার ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

এম এ মালেক বলেন, যে সাংবাদিকতা মানুষের মধ্যে শুভবোধের সঞ্চার করে, যা বিবেককে জাগ্রত করে, সত্যকে নির্মোহভাবে উপস্থাপিত করেএ বি এম মূসা সে পথেই হেঁটেছেন। দেশের এই কৃতী মানুষের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই।

ফেনী১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম বলেন, সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা কিংবা ব্যুরোক্র্যাটের স্বতন্ত্র অবস্থান থাকা জাতির কল্যাণের জন্যই জরুরি। সাংবাদিকতা যদি দলীয় হয়ে যায় তাহলে মানুষের কল্যাণে তাদের যে ভূমিকা রাখবার কথা তা রাখতে পারেন না। এটি যে কোনো জাতির দুর্ভোগের বড় কারণ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম এমপি বলেন, সংবাদকে পণ্য করা হয়েছে। এটা মার্কেট ইকোনমির খারাপ দিক। এটা হওয়া উচিত নয়। দেশের উন্নয়ন এবং অগ্রগতি নিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। আমরা মাত্র বছর কয়েকের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবো। কিন্তু তখন এই উন্নয়ন আমাদের রাজনীতিতে আর কোনো আবেদন তৈরি করবে না বলেও আলাউদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী নাসিম এমপি মন্তব্য করেন।

আজীবন সম্মাননা পাওয়া এম এ মালেককে ছাত্রজীবন থেকে কাছ থেকে দেখা এবং শ্রদ্ধা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এম এ মালেক একজন আদর্শবান, নিবেদিতপ্রাণ এবং সৎ সাংবাদিক। সাংবাদিকতাকে তিনি মানব কল্যাণের হাতিয়ারে পরিণত করেছেন।

নিজের আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম মূসার জীবনের অনন্য সব ভূমিকার কথা স্মরণ করে আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম এমপি বলেন, জীবনভর তিনি দেশের মাটি ও মানুষের কথা বলে গেছেন। মানুষের জন্য কাজ করে নন্দিত হয়েছেন। তিনি মরহুম এবিএম মূসা এবং সেতারা মূসার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

গণমাধ্যমে জেন্ডার পরিসর ঃ নারীর নির্মিত এবং নারীর অংশগ্রহণ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতায় অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, প্রিন্ট মিডিয়া অনেক বেশি পুরুষতান্ত্রিক এবং নারীর ইমেজ নির্মাণে প্রিন্ট মিডিয়া অনেক সূক্ষ্ম কৌশলীও বটে। এসব গল্প আসলে পুরুষের গল্প, তাদের দক্ষতা, সংগ্রাম, বেদনা আর সাহসের গল্প। নারীর ন্যারেটিভ গৌণ অথবা লুকানো। নারী বিষয়ক আধেয়র এই প্রবণতা কমেনি বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা বেড়েছে। তিনি বলেন, সামপ্রতিক সময়ে সংবাদপত্রগুলো মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকতার দিকে ঝুঁকেছে। সেখানে নারীর প্রতি সহিংসতার ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়েছে পাঠকের মন্তব্য ঘরে। সাথে যুক্ত হয়েছে অনলাইন পোর্টাল নামের বিভীষিকাময় ক্লিকবেইট সাংবাদিকতা, যা অনেক ক্ষেত্রেই নারীকে ধরাশায়ী করার উপায় ও উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় উল্লেখযোগ্যহারে সীমিত বলেও ড. কাবেরী গায়েন মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক ড. গোলাম রহমান বলেন, শুধু উপস্থিতিই নয়, এই অনুষ্ঠানে সবার মানসিকভাবে যে সংযুক্তি, সেটাই এই অনুষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। যারা কথা বলেছেন, প্রত্যেকেই যার যার জায়গা থেকে চমৎকার বলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন থেকে এ বি এম মূসাকে সংবর্ধনা দিয়েছি। অনেকভাবেই তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। তিনি যতটা ভালো বলতেন, তাঁর থেকে ভালো লিখতেন। ওনার লেখাগুলো অসাধারণ ছিল। কলামের লেখাগুলো মুগ্ধ হয়ে পড়তাম। উনি শুধু গণতান্ত্রিক মনমানসিকতার ছিলেন তা নয়, তিনি রাজনৈতিক জায়গায়ও ছিলেন পারদর্শী। আমরা আজকের কথাগুলো যদি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারি জাতি ভালো কিছু পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমরা চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করবো : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধরোজায় অফিস ৯টা থেকে সাড়ে ৩টা