নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার গাড়িতে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল বিকেলে ডবলমুরিং থানায় এ মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। তিনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। তার নিজ বাড়ি নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার দেওগাঁও গ্রামে। বর্তমানে তিনি নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার সিজিএস কলোনিতে থাকেন।
রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ‘প্রতিদিনের মতো আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) সকাল আনুমানিক ১০ টার দিকে বর্তমান ঠিকানার বাসা থেকে বের হয়ে রিকশাযোগে আমি ও আমার সহকর্মী সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বদরুল আরেফিন ভূইয়া (৩৫) আগ্রাবাদ শুল্ক গোয়েন্দা অফিসে যাই। অফিসের কাজ শেষে আমি ও আমার সহকর্মী ভাড়া করা একটি প্রিমিও প্রাইভেট কারে (রেজিস্ট্রেশন নম্বর–চট্টমেট্রো–গ–১২–০২১০) চট্টগ্রাম কাস্টমসে যাওয়ার পথে সকাল অনুমান ১০টা ২০মিনিটে আগ্রাবাদ সিডিএ ১ নম্বর রোডের রয়েল অটো কেয়ারের সামনে আসলে মোটরসাইকেলে আসা অজ্ঞাতনামা তিন ব্যক্তি আমাদের গাড়িটির গতিরোধ করে। আসামিদের মধ্যে দুইজনের হেলমেট পরা ছিল। এক পর্যায়ে মোটরসাইকেল থেকে একজন নেমে আমাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে এবং লাথি মেরে গাড়ির সামনের বাম পাশের দরজার গ্লাস ভেঙে ফেলে। যার আনুমানিক ক্ষতি ২৫ হাজার টাকা। এ সময় আসামিরা ‘গুলি কর’, ‘গুলি কর’ বলে চিৎকার করতে থাকে। আসামিদের এই কাজ দেখে আমি ও আমার সহকর্মী আতঙ্কিত হয়ে জীবন রক্ষার্থে কৌশলে গাড়ি নিয়ে দ্রুত কর্মস্থলে আসি এবং বিস্তারিত ঘটনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করি।’ উল্লেখ্য, এর আগে গত ৫ অক্টোবর বিকেলে আমার কর্মস্থলে অবস্থানকালে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির মোবাইল থেকে আমাকে ফোন দিয়ে নিজেকে ‘সাজ্জাদ’ পরিচয় দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। যে কোনো সময় আমার ক্ষতি সাধন করবে মর্মে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করি এবং তাদের পরামর্শক্রমে অজ্ঞাতানামা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং–২৮২) করি। আমাদের ধারণা জিডিতে উল্লেখিত হুমকিদাতা ব্যক্তি আজকের এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার সাথে জড়িত আছে।
নগরীর ডবলমুরিং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বাবুল আজাদ বলেন, ঘটনা শুনে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, বাইকে করে এসে দুই ব্যক্তি প্রাইভেট কার থামায়। এসময় কারের যাত্রী আসনের বাম পাশের জানালায় লাথি দিয়ে গ্লাস ভেঙে ফেলে। প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে, পূর্ব বিরোধের কারণে হামলা হয়েছে। জেনেছি তারা আগে বন্দর থানায় জিডি করেছিলেন। হামলার ঘটনায় কারা জড়িত আমরা তদন্ত করে দেখছি। জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হবে।
এনবিআরের বিবৃতি : অবৈধ পণ্য খালাসে বাধা প্রদান করায় এ হামলা সংঘটিত হয়েছে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মনে করছে।
গতকাল এনবিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, সমপ্রতি রাজস্ব ফাঁকি ও চোরাচালান প্রতিরোধে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য অভিযান পরিচালনার পর থেকেই সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের ওপর এ ধরনের হামলার ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল বলে ধারণা করছে এনবিআর।
সামপ্রতিক অভিযানের মধ্যে রয়েছে, প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের নিষিদ্ধ পপি সিড ও ঘন চিনি আটক; গত মে মাসে ৩০ কোটি টাকার রাজস্ব সংশ্লিষ্ট নিষিদ্ধ সিগারেট আটক এবং মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা বিভিন্ন কসমেটিকস পণ্যচালান জব্দ।
বিবৃতিতে এ ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সৎ ও দক্ষ রাজস্ব কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। অপরাধীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।










