অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় অগ্রাধিকার দিতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ৮ আগস্ট, ২০২৪ at ৭:০১ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের সামনে এখন অনেক কাজ রয়েছে বলে মনে করেন জাতিসংঘের মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিকাশ ও সুরক্ষাবিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান। তিনি বলেছেন, বিদায়ী সরকার এই দেশকে হতাশার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। দেশকে গড়ে তুলতে অনেক পরিশ্রম করতে হবে।

আইরিন খান বলেন, সেনাবাহিনী বাংলাদেশে ‘আরও রক্তপাত’ ঠেকিয়েছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর তাদের সামনে ‘খুব কঠিন’ দায়িত্ব রয়েছে। আইরিন খান বলেন, ‘দেশটি এখন আর টেকসই উন্নয়নের দৃষ্টান্ত নয়। বিদায়ী সরকার এই দেশকে হতাশার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। দেশকে গড়ে তুলতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে’।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ। বলা যায়, অর্থনীতি এখন বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে। এতে ঝুঁকি বাড়ছে। এক ধরনের অনিশ্চয়তা জেঁকে বসেছে সবার মধ্যে। সাধারণ চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, দিনমজুর থেকে শুরু করে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ, অর্থনীতিবিদ সবাই এক ধরনের উদ্বেগউৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছেন এখন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে মূল্যস্ফীতি। অন্যান্য খাতের পাশাপাশি আর্থিক খাতের দুর্বলতাও অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তবে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার, যেখানে কার্যকর মুদ্রানীতি ও বাজারভিত্তিক ডলারের মূল্য নির্ধারণ অন্যতম পদক্ষেপ হতে পারে। আর রাজস্ব বৃদ্ধিও সমস্যার উত্তরণে বড় ভূমিকা রাখবে। জ্বালানির উচ্চমূল্য, দুর্বল মুদ্রানীতি, টাকার অবমূল্যায়ন, পণ্যের সরবরাহ সংকট ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে প্রধান কাজ হবে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। পণ্যে যেমন বৈচিত্র্য আনতে হবে, তেমনি রফতানি গন্তব্যেও আনতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মানবসম্পদ উন্নয়নে আমাদের গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা যে ভোকেশনাল ও কারিগরি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু রেখেছি সেগুলো আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, এগুলো প্রাথমিক ধাপের স্কিল যা এখন মেশিন লার্নিং পদ্ধতির দখলে চলে যাচ্ছে। এ প্রাথমিক স্কিল দিয়ে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগে চলা সম্ভব নয় এবং এই স্কিল দিয়ে তৈরি জনশক্তির বহির্বিশ্বে চাহিদা তো থাকবেই না এমনকি অদূর ভবিষ্যতে অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানও হ্রাস পাবে।

বলা বাহুল্য, জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পণ্য আমদানিরপ্তানি ব্যাহত হতে শুরু করে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে না আসতেই আবার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। আসলে এ রকম পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে নেওয়া সম্ভব ছিল না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেছেন, একটি দেশের উন্নয়ননীতির মৌলিক নীতিগুলো সংশ্লিষ্ট দেশটির জনগণের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট জনআকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত হয়। সেদিক থেকে বলা যায়, কোনো একটি দেশের মানুষ যে ধরনের সমাজে বাস করতে চায়, তাকে বোঝা ও মেনে নেওয়াই হলো উচ্চাকাঙ্ক্ষী উন্নয়ননীতি। এই সামাজিক রূপান্তর অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতিতে গভীরভাবে প্রোথিত। তাই এসপিরেশন বা আকাঙ্ক্ষা ও ইম্পোজিশন বা আরোপণপরস্পরবিরোধী এই দুটি সত্তার মধ্যে আজন্মের দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে। অর্থনীতি ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সব সূচকের অবনতিই তার সাক্ষ্য। দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতির সঙ্গে প্রকৃত মজুরির ফারাক বেড়েই চলছে। দাম বাড়ার কশাঘাতে দারিদ্র্যসীমার নিচের পরিবার শুধু নয়, নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষও পর্যুদস্ত।

বিশ্লেষকরা বলেন, কয়েক মাস আগে থেকে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, তা অব্যাহত থাকলে নতুন বিনিয়োগ হবে না। বরং যেসব উৎপাদনমুখী কারখানা আছে, সেগুলো চালিয়ে নেওয়া বা সচল রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আবার রপ্তানি খাত বারবার ব্যাহত হলে বিদেশিদের আস্থা নষ্ট হবে। এতে রপ্তানি আদেশ অন্য দেশে চলে যেতে পারে। এসবের পাশাপাশি আরও কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আইএমএফএর শর্তের বাস্তবায়ন এবং এর প্রভাব মোকাবিলা। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে আস্থার সঞ্চার করা, রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক অবস্থায় আনা। এছাড়া টাকা পাচার রোধ এবং হুন্ডির প্রভাব কমানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে রয়েছে। মোট কথা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণ, আর্থিক খাতের দুরবস্থা, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগএসব বিষফোড়া কাটার ব্যবস্থা করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো খুলে দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে