‘দ্বন্দ্বে কোন আনন্দ নাই, আপস করো ভাই, লিগ্যাল এইড আছে পাশে, কোন চিন্তা নাই’ প্রতিপাদ্যে চট্টগ্রামে উদযাপিত হয়েছে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস–২০২৫। গতকাল সকালে দিবসের উদ্বোধন করেন জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান এবং জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম।
এরপর আদালত চত্বর থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি কোতোয়ালী মোড় হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রদক্ষিণ করে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সামনে এসে শেষ হয়। র্যালি শেষে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত চট্টগ্রামের নীচ তলায় পার্কিং হলে দিনব্যাপী লিগ্যাল এইড ফেয়ার, ফ্রি–মেডিকেল ক্যাম্প ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (সিনিয়র জেলা জজ) ফেরদৌস আরা, ভারপ্রাপ্ত মহানগর দায়রা জজ আবদুর রহমান, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হকসহ চট্টগ্রামে কর্মরত সকল স্তরের বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি, চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে দিবসের তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সরকারি খরচে আইনি সহায়তা অসহায় মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। উক্ত অধিকার বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধ পরিকর। আইনের শাসন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় লিগ্যাল এইডের বিকল্প নেই। লিগ্যাল এইড শুধু আইনি সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আইনি সহায়তার পাশাপাশি বিনামূল্যে আইনি পরামর্শ, এবং আপসযোগ্য যে কোন বিরোধ কিংবা মামলা মীমাংসা সভার মাধ্যমে নিষ্পত্তির নির্ভরযোগ্য স্থান। তিনি আরো বলেন, সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন জনসচেতনতা এবং ব্যাপক প্রচার–প্রচারণা ও জনমত সৃষ্টি। লিগ্যাল এইড কার্যালয় এখন অসহায় মানুষের ভরসারস্থল। নানাবিধ আর্থ–সামাজিক প্রতিবন্ধকতা কিংবা দারিদ্রতা বা অপ্রাচুর্যের কারণে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ন্যায় বিচারে প্রবেশাধিকার থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্য দেশের আপামর জনসাধারণের আইনি অধিকার নিশ্চিত করার সাথে সাথে তাদেরকে সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষে সরকার প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালন করছে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইনি সহায়তা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সহিদুল ইসলাম। সরকারি আইনি সহায়তা কার্যক্রম ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিস চট্টগ্রামের কার্যক্রমের উপর বিশেষ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) রূপন কুমার দাশ।
সভায় বিশেষ অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. আবদুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক এড. মো. হাসান আলী চৌধুরী, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মফিজুল হক ভুঁঞা ও সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল হোসেন। উপকারভোগীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এডিআর উপকারভোগী মো. শরিফ। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সদস্য, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন প্রতিনিধি, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, জেলা বারের আইনজীবী, এনজিও প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রছাত্রী। আলোচনা সভা শেষে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি, চট্টগ্রামের ২০২৪ সময়ে কর্মদক্ষতা বিবেচনায় অ্যাডভোকেট আশরাফি বিনতে মোতালেবকে জেলার শ্রেষ্ঠ প্যানেল আইনজীবী সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।