আগে ছিল বিস্ফোরণের শব্দ এখন গুলিও আসছে

মিয়ানমারে সংঘাত

| সোমবার , ২৯ জুলাই, ২০২৪ at ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এপারে আতঙ্কের মধ্যে আবার গুলি এসে পড়ায় সীমান্তের বাসিন্দাদের মনে প্রাণহানির দুশ্চিন্তা বাড়ছে। রাখাইনের মংডু টাউনশিপকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের তীব্রতা বাড়ার মধ্যে টানা পাঁচ দিন (২২ থেকে ২৬ জুলাই) কোনো গোলাগুলির শব্দ পাননি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা সীমান্তের বাসিন্দারা। কিন্তু শনিবার ভোর থেকে প্রায় সারা দিনই থেমে থেমে গুলিবর্ষণ ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ ঘটছে। গতকাল রোববার ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ অব্যাহত ছিল। এর মধ্যে ২১ জুলাই টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপের কয়েকটি বসতবাড়িতে ওপার থেকে গুলি এসে পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও আতঙ্কে রয়েছে মানুষ। খবর বিডিনিউজের।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, শাহপরীর দ্বীপের কয়েকটি স্থানে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়েছে বলে তিনি জানতে পারেছেন। রাখাইন রাজ্যে বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটছে। টেকনাফ সদর ও পাশের সাবরাং ইউনিয়নের বিপরীতে মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপ। মাঝখানে চার কিলোমিটারের নাফ নদী দুই দেশকে বিভক্ত করেছে। টানা পাঁচ মাস ধরে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে রাখাইন রাজ্যে লড়াইসংঘাত চলছে।

যুদ্ধে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষা বাহিনীর অনেক সদস্য অনুপ্রবেশ করে। পরে তাদের দুই দেশের সমঝোতার মাধ্যমে স্বদেশে প্রেরণ করা হয়। এই সংঘাতের জেরে এপারে গোলাবারুদ এসে পড়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। ফলে মানুষের মধ্যে ভয়আতঙ্ক বিরাজ করছে। এখন নতুন করে গুলি এসে পড়ায় আবার প্রাণহানির শঙ্কা বিরাজ করছে জানিয়ে টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মজিবুর রহমান বলেন, হঠাৎ গতকাল ভোর ৪টা থেকে ওপারে বিকট শব্দে মর্টার শেল ও গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটছে। থেমে থেমে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত সীমান্তের ১০১২টি গ্রামে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাতে এপারের লোকজনের আতঙ্ক আরও বাড়ছে। ২১ জুলাই সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের বাজারপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইদ্রিসের বাড়ির আঙিনায় গুলি এসে পড়ে। একই পাড়ার মোহাম্মদ আয়াজের বসতবাড়ির সামনের পিলারে এসেও গুলি লাগে। তাতে পিলারটি ক্ষতিগ্রস্তও হয়।

বসতবাড়িতে গুলি এসে পড়ার বিষয়ে মোহাম্মদ আয়াজ বলেন, ২১ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টার সময় বাড়িতে কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এ সময় মিয়ানমারের দিক থেকে একটি গুলি এসে আমার বাড়ির সামনের দেয়ালে লাগে। এতে দেয়ালের আস্তরণ উঠে ফাটল ধরে। গুলিটি খুব দ্রুত বেগে এসেছিল। কারো গায়ে পড়লে বড় ধরনের জখম হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের এলাকার দূরত্ব কমপক্ষে পাঁচ কিলোমিটার। এত দূরে মিয়ানমার থেকে গুলি এসে পড়বে ভাবিনি। আমরা এখন খুব আতঙ্কে আছি।

শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ২১ জুলাই সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে একটি গুলি এসে পড়েছে আমার বাসার আঙিনার গাছের ডালে। তখন ঘটনাস্থলে কেউ থাকলে গায়ে লাগত। আরো গুলির ভয়ে ঘরের লোকজন বেরোতে সাহস পাচ্ছে না। পরে গুলিটি উদ্ধার করে শাহপরীর দ্বীপ বিজিবি ক্যাম্পে হস্তান্তর করি।

মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, এত দিন বোমার শব্দে এলাকার মানুষ আতঙ্কে ছিলেন, এখন নতুন আতঙ্ক হিসেবে যুক্ত হয়েছে ওপারের গুলি।

এদিকে গোলাগুলির কারণে টেকনাফের জেলেরা নাফ নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না। ফলে তাদের আয়উপার্জন প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়ার জেলে নুর মোহাম্মদ বলেন, রাখাইনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই পল্লির অন্তত ৫০০ জেলে নাফ নদে মাছ শিকারে নামতে পারছেন না। আয়রোজগারের বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। রাখাইন যুদ্ধ আরও তীব্র হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে জেলেপল্লির মানুষ কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।

টেকনাফের ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের প্রতিটি গ্রামে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি নিরাপত্তা নিয়ে লোকজনকেও সতর্ক করা হচ্ছে। এই সুযোগে কোনো রোহিঙ্গা যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে তার জন্য সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুই অতিরিক্ত আইজিপিসহ পুলিশের ৫৫ কর্মকর্তা বদলি
পরবর্তী নিবন্ধমেডিকেল কলেজ এখনই খুলছে না: স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর