আওয়ামী লীগ ভারতে বসে কল্পকাহিনি তৈরি করছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম। তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার সীমান্তের ওপারে বসে নানা ধরনের কল্পকাহিনির অবতারণা করে যাচ্ছে। এখানে নাকি প্রত্যেক দিন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। ভারতের মিডিয়া প্রচার করছে বাংলাদেশে কোনো হিন্দু মহিলা শাঁখা–সিঁদুর দিয়ে রাস্তায় বের হতে পারে না। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের মিডিয়া অকথ্য মিথ্যাচার এখনও করছে। কী চায় তারা? গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিজয় দিবস উপলক্ষে নগর বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মো. মীর হেলাল উদ্দিন। নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা আবুল হাসেম বক্কর, অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, এস এম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন, হারুন জামান, শাহ আলম, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, শওকত আজম খাজা, ইয়াসিন চৌধুরী লিটন, শিহাব উদ্দিন মোবিন ও মঞ্জুরুল আলম।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারত সরকারের ভুল পররাষ্ট্রনীতির কারণে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশ মোদি সরকারের বিরুদ্ধে চলে গেছে। তাদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। বাংলাদেশের দিকে বাঁকা দৃষ্টিতে তাকাবেন না। আমরা কারও খাইও না, পরিও না। আমরা স্বাবলম্বী দেশ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত স্বাধীনচেতা। ভারত আমাদের বন্ধু। আমরা তাদের বন্ধু হিসেবে থাকতে চাই। কিন্তু সমমর্যাদার ভিত্তিতে সমপর্যায়ে। যেসব চুক্তি তারা করেছে, সরকারকে বলব প্রত্যেকটি প্রকাশ করুন। এগুলোতে বাংলাদেশের স্বার্থ আছে কিনা আমরা দেখতে চাই। বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি আমরা মেনে নেব না। আমরা বন্ধুসুলভ আচরণ চাই। আমরা আমাদের দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ব্যস্ত।
হাফিজ বলেন, মুহাম্মদ ইউনুসের সরকারকে সমর্থন দিয়েছে আমাদের দল। দেশবাসী সমর্থন দিয়েছে। তার সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়েছে। তারা অনেক সংস্কারের কথা বলছেন। তারা এ কথাটি ভুলে গেছেন, রাষ্ট্র ক্ষমতার প্রকৃত দাবিদার হলো জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। সুতরাং এ সরকারের অন্যতম প্রধান কাজ নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্বভার অর্পণ করা। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে কোনো কথাবার্তা শুনি না। তারা হয়তো এয়ার কন্ডিশন ও পতাকাবাহী গাড়ির মোহে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছেন।
তিনি বলেন, সংস্কার করবেন কীভাবে? আন্দোলনে ৫০০ ছেলে চোখ হারিয়েছে। তাদেরও তো চিকিৎসা করতে পারছেন না আপনারা। ঢাকার প্রত্যেকটি সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে জুলাই–আগস্ট বিপ্লবে অঙ্গহানি হওয়া ছাত্র–জনতা কাতরাচ্ছে। সামান্য চিকিৎসাটুকু তাদের দিতে পারছেন না।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক। ১৯৭১–এর মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন তিনি। তার নির্ভীক কণ্ঠের আহ্বানে এদেশের মুক্তিকামী জনতা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নিশ্চিত মৃত্যুর পরোয়া না করে তিনি যুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় লাভ অবধি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, যে গণতন্ত্রের জন্য এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রের আশা–আকাঙ্ক্ষাকে গলা টিপে হত্যা করে একদলীয় রাষ্ট্র গঠন করেছিল। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কন্যা শেখ হাসিনাও দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করে গণতন্ত্রের স্থায়ী কবর রচনা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিগত ষোলটি বছর বিএনপির স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এদেশের ছাত্রসমাজ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসে। এদিকে তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ছাত্রদের সাথে নিয়ে চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। রচিত হয় নতুন ইতিহাস। ভারতের মদদপুষ্ট স্বৈরাচার ভারতে পালিয়ে গেলেন। ফ্যাসিবাদমুক্ত হলো প্রিয় স্বদেশ।
মীর হেলাল বলেন, দীর্ঘ ষোলটি বছর দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েমের মাধ্যমে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল। পলাতক স্বৈরাচার বিভিন্ন কায়দায় দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার কায়েমের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুসংহত করতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু।