আজকের ছবিটি ঐতিহাসিক হবে, সংগ্রহে রাখুন

আদালত প্রাঙ্গণে ইউনূস দুটি মামলায় জামিনের মেয়াদ বাড়ল

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৪ মার্চ, ২০২৪ at ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিককর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাতের মামলায় জামিন পেয়ে আদালতের সাংবাদিকদেরকে তার ছবি তুলে তা সংগ্রহ করে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। তার মতে এই ছবিটি ‘ঐতিহাসিক’ হয়ে যাবে। গতকাল রোববার ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজের এজলাস থেকে জামিন আদেশ পেয়ে বেরিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ইউনূস বলেন, আজকের এ ছবিটা আপনারা তুলে রাখুন। দুর্নীতি দমন কমিশন ও বটতলার এটি একটি ঐতিহাসিক ছবি হয়ে থাকবে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এটি প্রকাশিত হবে। যুগ যুগ ধরে নানান বইতেও এটা প্রকাশিত হবে। আপনারা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবেন।

মামলাটি যুক্তিযুক্ত কিনা, সেটি নিয়ে ভাবতেও সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন তিনি। বলেন, আপনারা বিবেচনা করুন, দুর্নীতি দমন কমিশন আজকে একটি বিচারে বসাল, এটা সঠিক কারণে হয়েছে কিনা, সঠিকভাবে হয়েছে কিনা। এদিনে দুদকের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো একজন নোবেল বিজয়ীকে। এটা রেকর্ডেড। জাতির অংশ হয়ে থাকবে। এটার জন্য কি আমরা গর্ববোধ করব নাকি অপরাধ বোধ করব? যারা সারাজীবন খেটে এ প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে গেলেন, তাদেরও মামলার আসামি করা হলো! খবর বিডিনিউজের।

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের ‘ঠকানোর’ অভিযোগে মোট দুটি মামলার আসামি হয়েছেন ইউনূস। এর মধ্যে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করার অভিযোগ এনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের মামলায় তাকেসহ চারজনের ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়েছে গত ১ জানুয়ারি। তবে এক মাসের মধ্যে আপিলের শর্তে কারাগারে যেতে হয়নি তাকে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই আপিল করেন তিনি। এরপর তাকে জামিন দেওয়া হয়।

সেই জামিনের মেয়াদ শেষে গতকাল আদালতে হাজির হয়ে নতুন করে জামিন আবেদন করেন ইউনূস। ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ আউয়াল শুনানি শেষে তার আবেদন গ্রহণ করে আগামী ১৬ এপ্রিল শুনানির পরবর্তী তারিখ রাখেন।

প্রতিষ্ঠানের শ্রমিককর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অন্য মামলাটি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। গত ২৯ জানুয়ারি ওই অভিযোগপত্র অনুমোদন করে দুদক। ১ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্র আদালতে জমা পড়লে বিচারক ৩ মার্চ আসামিদের উপস্থিতিতে অভিযোগপত্র গ্রহণ এবং মামলা আমলে নেওয়ার শুনানির তারিখ রাখে।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে ইউনূস জামিনের আবেদন করলে দুই পক্ষের শুনানি নিয়ে তার আবেদন গ্রহণ করা হয়। আদালত থেকে বেরিয়ে এসে ইউনূস বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। এ দিনটি আপনারা স্মরণ করে রাখুন। এটা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আইন মানুষের শুভ কামনার জন্য তৈরি করা হয়। আইন মানুষকে যেমন শান্তিতে রাখে তেমনি আশঙ্কা এবং ভয়ংকর শঙ্কাও সৃষ্টি করে। আইনকে আমরা কোন দিকে নিয়ে যাব, এটা সমাজের ইচ্ছা।

দুটি মামলায় জামিনের মেয়াদ বাড়ল : শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় জামিনের মেয়াদ বাড়ার পর গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিককর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাতের মামলাতেও আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে শুনানি শেষে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।

ইউনূসের পাশাপাশি এ মামলার সাত আসামির জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। তারা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক পারভীন মাহমুদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম এবং পরিচালক এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।

এর আগে সকালে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন ইউনূস। শুনানি শেষে বিচারক এম এ আউয়াল জামিন মঞ্জুর করে আগামী ১৬ এপ্রিল শুনানির পরবর্তী তারিখ রাখেন। শ্রম আইন লঙ্ঘন করে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগে কোম্পানির চেয়ারম্যান, মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করে গত ১ জানুয়ারি ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয় তৃতীয় শ্রম আদালত।

ইউনূসের পাশাপাশি গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে শ্রম আইনের ৩০৩ এর ৩ ধারায় ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে আরও ১০ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

পরে ওই আদালতই তাদের জামিন দেয়। এরপর গত ২৮ জানুয়ারি তারা শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন। ওইদিন আপিল গ্রহণ করে পরবর্তী ধার্য তারিখ (৩ মার্চ) পর্যন্ত জামিন বহাল রাখে আপিল ট্রাইব্যুনাল। সেই জামিনের মেয়াদ শেষে গতকাল স্থায়ী জামিনের আবেদন করা হয় ইউনূসের পক্ষে। এ সময় বিচারক এম এ আউয়াল বলেন, আপিলের রীতি অনুযায়ী প্রথম আপিলের সময় পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন দেওয়া হয়। এর পরের তারিখে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয়। গত ২৮ জানুয়ারি আপিলের দিন আমরা জামিন দিয়েছিলাম; তবে আদালতে সময় উল্লেখ করিনি। কিন্তু গণমাধ্যমে কেউ কেউ স্থায়ী জামিন বলে উল্লেখ করেছেন। এটা হয়তো মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হতে পারে। আজ জামিন বর্ধিত করছি। তবে সময় পরে জানানো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবি ১নং গেইটে অবশেষে হচ্ছে ফুটওভার ব্রিজ
পরবর্তী নিবন্ধমাদরাসা ছাত্রকে অপহরণ করে মিয়ানমারে পাচার