আওয়ামীলীগ নেতা ও বন খেকোদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের সংবাদ সম্মেলন

সাতকানিয়া-লোহাগাড়া প্রতিনিধি | রবিবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

চটগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা ও বন খেকোদের বিরুদ্ধে সরকারি বনভূমি অবৈধভাবে দখল, ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাটসহ নানা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগীরা।

রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার ক্যাফে নবান্ন রেস্তোরাঁর হল রুমে উক্ত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এলাকাবাসীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চুনতির পরিবেশবাদী কর্মী জহির উদ্দীন।

লিখিত বক্তব্যে জহির উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের বনাঞ্চল দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের মোট ভৌগোলিক আয়তনের প্রায় ১৭.৫% বনাঞ্চল রয়েছে। চুনতি বনাঞ্চল বাংলাদশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বনভূমি। এটি ১৯৮৬ সনে মরহুম লুৎফর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষিত হয় এবং চুনতি বনের আয়তন প্রায় ৭.৭৬৪ হেক্টর (১৯,১৯০ একর)।

বনাঞ্চলের গুরুত্ব:- বনাঞ্চল শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, এটি দেশের পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্যও অপরিহার্য, তাই এই বন সংরক্ষণ করা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের প্রিয় চুনতি বনে দীর্ঘদিন ধরে কিছু অসাধু ব্যক্তি বন ধ্বংস করে চলেছে, যারা এলাকায় “বনখেকো” নামে পরিচিত।

এই বনখেকোদের মধ্যে চিহ্নিত প্রধান চার ব্যক্তির নেতৃত্বে অজ্ঞাত অনেক ব্যক্তির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বনখেকো, মাদকসেবী, ডাকাত, চোর ও সন্ত্রাসী দল।

এর মাধ্যমে তারা প্রায় ১০০ একর সরকারি বনভূমি অবৈধভাবে বাগান সৃজনের মাধ্যমে দখলে নিয়ে নেয়। তাদের দৌরাত্ম্যের মরহুম লুৎফর রহমানের খামারবাড়িতে ভাঙচুর ও মালামাল লুটপাট করে; এতে প্রায় ৬ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়।

এছাড়াও বন বিভাগের বারণ সত্ত্বেও জোরপূর্বক গোলাইম্মাঘোনা বাগান কর্তনের ঘটনায় ৪জন বন কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়। বিগত ২০২২ সালে ফরেস্ট অফিসার নুরূর বাড়িতে হামলা করে বনখেকোর নেতৃত্ব প্রদানকারী একটি সন্ত্রাসী দল। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করার পর পুলিশ তদন্তে গেলে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ক্ষমতার দাপটে এ হামলার ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে দেয়।

সম্প্রতি আগস্টের ২২ তারিখে নেতৃত্বে একটি সক্রিয় কিশোর গ্যাং স্থানীয় জাপান প্রবাসী তারেকের বাড়িতে হামলা করে লুটপাট ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। কিন্তু সেসময় সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগ এর প্রভাবে এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ও কিশোর গ্যাং এর দাপটে প্রাণহানির ভয়ে ভুক্তভোগী তারেক আইনগত আশ্রয় নিতে পারেননি। এছাড়াও সম্প্রতি সরকার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতা আন্দোলনে সন্ত্রাসী খোরশেদের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী দল আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোটা ও বন্দুক নিয়ে হামলা করে, যার অকাট্য সাক্ষ্যপ্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে।

চুনতি ফরেস্ট অফিসের অধীনস্থ ভিসিএফ কর্মী শফিকুর রহমান, জামাল উদ্দীন ও কফিল উদ্দিন ভুট্টো বিগত সরকারের আমলে বনখেকোদের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান করায়, তাদের প্রতি বনখেকোরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে গত ২৪ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার দিনদুপুরে গাছ চুরির স্পষ্ট মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পাকড়াও করে টর্চার সেলে বন্দি করে রাখে এবং তাদেরকে লাগাতার কল্পনাতীত নির্যাতন করে।

পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে উল্লিখিত বনখেকো সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর এবং ৫০ হাজার টাকা চাঁদা গ্রহণ করে নিপীড়িত অবস্থায় ছেড়ে দেয়। এরপর স্থানীয়রা ভুক্তভোগীদেরকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে।

উল্লিখিত ভূমিদস্যুদের সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ডের প্রভাবে স্থানীয় জনগণ তটস্থ এবং যেকোনো দুর্ঘটনার আশংকায় তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করতে অপারগ। এমতাবস্থায়, তাদেরকে সমূলে উৎখাত করতে না পারলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের এ বৃহৎ বনভূমি হুমকির মুখে পড়বে এবং এই এলাকা পুনরায় সন্ত্রাসের কবলে পতিত হবে। এজন্য আমরা এলাকাবাসী উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি এবং সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমালিক নন, তবুও তারা হয়ে যান মালিক
পরবর্তী নিবন্ধসড়ক দুর্ঘটনায় আহত যুবকের মৃত্যু