নারী শ্রমবাজারের প্রভাব নিয়ে মানুষের বোঝাপড়ার উন্নয়ন ঘটানোর স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ক্লডিয়া গোল্ডিন। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস গতকাল সোমবার মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে। তৃতীয় নারী হিসেবে তিনি অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন।
অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণার পর্ব শেষ হল। পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে এক কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার পাবেন গোল্ডিন। খবর বিডিনিউজের।
২০২২ সালে অর্থনীতিতে ব্যাংকের ভূমিকা কতটা, অর্থনৈতিক সঙ্কট এড়াতে ব্যাংকের সুরক্ষা কতটা জরুরি, সেই আন্তঃসম্পর্কে আলো ফেলে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন অর্থনীতিবিদ বেন এস বেরনানকে, ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড ও ফিলিপ এইচ ডিবভিগ। নারী হিসেবে গোল্ডিনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের এলিনর অস্ট্রম ২০০৯ সালে এবং ফ্রান্সের এস্তের দুফ্লো ২০১৯ অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছিলেন।
চলতি বছর অর্থনীতিতে পুরস্কার ঘোষণা করে নোবেল কমিটি বলছে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লডিয়া গোল্ডিন নারীদের উপার্জন এবং এ শতাব্দীর শ্রমবাজারে তাদের অংশগ্রহণের ফলাফল বা প্রভাব নিয়ে প্রথমবারের মতো বিশদ ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। শ্রমবাজারে নারীর অবদান নিয়ে তার গবেষণায় নতুন দিক নির্দেশনা, পরিবর্তনের চিত্র ও বিদ্যমান লিঙ্গ পার্থক্যের মূল উৎস বা কারণগুলো উঠে এসেছে। বৈশ্বিক শ্রমবাজারে এখন পর্যন্ত নারীদের অবদানের তথ্য সেভাবে উঠে আসে না। পুরুষদের চেয়ে কর্মক্ষেত্রে মজুরিও কম পান তারা। ৭৭ বছর বয়সী গোল্ডিন এ বিষয়ে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা করেছেন; দেখিয়েছেন লিঙ্গ পার্থক্য কীভাবে আয় ও কাজের ক্ষেত্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে। এর কারণও তুলে ধরেছেন তিনি।
নোবেল কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজারে নারীদের অবদান সেভাবে উঠে আসে না। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে তারা পুরুষদের চেয়ে আয়ও করে কম। বিষয়টি নিয়ে গোল্ডিন যুক্তরাষ্ট্রে গত ২০০ বছরের ডেটা সংগ্রহ করে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান চালিয়েছেন। আর্কাইভগুলো তন্ন তন্ন করে ঘেঁটে দেখেছেন। এর মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন উপার্জনের ক্ষেত্রে সময়ের পরিক্রমায় কীভাবে ও কেন লিঙ্গ বৈষম্য ও পার্থক্য গড়ে উঠেছে নারী–পুরুষের মধ্যে। নারী–পুরুষের কর্মসংস্থানের হারও কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে সেটিই খুঁজে দেখেছেন এই অধ্যাপক। গোল্ডিন দেখিয়েছেন, শতাব্দী ধরে শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণের প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী ছিল না। বরং এটি ছিল উল্টো প্রকৃতির। ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কৃষি থেকে শিল্প সমাজে রূপান্তরের সময়ে কর্মক্ষেত্রে বিবাহিত নারীদের অংশগ্রহণ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু তারপর বিংশ শতাব্দীর শুরুতে সেবা খাতের বৃদ্ধির সঙ্গে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। গোল্ডিন এ প্যাটার্নকে কাঠামোগত পরিবর্তন এবং ঘর ও পরিবারে নারীর দায়িত্ব সম্পর্কিত সামাজিক রীতির বিকাশের ফলাফল হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। বিংশ শতাব্দীতে নারীদের শিক্ষার হার ক্রমাগত বেড়েছে এবং উচ্চ আয়ের বেশিরভাগ দেশগুলোতে এখন পুরুষদের তুলনায় নারী শিক্ষার যথেষ্ট বেশি। এই ক্ষেত্রে গোল্ডিন দেখিয়েছেন, ক্যারিয়ার গড়ার জন্য নারীদের গর্ভনিরোধক পিল তাদের নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ক্লডিয়া গোল্ডিনের জন্ম নিউ ইয়র্কে ১৯৪৬ সালে। শিকাগো ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৭২ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের আনুষ্ঠানিক নাম ‘সেভেরিজেস রিঙব্যাংক প্রাইজ’, যেটির অর্থায়ন করে সুইডেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।