মাত্র ক’দিন হলো বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। যদিও সে ম্যাচে খেলেননি সাকিব। বিশ্বকাপের রাউন্ড রবিন লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হারলেও কিছুটা হলেও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। কিন্তু ফুটবল বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়ার সামনে দাঁড়াতেই পারলনা বাংলাদেশ। ৭–০ গোলের বিশাল পরাজয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে জামাল ভুইয়ারা। অথচ ম্যাচের আগের দিন দলের কোচ কারবেরা বলেছিলেন তারা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের উন্নতি করতে চান। আর অধিনায়ক জামাল ভুইয়া বলেছিলেন তারা ভাল খেলতে চান।
কিন্তু কোচ আর অধিনায়ক কারোই মনোবাসনা পূরণ হয়নি। অনুমিতভাবেই শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবলের প্রদর্শনী করতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। আর তাতে দ্রুতই চিড় ধরে বাংলাদেশের রক্ষণে। লড়াই করা তো দূরের কথা, চতুর্থ মিনিটে পিছিয়ে পড়ার পর খেই হারিয়ে হজম করল একের পর এক গোল। বড় হার দিয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গ্রুপ পর্ব শুরু করল হাভিয়ের কাবরেরার দল। মেলবোর্নের রেক্টাঙ্গুলার স্টেডিয়ামে এশিয়া অঞ্চলের বাছাইয়ের ‘আই’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্রথম অর্ধেই চার গোল হজম করা বাংলাদেশ হেরেছে ৭–০ ব্যবধান। হ্যাটট্রিক উপহার দেন জেমি ম্যাকলারেন। জোড়া গোল করেন মিচেল ডিউক। বাকি দুই গোলদাতা হ্যারি সুটার ও ব্র্যান্ডন বোরেলো।
দুটি পরিবর্তন এনে একাদশ সাজিয়েছিলেন বাংলাদেশ কোচ। কিন্তু সে সব কোন কাজে আসেনি। শারীরিক গড়ন ও উচ্চতায় অস্ট্রেলিয়ানরা এগিয়ে থাকায় সেট–পিস নিয়ে ভীতি ছিল বাংলাদেশের। সেই সেট–পিস থেকেই চতুর্থ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে দল। গুডউইনের ফ্রি কিকে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন সাড়ে ছয় ফুট লম্বা ডিফেন্ডার সুটার। বক্সে র বাইরে মোহাম্মদ হৃদয় ফাউল করলে ফ্রি কিক পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ২০ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে অস্ট্রেলিয়া। মুরাদ ও কাজী তারিক রায়হান পারেননি রক্ষণ জমাট রাখতে। গোলমুখে কনর মেটক্যাফের বাড়ানো আড়াআড়ি ক্রস ঝাঁপিয়েও নাগাল পাননি মিতুল মার্মা। আলতো টোকায় বাকি কাজ সারেন বোরেলো। ২৬ মিনিটে বোরেলোর হেড ফিরিয়ে ব্যবধান বাড়তে দেননি গোলরক্ষক মিতুল মার্মা। তবে ৩৬ মিনিটে আবারও পরাস্ত মিতুল। ডান দিক থেকে মেটক্যাফের একটু উঁচু ক্রসে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন ডিউক। চার মিনিট পর স্কোরলাইন ৪–০ হয় এই ফরোয়ার্ডের গোলেই। বোরেলোর শট পোস্টে লেগে প্রতিহত হওয়ার পর ফিরতি সুযোগ কাজে লাগান ডিউক।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া। বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠা জর্ডান বসের আড়াআড়ি ক্রস ঝাঁপিয়েও নাগাল পাননি মিতুল। ফাঁকা পোস্টে অনায়াসে বল জালে জড়িয়ে দেন ডিউকের বদলি নামা ম্যাকলারেন। এরপর তিনটি পরিবর্তন এনেও কোন কাজে লাগাতে পারেননি বাংলাদেশ কোচ। ৭০ মিনিটের গোলে বড় জয়ের পথে ছুটতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। ম্যাসিমো লুঙ্গোর কোনাকুনি শট মিতুল ফেরালেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি। ফিরতি সুযোগ কাজে লাগান ম্যাকলারেন। ৮৪ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ম্যাকলারেন। ডান দিক থেকে মিলারের আড়াআড়ি ক্রসে বল শাকিলের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায়। নিখুঁত প্লেসিং শটে জাল খুঁজে নেন এই ফরোয়ার্ড। এরপর এইডেন ও’নিলকে বক্সে শাকিল ফাউল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ম্যাসিমোর দুর্বল স্পট কিক নিজের ডান দিকে ঝাঁপিয়ে আটকে দ্বিতীয় দফার চেষ্টায় গ্লাভসে জমান মিতুল।
পুরো ম্যাচে বাংলাদেশের এক চিলতে ঝলক এটুকুই। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা তিন ম্যাচ হারল বাংলাদেশ। ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে দুই লেগে ৯ গোল হজম করে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের বাছাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার পার্থে ৫–০ এবং ঢাকায় ৪–০ ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ।