আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ কাঁদানে গ্যাস, ফাঁকা গুলি

উপজেলা সভাপতিসহ আহত ২০ আনোয়ারায় বাজেটকে স্বাগত জানানোর কর্মসূচিতে এ ঘটনা

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শনিবার , ৮ জুন, ২০২৪ at ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারায় বাজেটকে স্বাগত জানানোর কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নানসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বিকালে উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের বন্দর সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। এক ঘণ্টার বেশি সময় সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে বন্দর সেন্টারে সাইফুজ্জমান চৌধুরী জাবেদ এমপি সমর্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান সমর্থিত তৃণমূল ও বর্তমান আওয়ামী লীগের একাংশের একই স্থানে আনন্দ র‌্যালি ও সমাবেশ চলাকালীন এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বন্দর সেন্টার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনার পর দুই গ্রুপের সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।

জানা যায়, প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে বন্দর সেন্টারে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর অনুসারীরা আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে সেন্টারের সিইউএফ সড়কের দক্ষিণ পাশে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। অন্যদিকে একই স্থানে সিইউএফএল সড়কের উত্তর প্রান্তে অর্থ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশ কর্মসূচির আয়োজন করে। একই স্থানে দুই গ্রুপের কর্মসূচির কারণে সকাল থেকে দুই পক্ষে উত্তেজনা চলছিল। এ সময় পাল্টাপাল্টি স্লোগান চলতে থাকে। সমাবেশ থেকে দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা জাবেদ ও ওয়াসিকার নামে স্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের হাতাহাতি থেকে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দুই সমাবেশের মাঝখানে পুলিশ ব্যারিকেড দিলেও সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী দাবি করেন, বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে আয়োজিত আমাদের শান্তি সমাবেশে প্রতিপক্ষ হামলা চালিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এম এ হান্নান মঞ্জু চৌধুরী, আমি নিজে, বরুমচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, চাতরী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তাজউদ্দিনসহ অন্তত ১৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আহত করেন। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে কর্মসূচি আয়োজনকালে প্রতিপক্ষ হামলা করে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারী নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, তাদের পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদুল আলম টিপু, কাকন আইচ, জামেশেদুল ইসলাম বাবু, মোহাম্মদ এরশাদসহ ৮ জন আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনার জন্য আমি কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দায়ী করছি। ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। আমি মনে করি, ওসি সাহেবের উচিত ছিল পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা। নিরাপত্তা দিতে না পারলে দুই পক্ষের কর্মসূচি বাতিল করা।

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. জহির হোসেন বলেন, বাজেট নিয়ে বিকালে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের আনন্দ র‌্যালি করার কথা ছিল। দুই পক্ষের সংঘাতের বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ মিডল অবস্থানে থেকে যথাসাধ্য নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তারপরও দুই পক্ষের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। উপজেলা চেয়ারম্যানের তাকে দায়ী করার বিষয়ে ওসি বলেন, কাজী মোজাম্মেল হকের অভিযোগকে আমি রাজনৈতিক বক্তব্য মনে করি।

এদিকে আহতদের কয়েকজনকে আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। গুরুতর কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সংঘর্ষের পর পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে দুই পক্ষ বন্দর সেন্টারে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়। দুই পক্ষ ৩০ মিনিট আগেপিছে করার কথা ছিল। কিন্তু একই সময়ে সমাবেশ শুরু করে একে অপরের সাথে সংঘর্ষ লিপ্ত হয়। এতে করে ৫ জনের বেশি আহত হয়। পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজেলের জালে উঠে এলো দুই ভাই-বোনের মরদেহ
পরবর্তী নিবন্ধঅস্বাভাবিক সময়ে সাধারণ বাজেট