চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯৮০ সালে চালু হয় শাটল ট্রেন। দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এটি, যেখানে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন ট্রেন যোগে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীদের জন্যও সেই সুযোগ তৈরির কথা ভেবে ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পরিকল্পনায় ছিল চট্টগ্রাম থেকে চুয়েট হয়ে ট্রেন যাবে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাইয়ে। এই রেলপথের মূল বিষয় ছিল চুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পার্বত্য অঞ্চলে রেল সুবিধা পৌঁছে দেয়া। পরিকল্পনায় ছিল চুয়েটে রেল স্টেশন, যেখানে শিক্ষার্থীদের ট্রেন থামবে। এছাড়া দুর্গম পাহাড়ি এলাকার উৎপাদিত পণ্য সহজে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে আসা এবং পর্যটকদের যাতায়াতকে সহজ করতে চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল।
৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকার প্রকল্প : নগরের চান্দগাঁও জানালীহাট থেকে চুয়েট হয়ে কাপ্তাই পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা। প্রতি কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় ধরা ১০৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৭ হাজার ১৪১ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহের প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, মহাপরিকল্পনায় (২০১৬–২০৪৫) কাপ্তাই পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পের সমীক্ষা কাজ শেষ করা হয়েছিল ২০১৯ সালে। ডুয়েলগেজ রেললাইনের একটি নকশাও প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। কিন্তু সমীক্ষা শেষ হওয়ার পর অর্থায়ন জটিলতায় প্রকল্পটি আটকে যায়। শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ কতটুকু তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না বলে জানান এই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। গতকাল তিনি আজাদীকে বলেন, প্রকল্পটি যখন গ্রহণ করা হয়েছিল–তখন যে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে–এখন যদি প্রকল্প বাস্তায়ন করা হয়–প্রকল্প ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তাছাড়া এখন এত ব্যয় বহুল প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
চট্টগ্রাম থেকে চুয়েট হয়ে কাপ্তাই পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার রেলপথের জন্য ৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকার মধ্যে ৭ হাজার ১৪১ কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণ সংস্থানের জন্য রেলওয়ের অনুরোধে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) মতো একাধিক বৈশ্বিক ঋণদাতার সঙ্গে আলোচনাও হয়েছিল। কিন্তু কোনো সুফল আসেনি। মূলত অর্থায়ন জটিলতায় প্রকল্পটি আটকে রয়েছে।