জীবনের পরিচয়ের এক নুতন শাখা উদ্বোধন করে দিয়েছে ‘আজাদী’ ভালোবেসে কাছে ডেকে নিয়ে। যুদ্ধের পরপরই মিউনিসিপ্যাল স্কুল মাঠে একটি সাহিত্য সম্মেলন হয়। সেখানে আমি আমার কবিতা পাঠ করার একটু জায়গা করিয়ে দেয় সবুজ সাহিত্য আসর থেকে সম্ভবত সুখময় চক্রবর্তী। সেদিন থেকে আমি আর একটু আলোর ছোঁয়া পেলাম। আমি তখন হাই স্কুল পড়ুয়া।
আজাদীর শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত আমায় ডেকে বললেন, লেখা পৌঁছাবে এই ঠিকানায়। আমি টিনের চালের আজাদীর প্রথম ঘরে গিয়েছি। দেখেছি প্রতিষ্ঠাতা কর্ণধার। ঐ থেকে পত্রিকার সাথে একটু আধটু যোগাযোগ । আজাদীর সাংবাদিক দাদু মণি শ্রদ্ধেয় অরুণ দাশগুপ্ত, শ্রদ্ধেয় ওবায়দুল হক তারা দুজনেই অত্যধিক সঙ্গীত পিয়াসী। প্রত্যেকদিন আর্য্য সঙ্গীতে সময়ের ফাঁকে উস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়ার ক্লাসে বেঞ্চে গিয়ে বসে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ক্লাশ শুনতে যেতেন। কখনো কখনো নিজেরাও আমাদের সাথে সুর তালের বিভোরে পড়ে যেতেন। সেই থেকে আজাদীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠলো। লেখালেখির ধারাটি আরও আগে শুরু। লেখা দিতে বললেন শুরু পদ্য দিয়ে। গদ্য লেখার প্রেরণাও জাগালো শ্রদ্ধেয় দাদুমণি ৭৩–৭৪ সালে। এলো আজাদীর আগামীদের আসরের প্রতিযোগিতা। সম্পৃক্ত হয়ে প্রথম পুরস্কার পেয়ে গেলাম। হাতে তুলে দিল আজাদীর কর্ণধার অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। তিনি চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ছিলেন। চট্টগ্রাম কলেজের প্যারেড মাঠে প্রথম প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে স্মৃতিচারণে তিনি আমায় আবার অভিবাদন জানালেন। পরিচয় দিলেন আমার আজাদীর একজন লেখক। তারপর গদ্য লেখায় এতো বেশি প্রেরণা উৎসাহ উদ্দীপনা পেলাম একসময় মহিলা মাহফিল পরে নারীর পাতায় প্রতি পাতায় লেখা উঠেছে আর খুশিতে মন ভরেছে। আজাদীই তো আমায় লেখক বানালেন। না হয় খাতার পাতায় পাতায় লেখারা ধুঁকে ধুঁকে অসাড় হতো। আমি চির কৃতজ্ঞ আজাদীর সাংবাদিক শ্রদ্ধেয় অরুণ দাশগুপ্ত, শ্রদ্ধেয় ওবায়দুল হক, শ্রদ্ধেয় বিমলেন্দু বড়ুয়া, শ্রদ্ধেয় সিদ্দিক আহমেদ লেখা না পেলে পেলাম না কেন এই জোর করে আদায়ের আন্তরিকতা আমি অর্জন করেছি। আমায় লিখতে হবে এই জোর তাগিদ যুগিয়েছে সাথে যুক্ত হয়েছেন কবি সাংবাদিক রাশেদ রউফ। আজ আজাদী ও আমি একই পরিবারের সদস্য। আমায় লেখক করে জন্ম দিয়েছেন আজাদী। আমি ধন্য, আমি কৃতজ্ঞ, আমি ঋণী।
‘আজাদী’ তোমার দেহে
আমি বর্ণে বর্ণে সাজিয়েছি শব্দ।
শব্দ যুক্ত করে
গড়েছি কথামালা।
কথামালায় রঙ মেখে লিখেছি,
সমাজ, সভ্যতার কথা।
ভালোবাসার গল্পে,
প্রতিবাদের ঝড়ে,
মানুষের মনের স্থিতধীএঁকেছি।
