সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ–বিএনপিকে এক মত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম নগর জাতীয় পার্টির দ্বি–বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। সংসদের বিরোধী দলীয় উপ–নেতা কাদের বলেন, সকলেই আমরা অনিশ্চিয়তার মধ্যে আছি। আমরা সবসময় এই আহ্বানটা করে আসছি এবং এখনও করছি– প্রধান দুইটি দল তারা এক মত হয়ে এক টেবিলে এসে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি ফর্মুলা তৈরি করুক, যাতে করে সকলে মিলে উৎসবমুখর পরিবেশে, সকলের অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন করতে পারি।
জিএম কাদের বলেন, আমরা আর কারও ‘বি’ টিম হয়ে কাজ করতে চাই না। কারও ক্ষমতা যাওয়ার সিঁড়ি হতে চাই না। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যুদ্ধ করছি না। আমরা যুদ্ধ করছি একটি আদর্শের জন্য, আমাদের নিজস্ব রাজনীতির জন্য। আমাদের রাজনীতি জনগণের কল্যাণের জন্য। কল্যাণমুখর এই রাজনীতি জনগণের জন্য। আমরা আমাদের এই রাজনীতি দিয়ে চিরজীবন মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকতে চাই। আমাদের রাজনীতিই আমাদেরকে ভবিষ্যতে দেশ শাসনের সুযোগ করে দেবে।
গতকাল শনিবার বিকেলে একটি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে জিএম কাদের সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনেরও সমালোচনা করে বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হ্যারেস করছে। বর্তমানে এইট এমন একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে সেখানে খুব ছোটখাটো অফিসার ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নানান ধরনের অভিযোগ আসে। কিন্তু বড় বড় দুর্নীতিবাজদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয় যে, তারা দুর্নীতিবাজ না।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ তুলে ধরে জিএম কাদের বলেন, সরকার যে বারংবার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছে বলছে, এই কথার মানে কী? আওয়ামী লীগ কী তাদের ঘরের টাকা দিয়ে সেতু করছে? তারা বলতে পারে, বাজেট থেকে করেছে। বাজেটেও শুভঙ্করের ফাঁকি। আমাদের বাজেটে গত চার পাঁচ বছরের মধ্যে যত টাকা রাজস্বের মাধ্যমেই আয় হয়, তার সম্পূর্ণ টাকা খরচ হয় সরকার পরিচালনার জন্য ও ঋণের সুদ দেওয়ায়। আর উন্নয়নের জন্য ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া হয় অর্ধেক, বাকি অর্ধেক বিদেশ থেকে লোন নেওয়া হয় এবং তাদের সুদের হার ১০ থেকে ১২ শতাংশ।
পরে সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির নতুন কমিটিতে মো. সোলায়মান আলম শেঠকে সভাপতি, মো. ইয়াকুব হোসেনকে সিনিয়র সহসভাপতি ও আবু জাফর মো. কামালকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
সম্মেলনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একই চরিত্র বলে মন্তব্য করে বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ টাকা চুরি করেছে। দেশের জনগণের কথা ভাবে না। ফ্লাইওভার করে কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু লাখ লাখ মানুষ বেকার। আওয়ামী লীগ আর বিএনপি সেগুলো চিন্তা করে না। বেকার, শিক্ষিত চাকরি পায় না, সেটার কোনো চিন্তা নেই। কর্মমুখী শিক্ষার কোনো রোডম্যাপ নেই।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে জানিয়ে সাবেক মন্ত্রী চুন্নু বলেন, আমরা যখন মহাজোট করি ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপি ছিল। এখন সেটা দেড় লাখ কোটি টাকা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে হাজার কোটি টাকা লুট করেছে সরকার। সরকারের এমপিরা অনেকে আমেরিকা বাড়ি করেছে, তারা কিভাবে টাকা নিয়ে গেছে, সেটা সংসদে প্রশ্ন রেখেছিলাম। কিন্তু তাদের কেউ উত্তর দিতে পারেনি।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো–চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি। চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মো. সোলাইমান আলম শেঠের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি। বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য জহুরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, এসএম ফয়সল চিশতী ও এটিইউ তাজ রহমান। সম্মেলনে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানাসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।