সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কেউ কেউ আইন ভেঙেছেন; তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনার কথা বলছেন তথ্য ও সমপ্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসে সরকারের এই অবস্থানের কথা তুলে ধরেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় হতাহতের বিষয়ে দেশি–বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠনের তরফে বলা হচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘অতিরিক্ত’ বল প্রয়োগ ও ‘প্রাণঘাতী’ অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এর সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
এ বিষয়ে সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য যারা আছে, কারোই গুলি করার পারমিশন ছিল না। সংবিধান ও আইনের অধীনে তাদের কাজ করতে হয়েছে। তাই বলে আমি এটা অস্বীকার করছি না, ক্ষেত্র বিশেষে কেউ কেউ আইন ভাঙেননি, অন দ্যা গ্রাউন্ডে। আমরা এটা তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনব।’
পুরো পৃথিবীতে এই ধরনের ঘটনা ঘটে বলে দাবি করে আরাফাত বলেন, আমেরিকাতেও ঘটেছে আপনারা দেখেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেকেই আইন ভেঙে ফেলে। সরকার থেকে তো তাদেরকে আইন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয় না। কিন্তু তারা এই ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। আমাদের দায়িত্ব হল যারা আইন ভেঙেছেন, যারা অন্যায় করেছেন, সে যেই হোন; আমরা তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করব।
সহিংসতায় হতাহতের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রতিমন্ত্রী আরফাত। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে বলে জানান তিনি। ‘তারা স্বাধীনভাবে প্রতিটি হতাহতের ঘটনার তদন্ত করবে, এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে আমরা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করব। কারণ হচ্ছে, আমরা এখানে পুরোপুরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতায় থাকতে চাই।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, সহিংসতা প্রতিটি মৃত্যুর জন্য আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত তেমনি দেশ ও দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। হয়তো কোনো একটি তৃতীয় পক্ষ এটার সুবিধা নিচ্ছে। আর এই মৃত্যু নিয়ে প্রথম থেকেই অপপ্রচার করা হচ্ছে। এই ক্ষতির যেমন আপনারা একটা অংশ আমরাও একটা অংশ। আপনারা যেমন এটার বিচার চান আমরাও এটার বিচার চাই।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছে বলে অভিযোগ করেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী।
আন্দোলনের ভিডিও ফুটেজ দেখে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করার কথা বলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংবাদমাধ্যমে খবর আসছে, মামলায় নাম থাকা শিক্ষার্থীদের না পেয়ে বাড়ি থেকে তাদের পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে ধরে আনা হচ্ছে। এসব ঘটনার সময় আতঙ্কিত অভিভাবকের মৃত্যুর খবরও আসছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে আরাফাত বলেন, আইনের প্রয়োগ ঘটবে শুধু সন্ত্রাসীদের ওপরে। সুনির্দিষ্ট প্রমাণসাপেক্ষে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী যেন হয়রানির শিকার না হয়। আমি পুলিশ প্রশানকে বলতে চাই, যে সকল শিক্ষার্থী আন্দোলন করেছে, পানি বিতরণ করেছে; তাদের পরিবারের কোনো সদস্যকে যেন কোনো ধরনের হয়রানি করা না হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, আবেগ অনুভূতিকে আমরা শ্রদ্ধা করি, সেগুলোতে আমাদের সমর্থন আছে। কিন্তু তাদের আবেগকে পুঁজি করে যারা ধ্বংস চালিয়েছে, সেটা তো পরিষ্কার। আমরা নিশ্চিত করতে চাই কোনো শিক্ষার্থী যাতে নাজেহাল না হয়। আর সন্ত্রাসীদের যেন আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়।
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন ১৫ জুলাই সহিংস হয়ে ওঠে। ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় অনেক মানুষ হতাহত হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমে আসছে দুই শতাধিক নিহতের খবর, তবে সরকার বলছে তাদের কাছে ১৪৭ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে।