একেবারে ঠুনকো একটি ব্যাপারে ঝগড়া, ঝগড়া থেকে একটি থাপ্পড় এবং সেই থাপ্পড় থেকে খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই গ্যারেজ থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে চালানো দুই সতীর্থের মাঝে এই ঘটনা ঘটে। মূলতঃ থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতেই বয়োবৃদ্ধ একজন রিকশাচালককে খুন করা হয়েছে। বন্দর থানা পুলিশ একটি লাশ উদ্ধারের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি উদঘাটন এবং খুনের অভিযোগে অপর রিকশাচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত রিকশাচালক মোহাম্মদ আরিফ ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খুনের শিকার হওয়া রিকশাচালক আলমগীর ফকিরের মোবাইল ফোন। আরিফের দেখিয়ে দেয়া স্থান থেকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রেঞ্জটিও উদ্ধার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নগরীর বন্দর থানার কাস্টমস মোড় থেকে ইসহাক ডিপোর মাঝামাঝি কাস্টমস ব্রিজের পশ্চিমে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। শরীরের মাথাসহ নানা স্থানে আঘাতে জর্জরিত লাশের পরিচয় উদ্ধারে পুলিশ চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে, লাশটি মোহাম্মদ আলমগীর ফকির নামের একজন রিকশা চালকের। কিন্তু তার মোবাইল এবং রিকশা না পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ এবং তার মোবাইল নম্বর নিয়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে। পুলিশ প্রথমে কাজটি ছিনতাইকারীদের বলে মনে করলেও ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখে তার রিকশায় আরিফ নামের অপর রিকশাচালক উঠছিল গভীর রাতে। পুলিশ গত শনিবার রাতে রিকশাচালক আরিফকে গ্রেপ্তার করে। আরিফকে গ্রেপ্তারের পরই হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনাটি বেরিয়ে আসে।
পুলিশ জানায়, রিকশাচালক মোহাম্মদ আলমগীর ফকির ( ৬৫) এবং মোহাম্মদ আরিফ (২৮) দুজনই বন্দর এলাকার একই গ্যারেজ থেকে রিকশা ভাড়া নিয়ে চালায়। দিন কয়েক আগে অবসরের সময় গ্যারেজে বসে তারা দুজন মোবাইল অ্যাপসে লুডু খেলে। খেলা নিয়ে তর্কাতর্কি এবং ঝগড়া হয় দুজনের মাঝে। এক পর্যায়ে বৃদ্ধ রিকশাচালক মোহাম্মদ আলমগীর ছেলের বয়সী মোহাম্মদ আরিফকে একটি থাপ্পড় দেয়। খেলা পণ্ড হলে দুজনই নিজেদের রিকশা নিয়ে চলে যায়।
কিন্তু এই থাপ্পড়ের ব্যাপার থেকে রিকশাচালক আলমগীর ফকিরকে খুন করার জেদ চাপে মোহাম্মদ আরিফের মাথায়। সে কৌশলে আলমগীর ফকিরের সাথে বাহ্যিকভাবে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নেয় বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। সে পুলিশকে জানিয়েছে, গত ২৯ মে রাতে নিজের কাছে রিকশা নেই এবং একটি জরুরি কাজে যেতে হবে বলে রাত আনুমানিক সোয়া ১টার দিকে নগরীর সল্টগোলা মোড় ক্রসিং থেকে আলমগীরের রিকশায় উঠে। এর আগে সে কাজ আছে বলে গ্যারেজ থেকে একটি রেঞ্জ নিজের কাছে রাখে। রিকশায় উঠার পর কিছুটা পশ্চিম দিকে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে মোহাম্মদ আরিফ পেছন থেকে ওই রেঞ্জ দিয়ে আলমগীরের মাথায় আঘাত করে। এর পর দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। কিন্তু বয়োবৃদ্ধ আলমগীর ফকির যুবক আরিফের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারে না। আরিফ রেঞ্জ দিয়ে তার মাথা এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর লাশ টেনেহিঁচড়ে সড়ক থেকে কিছুটা আড়ালে রেখে আলমগীর ফকিরের রিকশা ও মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে মোবাইলটি নিজের কাছে রেখে রিকশার যন্ত্রাংশ খুলে খুলশীর সর্দার বাহাদুরনগর এলাকায় একটি গ্যারেজে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় বলেও আরিফ পুলিশকে জানিয়েছে।
নিহত আলমগীর ফকিরের (৬৫) বাড়ি বরিশালে। তার স্ত্রী–সন্তানরা নগরীর বন্দর থানার সাঁচী চৌধুরীপাড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে আলমগীর ফকির ওই বাসায় থাকতেন না। তিনি রিকশা চালিয়ে ভাসমানভাবে থাকতেন বলে বন্দর থানা পুলিশ জানিয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত আরিফের (২৮) বাড়ি ভোলায়। সে নগরীর বন্দর থানার ধুপপুল এলাকায় বসবাস করে।
বন্দর থানার এসআই কিশোর মজুমদার বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা নিশ্চিত হই যে আরিফই ঘটনা ঘটিয়েছে। পরবর্তীতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে বৃদ্ধ রিকশাচালক আলমগীর ফকিরের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। সে ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। তার দেয়া তথ্যমতে আমরা ঘটনাস্থলের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রেঞ্জটি উদ্ধার করি।
খুনের ঘটনায় মোহাম্মদ আলমগীর ফকিরের পুত্র মিরাজ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলায় গতকাল আরিফকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আরিফ দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।