বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আগে গণ–আন্দোলনে আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচার হতে হবে, তারপর অন্যকাজ। বিচারের আগে অন্য কোনো কাজ করা উচিত হবে না। গতকাল শনিবার দুপুরে কঙবাজারে জেলা জামায়াতের এক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
শফিকুর রহমান বলেন, ধর্ম যার যার, এই বাংলাদেশ সব ধর্মের মানুষের। আমরা আমাদের এ দেশে মেজরিটি–মাইনরিটি একেবারেই মানি না। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছে তারা এদেশের মর্যাদাবান নাগরিক। ইসলাম কারো উপর জোর খাটানোর অধিকার দেয় না। অন্য ধর্মও কোনো ধর্মের উপর জোর খাটাতে পারবে না, যদি সেটি ধর্ম হয়ে থাকে।
গতকাল শনিবার সকাল ৮টায় কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলাম কক্সবাজার জেলা শাখার আয়োজনে এ কর্মী সম্মেলন শুরু হয়। কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ নুর মোহাম্মদ আনোয়ারীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় অ্যাস্টিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এনামুল হক মনজু।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জাহিদুল ইসলামের পরিচালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন– হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি পরিমল কান্তি শীল, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মুফতি হাবিবুল্লাহ, এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন ফারুকী, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ও কর্ম পরিষদ সদস্য এডভোকেট শাহ জালাল চৌধুরী, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, শামসুল আলম বাহাদুর, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আব্দুল্লাহ আল ফারুক, কঙবাজার জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আব্দুর রহিম নুরী।
শফিকুর রহমান আরো বলেন, সমাজের মধ্যে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু বলে যুদ্ধ লাগিয়ে রাখা হয়েছিল। এখানে মেজরিটি মাইনরিটি বলে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধর্মের ভাই–বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের সম্পদ গ্রাস করা হয়েছে, জায়গা জমি দখল করা হয়েছে, ইজ্জতের উপর হাত দেয়া হয়েছিল। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর দোষ দেয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর উপর। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোথায় কোথায় জামায়াতের কর্মীরা এসব অপকর্ম করেছে, তা সুস্পষ্ট করে নাম ঠিকানা দিয়ে আমাদের সাহায্য করুন। আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, ন্যায় বিচার আমরা আপনাদের হাতে তুলে দেব। আমরা নিশ্চিত এই অপকর্মের সাথে আমাদের সহকর্মীরা জড়িত নয়।
নিজ দলের প্রতি অবিচারের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াতের আমীর বলেন, আইনের অঙ্গনে এসে যারা বেআইনি কর্মকাণ্ড করেছেন, প্রধান বিচারপতির দরজায় এসে লাথি দিয়েছিল, আওয়ামী লীগ তাদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বানিয়েছিলেন। এদের কাছ থেকে বিচার পাওয়া যাবে না, এটাই স্বাভাবিক। তাই অবিচারের শিকার হয়ে আমাদের ১১ জন কলিজার টুকরা শীর্ষ নেতা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাস করি না, তবে আমরা অবশ্যই অপকর্মের বিচার চাই। আমাদের কথা স্পষ্ট। সবগুলো খুনের বিচার হতে হবে। বিশেষ করে ২৪ এর গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। আগে বিচার তারপর অন্য কাজ। এ বিচার না হলে শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে।
এসময় দীর্ঘদিন ধরে আটক জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি করেন জামায়াত আমির। এছাড়া সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনেজির আহমেদের বক্তব্য প্রসঙ্গে পুলিশ বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ ভাইদের বলছি বেনেজিরের ফাঁদে পা দিবেন না।