আদর অনাদর অধিকারের
ভিত্তি রচনা করতে চেয়েছি।
জনে জনে দ্বারে দ্বারে
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়েছি,
তোমার ভালবাসায়
মনে সাতরঙ পেয়েছি।
তোমার গায়ে হাল চষে যেমন
চট্টলা সোনার ফসলে ভরেছে,
শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষায়
পূর্ণতায় ভরে উঠেছে।
পত্রিকা জনমতের বাহন। জনগণের সুখ দুঃখ আপদ বিপদে পাশে থেকে সুরক্ষার জানান দেয়। যুদ্ধ বিগ্রহ দুর্যোগে সতর্কতার বার্তা পৌঁছায়। সমাজ পরিবর্তনে সাম্য শান্তির কাহিনী শোনায়। তাই একটি পত্রিকা পরম বন্ধু। সকাল থেকে প্রতি ঘর অপেক্ষায় থাকে শুভ বার্তা শোনার জন্য। পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে যাওয়া এক অনাবিল শান্তি। পাকিস্তান সময়কালিন থেকে এই আবহে আজও আছি আরো অনেকে। পত্রিকায় আদি অন্ত দেশ বিদেশের সব খবর জেনে আশ্বস্ত হওয়া যায়।আর আজাদী হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রথম পত্রিকা তার অবদান অনেক। একুশের প্রথম কবিতার সাক্ষী আজাদী।
কত অচেনারে চেনালে তুমি,
কত অজানারে জানালে।
তোমার মাঝে রচিত বর্তমান ভবিষ্যৎ,
তুমি ভালোবাসায় শোধালে।
এই আজাদীর ভালোবাসায়, হাতে হাত রেখে, চট্টগ্রামে কত কত শিল্পী কবির জন্ম হয়েছে। জন্ম হয়েছে প্রবন্ধকার গল্পকার ছড়াকার কবি, সাহিত্যিক কথা সাহিত্যিক, রম্য সাহিত্যিক, শিশুসাহিত্যিক, ভ্রমণ সাহিত্যিক, প্রচ্ছদশিল্পী, চিত্র শিল্পী, এই পাটাতনে আনন্দ উচ্ছ্বাসে উৎসাহে জায়গা পেয়ে নিজস্ব গুণবৃক্ষ ফুল ও ফলে তারা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। আজ চট্টগ্রামে বিখ্যাত লেখক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, রাজনীতিবিদ মনস্তত্ত্ববিদ ভাষাবিজ্ঞানী তারা প্রত্যেকেই আজাদীর বুকে নিজেদের চিন্তার প্রতিচ্ছবি এঁকে মানুষকে অনুরণিত করেছেন বিখ্যাত হওয়ার স্বপ্ন বুনেছেন দৃঢ়তার শক্তি দেখিয়েছেন। চট্টগ্রাম শোভায় সাহিত্য সংস্কৃতি শিক্ষায় সমৃদ্ধি লাভ করেছে। এই লেখকদের সাহিত্য আড্ডা ও সম্মিলিত হওয়ার রাখার প্রেক্ষিতে দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক শিশুসাহিত্যিক রাশেদ রউফ সৃষ্টি করলেন অনেক কিছু। এতে জাতীয় আন্তর্জাতিক লেখকদের সাথে সম্মীলন সমাবেশ হয় বছরে কোনো না কোনো সময়। চট্টগ্রাম বীর সাহসী। আন্দোলন শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম। স্বাধীনতার সূতিকাগার চট্টগ্রাম। পর্যটন শিল্পে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম। আজ নানা পত্রিকার জন্ম হলেও এই জীবন্তিকা ফুটিয়ে তোলার দ্বারে দ্বারে সত্যের সন্ধানে তার ব্যক্ততার প্রচার প্রসারের শেকড় সন্ধানী প্রথম আজাদী।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, সীতাকুণ্ড লতিফা সিদ্দিকী ডিগ্রি কলেজ।