আউটার স্টেডিয়ামের সংস্কার কে করবে

‘খেলা না মেলা সে সিদ্ধান্তও নিতে হবে’

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

নগরীর আউটার স্টেডিয়াম এখন আলোচনার অন্যতম কেন্দ্র বিন্দুতে। চট্টগ্রামের ক্রীড়াবিদ তৈরির এই কারখানাটি এখন এক রকম খেলারই অনুপযোগী। কবে নাগাদ এই মাঠ আবার খেলার উপযোগী হবে সে নিশ্চয়তা মিলছেনা। কিংবা আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। কারণ এরই মধ্যে সিটি কর্পোরেশন যে উদ্যোগ নিয়েছিল আউটার স্টেডিয়াম সংস্কারের সে উদ্যোগ এক রকম ভেস্তে যাওয়ার পথে। সাবেক সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন খেলাধুলার স্বার্থে আউটার স্টেডিয়াম সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের কথায় যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তাতে এই উদ্যোগ হয়তো ভেস্তে যেতে পারে। তাই এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে এই আউটার স্টেডিয়াম সংস্কার করবে কে?
যদিও দুটি পথ খোলা রয়েছে। একটি হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আরেকটি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে তারা চাইলে আউটার স্টেডিয়ামের মাঠকে আবার খেলার উপযোগী করে দিতে পারে। কর্মকর্তারা উদাহরণ টেনে বলেন, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার স্টেডিয়ামটি বিপুল অর্থ ব্যয়ে দৃষ্টি নন্দন করে তৈরি করে দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তবে সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে আবেদন করতে হবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে। কারণ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অবকাঠামো উন্নয়নের নানা প্রকল্প রয়েছে। সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা যদি একটু তদবির করে তাহলে ঐতিহ্যের আউটার স্টেডিয়াম আবার খেলাধুলার উযোগী হয়ে উঠবে। অবশ্য আউটার স্টেডিয়ামের একপাশে সুইমিং পুল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদই করে দিয়েছে। কাজেই আউটার স্টেডিয়ামের মাঠ সংস্কারের কাজটা মোটেও বড় কোন প্রকল্প নয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জন্য। তবে সে জন্য চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থাও করতে পারে এই মাঠ সংস্কারের কাজ।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক মশিউর রহমান জানান, আউটার স্টেডিয়ামের মাঠ সংস্কারের জন্য আমরা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকেও আবেদন জানাতে পারি। আবার চাইলে আমরা নিজেরাও করতে পারি। কারণ সে আর্থিক সামর্থ এখন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার রয়েছে। তবে তিনি কিছু শর্তের কথা উল্লেখ করেন এক্ষেত্রে। এই সাবেক ফুটবলার এবং জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক বলেন, আমরা করি কিংবা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ করুক সেটা বড় বিষয় না। এখানে সব চাইতে বড় বিষয় যেটি হচ্ছে আমরা বা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যারাই এই মাঠ সংস্কারের কাজ করি না কেন এই মাঠের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে কে? মাঠটা খেলার উপযোগী করে গড়ে তোলা হলো অথচ আবার মেলা করে মাঠটাকে নষ্ট করে ফেলা হবে তাহলে এই মাঠ সংস্কার করে কি লাভ হবে।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই কর্মকর্তা বলেন, বছরে ছয়মাস এই মাঠ দখলে থাকে মেলার। একটার পর একটা মেলা বসে এখানে। তাহলে মাঠ সংস্কার করে লাভ কি যদি খেলোয়াড়রা খেলতেই না পারে। আবার যদি সে মাঠ খেলা অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, অতীতেও একাধিকবার এই আউটার স্টেডিয়াম সংস্কারের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু মেলার কারণে বারবার সে সব প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়েছে। আমরা যারা ক্রীড়াঙ্গনের সাথে জড়িত কিংবা রাজনীতির সাথে জড়িত বা প্রশাসনের সাথে জড়িত। আমাদের একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে খেলার মাঠ কি খেলার জন্য ব্যবহৃত হবে নাকি মেলার জন্য। সে সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত কোন কাজই ফলপ্রসূ হবেনা। আমরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি এবং জেলা প্রশাসকের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করব। জেলা ক্রীড়া সংস্থার পরবর্তী সভায় এজেন্ডা দিয়ে এ ব্যাপারে আলোচনা করব।
তিনি আরও বলেন, একজন সাবেক ফুটবলার হিসেবে আউটার স্টেডিয়ামের এই দুর্দশা আমাকেও পোড়ায়। কিন্তু খেলার মাঠ যদি আমরা শুধু খেলার জন্য সীমাবদ্ধ রাখতে না পারি তাহলে এই মাঠ সংস্কার করে কোন লাভ হবেনা। তাই আমাদের আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা এই মাঠটাকে কতটা খেলাধুলার জন্য নির্ধারিত রাখতে পারব। আমাদের জিমনেসিয়াম বছরের বেশিরভাগ সময় নানা সরকারি কর্মকাণ্ড কিংবা নানা মেলার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যে কারণে আমরা অনেক ইনডোর গেমস করতে পারিনা। চট্টগ্রামের মতো একটি শহরে নেই কোন উডেন ফ্লোর জিমনেসিয়াম। যে কারণে আমরা অনেক জাতীয় পর্যায়ের ইনডোর গেমসের আয়োজন করতে পারিনা। কাজেই সে সব নিয়ে ভাবার সময় এসে গেছে। খেলার মাঠ কেবলই খেলার জন্য ব্যবহৃত হবে। তেমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদের। সত্যিকারের অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে আর সে অবকাঠামো সঠিকভাবে ক্রীড়াবিদদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারলে তবেই ভালোমানের ক্রীড়াবিদ বেরিয়ে আসবে। না হয় সব প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে যাবে।
কাজেই আউটার স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ বা মাঠকে খেলার উপযোগী করে গড়ে তোলার কাজটা এখন ত্রিশংকু অবস্থার মধ্যে পড়ে গেছে। কারা করবে, কেন করবে, কারা ব্যবহার করবে, খেলা না মেলা হবে তেমন প্রশ্নের মুখোমুখি আজ আউটার স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ। একই সাথে তাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিড়ালের গলায় ঘন্টা টা বাধবে কে?

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোদীর বিদেশ ভ্রমণ খরচ ৫১৮ কোটি রুপি
পরবর্তী নিবন্ধরেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপার শাহনেওয়াজ ওএসডি