অহংকারী মানুষ একসময় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়

হেলাল চৌধুরী | বুধবার , ২ মার্চ, ২০২২ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

মানুষ কখন অহংকার করে? যখন তার প্রাপ্তি তার যোগ্যতাকে ছাড়িয়ে যায়। মানুষের ‘যোগ্যতার’ চেয়ে প্রাপ্তি বেশী ঘটলে, সে নিজেকে অহংকারের আবরণে জড়িয়ে ফেলে। অন্যদিকে যোগ্য ব্যক্তি যখন তার প্রাপ্যটুকু পায়, তখন সে বিনীত হয়। তার মধ্যে ‘কৃতজ্ঞতার মনোভাব’ ব্যাপারটা ডেভেলপ করে। কারণ, যোগ্য ব্যক্তিরা বিনয়ী হয়। তারা কখনো অহংকার করেনা।
কোথায় যেন পড়েছিলাম.. ‘বাঁশ যত লম্বা হয়, তার মাথা ততই নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে। বৃক্ষ যত ফলবতী হয়, তার শাখাগুলো ততই মাটির দিকে নুয়ে পড়ে। যে নদী গভীর বেশী, তার বয়ে চলার শব্দ কম। আর ছোট পাত্র খুব সহজেই উত্তপ্ত হয়’।প্রকৃতি আমাদের বিনয়ী হতে শেখায় নিরন্তর। আমরা প্রকৃতির এই শিক্ষা গ্রহণ করিনা। আমরা দশতলা দালানের উপর দাঁড়িয়ে গাছতলার মানুষগুলোকে বড় বেশী ছোট মনে করি। আমরা ভুলে যাই, দিন শেষে আমাকে ওই মাটিতেই নামতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি…. যারা উপরে উঠার জন্য কাউকে কাউকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করি। একবার উপরে উঠে গেলেই মনে করি সিঁড়িটার আর কি দরকার। একসময় সিঁড়িটাকে লাথি মেরে ফেলে দিই। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে যখন উপর থেকে নিচে নামার দরকার হয়, তখন লাথি মেরে ফেলে দেয়া সিঁড়িটা আর খুঁজে পাওয়া যায়না। মজার ব্যাপার হচ্ছে-উপর থেকে নিচে নামতে যদি সিঁড়ি পাওয়া না যায়। তখন পতন অনিবার্য। কেউ কেউ এই পতনকে অধঃপতনও বলে। আর অধঃপতনের জন্য কোনো সিঁড়ির দরকার হয় না। এবং এই পতনের শব্দ হয় বিকট। আসলে অহংকার ব্যাপারটাই হলো যাষ্ট একটা ‘ভ্রম’। অ্যা হাই-লেভেল হাইপোথেটিকাল ইলিউশান। কেউ কেউ এই ইলিউশানেই কাটিয়ে দেয় পুরোটা জীবন। ফলাফল কিন্তু শূন্য।
অহংকার এমন একটা জিনিস যা কখনওই কিছু প্রডিউস করেনা। শুধুই ডেস্ট্রয় করে। জীবনের অর্জনগুলোকে মুহূর্তেই নাই করে দেয়। একটু একটু করে দূরে সরিয়ে দেয় কাছের মানুষগুলোকে। আর বিচ্ছিন্ন করে দেয় ভালবাসার সবকটি যোগসূত্র। অহংকারী মানুষ বড়ই নিঃসঙ্গ আর জনবিচ্ছিন্ন। ওরা কাছের মানুষগুলো থেকে দূরে। ওরা পৃথিবীর রং-রূপ থেকে দূরে। ওরা ভালবাসা থেকে দূরে। ওরা ভালোবাসার মানুষগুলো থেকেও দূরে। এমনকি ওরা স্রষ্টা থেকে ও দূরে। আমার বড় বেশী মায়া হয়, করুণা হয় ইলিউশান এফেক্টেড এই অহংকারী মানুষগুলোর জন্য। সৃষ্টিকর্তা তাদের সুবুদ্ধি দান করুন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনয়া বাজার বিশ্বরোড মোড়ে গোল চত্বর চাই
পরবর্তী নিবন্ধআমার আমি