বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতায় থেকে তারা নিজেদের ভাগ্য গড়েছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়েনি। দলের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের পরদিন গতকাল গণভবনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের কাজ হচ্ছে জনগণের ভাগ্য গড়া, আর সেটাই আমরা কিন্তু করে যাচ্ছি এবং সেটা আমাদের করতে হবে। মানুষের আস্থা, বিশ্বাস, এটাই আমাদের বড় শক্তি। আমাদের আর কোনো শক্তি নাই। একমাত্র জনগণের শক্তিতেই আমরা বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগই এ দেশের জনগণের জন্য কাজ করে এবং আওয়ামী লীগের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের মানুষের আজকে ভাগ্য ফিরে এসেছে। খবর বিডিনিউজের।
শনিবার আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে দলের নতুন কমিটি নির্বাচন হয়। তাতে টানা দশমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। আর ওবায়দুল কাদের টানা তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন। শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সংগঠন বলতে সারা বাংলাদেশে… যদি সত্যি কথাটা বলা যায়, তবে আওয়ামী লীগই আছে, এটা ঠিক। আমরা তো মাটি মানুষ থেকে গড়ে ওঠা সংগঠন। আর বিএনপি–জাতীয় পার্টি এগুলো তো অবৈধভাবে সংবিধান
লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলকারী… একজন মিলিটারি শাসক, তার পকেট থেকে বের হওয়া। এরা ভাসমান, কাজেই এদের দায়–দায়িত্বটা জনগণের ওপর নেই। যদিও তারা দাবি করে অনেক বছর ক্ষমতায়। কিন্তু ক্ষমতায় থেকেই তারা নিজেদের ভাগ্য গড়েছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়েনি।
স্বাধীনচেতা হলে বড় অনেক দেশ ‘পছন্দ করে না’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক বড় বড় দেশ, আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীরা, কখনও এটা পছন্দ করবে না। কিন্তু আমাদের জনগণকে যদি আমরা ঠিক রাখতে পারি, তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন, বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি, এটা কেউ আটকাতে পারবে না; যেটা জাতির পিতা বলে গিয়েছিলেন, ‘কেউ দাবায় রাখতে পারবা না’ সেটা পারবে না।
সবসময় সেটা মাথায় রেখে সংগঠনের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। নতুন সদস্য সংগ্রহের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু বই ছাপিয়ে দিয়েছি সদস্য সংগ্রহ করার। এই কাজটা আমাদের প্রত্যেকটা জেলা–উপজেলা–ইউনিয়ন–ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত সকলকে সম্পন্ন করতে হবে এবং মুড়ি বইগুলো ফেরত দিতে হবে। আমরা আবার নতুনভাবে টিম করে দেব, একটা বিভাগে বিভাগীয় যে টিম আমরা করে দেব তাদের ওপর দায়িত্ব থাকবে প্রত্যেকটা জায়গায় সদস্য সংগ্রহ হলো কিনা।
বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলন যথাসময়ে করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সম্মেলনটা আপনারা যথাযথ সময় করবেন। আমরা নতুনভাবে টিম করে দেব, একটা বিভাগের জন্য, প্রত্যেকটা জেলা–উপজেলা–ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত যাতে সম্মেলনগুলো হয়, অনেকগুলো এখনো বাদ রয়ে গেছে, একটাও যেন বাদ না থাকে।
তিনি বলেন, দোয়া করবেন। আপনারা নির্বাচিত করেছেন আবার। এই এতবার আমার মনে হয় একটা পার্টির দায়িত্বে থাকা ঠিক না। তারপরেও এখন যেহেতু সারা বিশ্বব্যাপী একটা দুঃসময়… বিশ্বব্যাপী দুঃসময়ের জন্যই আমি হয়ত মানা করিনি, কিন্তু আমার বয়স হয়েছে–এটা মনে রাখতে হবে। কিন্তু সংগঠনটা যেন ঠিক থাকে সেই ব্যবস্থাটা করতে হবে।
গণভবনে নেতাকর্মীদের স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কষ্ট করে এসেছেন গণভবনে, এই ভবন আপনাদেরই ভবন। এটার নাম আব্বা দিয়েছেন ‘গণভবন’, কারণ এটা জনগণেরই ভবন।
টানা দশমবার দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময়ের আগে সকালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির সদস্যরা।