অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি ডাবল নিউক্লিয়াস ফ্যাক্ট

নিগার সুলতানা | সোমবার , ১২ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

নানান দেশের নানান ভাষা কিন্তু অনুভূতিতে আমরা সবাই এক। বিজ্ঞানের একাধিক বিস্ময়কর ব্যাপারের মধ্যে, আমার কাছে অন্যতম হলো একই শব্দের অর্থ পদার্থ বিজ্ঞানে একরকম আবার জীববিজ্ঞানে আরেকরকম। সে শব্দের অর্থের সাথে আকাশ পাতাল অমিল থাকে আবার গণিতে কিন্তু যদি একটু মনোযোগী হোন তাহলে দেখবেন তারা মৌলিক বিষয়তে প্রায় একই।

নিউক্লিয়াস! এই শব্দটি বললে প্রথমেই আপনারা কি কোনো গোলাকার বস্তুর কথা মনে হচ্ছে? নাকি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার কথা ভাবছেন? অথবা সাইটোপ্লাজমে ভাসমান কিছু?

পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় নিউক্লিয়াস বলতে দুটি কণার মিশ্রণকে বোঝায়। রসায়নেও তেমন ধারণা দেয় কিন্তু জীববিজ্ঞানের ভাষাতে প্রথম রবার্ট ব্রাউন কোষে নিউক্লিয়াস দেখতে পান। সবার নিশ্চিত মনে আছে সে আদর্শ প্রাণী কোষ আঁকার কথা? কিন্তু যখন প্রশ্ন আসে মহাজাগতের গ্যালাক্সি নিয়ে তখন আমরা কোন সংজ্ঞাকে ধরে নিই? নিশ্চিত পদার্থবিজ্ঞানের কথা মাথায় আসছে। আদতে আমরা পদার্থবিজ্ঞান আর জীববিজ্ঞানকে আলাদা করে ফেলেছি। কিন্তু গ্যালাক্সির নিউক্লিয়াস নিয়ে প্রশ্ন আসলে আমাদের সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য জানা জরুরি।

আপনি কি জানেন আমাদের খুব নিকটবর্তী একটি গ্যালাক্সির নাম অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। অ্যান্ড্রোমিডা কি?

যদি আমাদের কাছের কোনো গ্যালাক্সিতে ভ্রমণ করার সুযোগ হতো তাহলে আমরা আমাদের এই প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে যেতাম যা আমাদের গ্রহ থেকে ২.৫৪ আলোকবর্ষ দূরে। এ গ্যালাক্সির আকার অনেকটা স্পাইরাল। এর বয়স ৪.৫ বিলিয়ন বছর। আমাদের যেমন ভালো নামের পাশে আদরের নাম থাকে তেমন অ্যান্ড্রোমিডাকে আমরা মেসিয়ার ৩১ অথবা এম ৩১ নামে চিনে থাকি যা ফ্রেঞ্চ জ্যোতির্বিদ চার্লস মেসিয়ারের নামে রাখা হয়। এই গ্যালাক্সি আমাদের গ্যালাক্সি থেকেও অনেক বড়। অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি নিয়ে নানা তথ্য জানার আগ্রহ থাকলেও এই গ্যালাক্সির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফ্যাক্ট তার ডাবল নিউক্লিয়াস যা আমাদের গ্যালাক্সি থেকে অ্যান্ড্রোমিডাকে একদম আলাদা করে তুলে ধরেছে।

শুনতে মনে হতে পারে এটি একটি ভুয়া তথ্য কেননা দুইটা নিউক্লিয়াস থাকা অসম্ভব মনে হয় আমাদের কাছে। কিন্তু এটি ঠিক দুটি নিউক্লিয়াসের একত্রিকরণ না তবে পাঁচ বা নয় বিলিয়ন আগে দুইটা একই রূপের গ্যালাক্সি একসাথে একত্রিত হয়ে পথ চলেছিলো যা পরবর্তীতে নিউক্লি অরবিট হিসেবে একে ওপরের চারপাশে ঘুরছে। এই সম্মিলিত কমপ্যাক্ট স্টার ক্লাস্টারগুলির মধ্যে একটিকে পি ১ এবং অন্যটিকে পি ২ হিসবে মনোনীত করা হয়েছে। তবে ধারণা করা হয় এতে একটি ব্ল্যাক হোল রয়েছে যা পরবর্তী কয়েক বিলিয়ন বছরের পর একত্রে মিশে যাবে।

ডাবল নিউক্লিয়াস নিয়ে নাসার মিশন কিছু তথ্য জানিয়েছে এবং তারা এ নিয়ে আরো বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন।

হাবল স্পেস টেলিস্কোপে এক নতুন ধরণের চিত্র দেখা যায় আন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি নিয়ে। যেখানে দেখা যায় ১০০ মিলিয়ন সোলার ভরের ব্ল্যাক হোলের সন্ধান মেলে আমাদের এই প্রতিবেশী গ্যালাক্সিতে। গবেষণায় দেখা যায় এম৩১ কে এক ধরণের নীল তারার কম্প্যাক্ট ক্লাস্টার চারপাশে আবরণ করে আছে যা মূলত বৃহত্তর ডাবল নিউক্লিয়াস।

ডাবল নিউক্লিয়াস আসলে ব্ল্যাক হোলের চারপাশে একটি উপবৃত্তকার বলয় যা পুরানো লাল রঙের নক্ষত্রের মিশ্রণ কিন্তু তা নীল তারার চেয়ে অনেকটা দূরে।

নাসারা যে চিত্রটি পেয়েছে তা এখন অব্দি সবচেয়ে সঠিক চিত্র বলে মানা হয়। সাথে আরেকটি তথ্য জানা যায় ইভেন্ট হরাইজন। ব্ল্যাক হোলের চারপাশের সবচেয়ে কাছের জায়গা যেখানে আলো বের হতে পারে। এটি দেখতে ছোট তবে এর অবস্থান নীল তারার কম্প্যাক্ট ক্লাস্টারের কেন্দ্রের ঠিক মাঝখানে। হাবল টেলিস্কোপে আমরা যে নীল কম্প্যাল্ট ক্লস্টার দেখি তা আমাদেরকে এক ডাবল নিউক্লিয়াসের ধারণা দেয়। বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে আরো বিস্তারিত গবেষণা করছেন। অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি নিয়ে এমন আরো মজার মজার তথ্যও পাওয়া যায়।

sultananigar6969@gmail.com

পূর্ববর্তী নিবন্ধল্যাংটা ও ল্যাংটি সমাচার
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর শোকরানা মিছিল